Internet Addiction: ইন্টারনেট অ্যাডিকশন (Internet Addiction) বা আসক্তি এই কোভিড পরিস্থিতিতে অত্যন্ত চর্চিত এবং বিতর্কিত একটি বিষয়। তার কারণ হল এই দু'বছরে আমরা কোভিডের প্রভাব থেকে সুরক্ষিত রাখতে সামাজিক এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখেছি বার বার। এই অবস্থায় একে অপরের থেকে দূরে রাখার এবং বিনোদনের একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়িয়েছে হাতের ফোন বা ইন্টারনেট।
আরও পড়ুন: পাঠভবন-শিক্ষাসত্রে পরীক্ষা অফলাইনে, বিশ্বভারতীর সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ অভিভাবকদের একাংশ
তাছাড়া পড়াশোনা বা চাকরি করছেন এমন মানুষজন, স্কুল-কলেজের পড়ুয়া- সবার এখন কাজ-লেখাপড়ার মাধ্যম ইন্টারনেট। তার ব্যবহার কতটা প্রয়োজনীয়, কতটা মাত্রারিক্ত, সেটা আলোচনা সাপেক্ষ। ইন্টারনেট আসক্তি নানা ধরনের হতে পারে। কারা ইন্টারনেটে আসক্ত (Internet Addiction), কী কী সমস্য়া হতে পারে এবং তা থেকে বের হওয়ার উপায় কী? সে ব্যাপারে বিস্তারিত জানালেন মনোবিদ (ক্লিনিক্য়াল সাইকোলজিস্ট) অন্বেষা ভট্টাচার্য।
আসক্তির রকমফের : নেট কম্পালসন
এটা হল ইন্টারনেট মাধ্যমে জুয়া খেলা, অনলাইন গ্যাম্বলিংয়ে ঝোঁক বেড়ে যাওয়া। ট্রেডিং, নিলামির মতো কম্পালসিভ অনলাইন শপিংয়েও লিপ্ত হন। শেষ দু'বছরে বহু বার এ ব্য়াপারটা উঠে এসেছে। তাৎক্ষনিক ভাবে প্লেজার বা আনন্দ দেয় অনলাইন শপিং।
বয়ঃসন্ধিদের মধ্যে গেমিং অ্য়াডিকশন
দেখা যাচ্ছে, বয়ঃসন্ধিদের এই সময়ে এই প্রবণতা বেড়েছে। কারণ খেলাধুলো, ব্য়ায়াম, বন্ধুত্ব, সামাজিকতার অভাবে মেলামেশা কম হচ্ছে। তাই নেট-বিনোদনের মাধ্যমে একাকীত্বের সমাধান খুঁজেছে তারা। পাবজি, ব্লু হোয়েল গেমের কথা শুনেছি। এগুলোর বৈশিষ্ট্য হল আক্রোশ। তা সে অন্যের প্রতি হোক বা নিজের প্রতি।
সাইবার সেক্স অ্যাডিকশন
তিনি জানান, এই টার্মটি শুনলে বোঝা যাবে সেই মানুষদের, যাঁরা মাত্রারিক্ত পর্নোগ্রাফিক, অ্যাডাল্ট চ্যাট রুম এবং শারীরিক সম্পর্ক বা যৌন আলাপে লিপ্ত হন।
সাইবার বা অনলাইন রিলেশন
এটা বেশ ইন্টারেস্টিং। এই প্রবণতা এখন বেশি করে দেখতে পাচ্ছি। এ জন্য ক্যাটফিশ বা ক্যাটফিশ নামে একটা টার্ম এসেছে। সামাজিকতার অভাবে, বাস্তব জীবনের অপূর্ণতা দূর করতে, একাকীত্ব দূর করতে এই কাজ করা হয়। পরে তা আসক্তিকে পরিণত হতে পারে। নিজেদের বাস্তবিক পরিচয় গোপন রেখে মিথ্যে পরিচয় তৈরি করে। আর বাস্তবের দেখা করতে বললেই সেই আলাপ শেষ করে অন্য একটি সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এর ফলে অন্য পক্ষের জন্য প্রবল মানসিক আঘাত তৈরি করতে পারে।
আরও পড়ুন: প্রবীণ-মহিলারা বেশি সাইবার অপরাধের শিকার, বলছে NCRB-র তথ্য
কী করে বুঝবেন আপনি আসক্ত?
এ ব্য়াপারে অন্বেষা ভট্টাচার্য জানান, যদি আপনি ইন্টারনেটে বেশির ভাগ সময় কাটান বা অন্য সময়ও তাই নিয়ে ভাবেন। তা কোনও ভাবেই কমাতে পারছেন না, তা হলে আপনি আসক্ত হয়ে পড়েছেন। ইন্টারনেট ব্যবহার কম করার চেষ্টা করলে মেজাজ বিগড়ে যায় বা মন খিটখিটে হয়ে যায়। কাজ লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটে। এর পাশাপাশি আপনি যে ইন্টারনেটের প্রতি এতটা সময় দেন, তা পরিবার-পরিজনের থেকে দূরে রাখেন। এটা যেন বাস্তব জীবনের সমস্যা-উদ্বেগ বা উৎকন্ঠা থেকে মুক্তি পাওয়ার একটি উপায় তাঁদের কাছে। এগুলো তারই উপসর্গ হতে পারে।
প্রভাব
তিনি জানান, এর ফলে শারীরে ব্যথা হতে পারে। এর পাশাপাশি নিউরোলজিক্যাল সমস্যা যেমন কারপল টানেল সিনড্রোম, ইনসোমনিয়া, দৃষ্টিশক্তির ওপর প্রভাব, শরীরে মেদ বেড়ে যাওয়া বা কমে যেতে পারে। আবেগ ভিত্তিক মানসিক সমস্যা হতে পারে, অবসাদ, অসততা, উদ্বেগ, উৎকন্ঠা, অক্রোশ এবং আবেগ নিয়ন্ত্রণের সমস্যাও হতে পারে। দৈনন্দিন জীবনে প্ল্যানিং সমস্যা দেখা দিতে পারে। বহু গবেষণায় তা প্রমাণিত হয়েছে।
শিশু এবং বয়ঃসন্ধিদের ওপর প্রভাব আরও বেশি। যখন নেট থেকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করছি, তখন ফোনের উদ্দীপক বদলাচ্ছে, আমাদেরও। এর ফলে ইনফর্মেশন ওভারলোড অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। আর তাই যে কোনও জিনিসের প্রতি, যে কোনও উদ্দীপকের প্রতি মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা কমে আসছে। টাইম ম্যানেজমেন্ট, প্ল্যানিং, মনোযোগ, অর্গানাইজেশন, তৈরি করতে না পারার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বাঁচার উপায়
তিনি জানান, ইন্টারনেট আসক্তি থেকে সহজ উপায় হল ইন্টারনেট বা ডিজিটাল ডিটক্স। কাজ, পড়াশোনা ছাড়া কতক্ষণ ইন্টারনেট থেকে দূরে থাকেন, সেটা ঠিক করুন। ধীরে ধীরে ইন্টারনেটের ব্য়বহার কমান। ইন্টারনেট ডিভাইস মানে মোবাইল, ল্য়াপটপ থেকে নিজেকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন একেবারে। সেই সময় ভাল লাগার কাজের সঙ্গে যুক্ত হন। তা সে বই পড়া হতে পারে বা গান শোনা, গাছ লাগানো, গাছের পরিচর্যা। বাস্তবের সংস্পর্শে আসুন। তা হলে আসক্তি থেকে নিজেকে আস্তে আস্তে সরিয়ে আনতে পারা যাবে।