Internet Addiction in Children: স্মার্টফোন, ল্যাপটপ এবং অন্যান্য ডিভাইসের ব্যাপক ব্যবহার, ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। ইন্টারনেট মানুষের জন্য অপরিসীম সুবিধা নিয়ে আসার পাশাপাশি একাধিক নতুন সমস্যাও তৈরি করেছে। ডিজিটাল বিপ্লব একদিকে যেমন বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বসবাসকারী মানুষের মধ্যে দূরত্ব কমিয়েছে, অন্যদিকে এটি তাদের প্রকৃত সামাজিক সম্পর্কের দূরত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া ইন্টারনেটের অতিরিক্ত ব্যবহার শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
একাধিক মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ গত কয়েক বছর ধরে শিশুদের মধ্যে ইন্টারনেট আসক্তির পরিণতির ওপর জোর দিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছেন। চলতি বছরে দিল্লি, কলকাতা সহ দেশের একধিক শহরে এই বিষয়ে সচেতনতামূলক একাধিক ইভেন্টের আয়োজন করা হয়েছিল, যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রখ্যাত মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ এবং মনোবিজ্ঞানী অত্যধিক ইন্টারনেট ব্যবহারের নেতিবাচক প্রভাব সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করার প্রচেষ্টা চালিয়েছেন।
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা তাঁদের অভিজ্ঞতা থেকে জানিয়েছেন যে, ইন্টারনেট আসক্তি শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের একাগ্রতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে তাদের পঠনপাছন, কমছে তাদের কর্মক্ষমতা। এর সঙ্গে ইন্টারনেট আসক্তির ফলে শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের ঘুমের ব্যাঘাত হতে পারে, তাদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়তে পারে, এমনকি তাদের বিষণ্নতাও গ্রাস করতে পারে। বিশেষ পরিস্থিতিতে বন্ধুত্ব বা অন্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করার ক্ষেত্রেও তারা অসুবিধার সম্মুখীন হতে পারে। এছাড়াও, তাদের আবেগ নিয়ন্ত্রণে সমস্যা হতে পারে।
ইন্টারনেট আসক্তি ও গুরুতর মানসিক সমস্যার ঝুঁকি
এ প্রসঙ্গে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ (চাইল্ড স্পেশালিস্ট) ডাঃ শমীক হাজরা (Dr Samik Hazra) বলেন, “ইন্টারনেটে আসক্তি ক্রমশই বর্তমান প্রজন্মের কিশোর-কিশোরীদের গ্রাস করছে। ইন্টারনেটের বহু ভালো গুণ আছে। তথ্যের ভান্ডার এবং পারস্পরিক আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে ইন্টারনেট তথা সোশ্যাল মিডিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু ক্রমান্বয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার বয়সন্ধিকালীন অনুসন্ধিৎসু অথচ স্বতঃপরিবর্তনশীল কিশোরমননে রেখে যেতে পারে দীর্ঘস্থায়ী কুপ্রভাব। একদিকে যেমন রয়েছে অধিক ব্যবহার এবং অপব্যবহারের ফলে মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি তথা মনসংযোগ এবং মস্তিষ্কের কাজে ঘাটতি, অন্যদিকে ইন্টারনেটের সূত্র ধরে আসে অপরাধ জগতের হাতছানি তথা সাইবার অপরাধের আবর্তে পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি। বিশেষ করে অপরিণতমনস্ক কিশোর কিশোরীরা ভীষণ রকম ভাবে ঝুঁকির মুখে দাঁড়িয়ে।”
ইন্টারনেট আসক্তি থেকে মুক্তির উপায়
ডাঃ হাজরা বলেন, “ইন্টারনেটের অধিক ব্যবহারের থেকে যেমন বয়ঃসন্ধিকালীন কিশোর কিশোরীকে নিবৃত্ত করতে হবে তথা শুধুমাত্র দরকারি ওয়েবসাইটেই যেন তারা বিচরণ করে সেদিকে নজর রাখতে হবে। অন্যদিকে সাইবার অপরাধ সংক্রান্ত প্রাথমিক পাঠটা তাদের দিয়ে রাখতে হবে। যাতে তারা নিজেদের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সচেতন হতে পারে। বাবা মায়েরা যদি নিজেদের মোবাইলের জগত ছেড়ে বয়সন্ধিকালীন কিশোর কিশোরীকে সময় দেন কিছুটা এবং যদি বাস্তব জীবনের বন্ধুত্ব, খেলাধুলার প্রতি আকর্ষণ গড়ে তোলা যায় তাহলে ইন্টারনেট আসক্তি কমানোর ক্ষেত্রে তা একটা ইতিবাচক ভূমিকা নেবে।”