সনাতম ধর্মের বিয়েতে বিবিধ আচার-অনুষ্ঠান করা হয়। যা বিয়ের কয়েকদিন আগে শুরু হয়। তা চলতে থাকে বিয়ের পর বেশ কয়েক দিন পর্যন্ত। আশীর্বাদি থেকে জোড়ে যাওয়া পর্যন্ত- নানা আচার। এর সঙ্গে রয়েছে গায়ে হলুদও। বর এবং কনে মিলে জীবনের বিশেষ মুহূর্ত নানা আচারের মাধ্যমে পালন করে। সিঁদুর দান এই আচারগুলির মধ্যে অন্যতম। হিন্দু বিবাহ রীতিতে, বধূর কপালে সিঁদুর দান না করলে বিয়ে অসম্পূর্ণ থেকে যায়। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এ প্রথা চলে আসছে। শাস্ত্র অনুসারে,সিঁদুর লাগানোর প্রথাটি রামায়ণের যুগের। কথিত আছে, রামের কথা মনে করে সিঁথিতে সিঁদুর দিতেন সীতা। পার্বতীও শিবের জন্য সিঁদুর লাগাতেন। অনেকে আবার বলেন, মধ্যযুগে শুরু হয়েছিল সিঁদুরদানের প্রথা। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে সিঁদুরদানের উল্লেখ রয়েছে। বিশ্বাস করা হয়, সিঁদুর লাগালে দাম্পত্য জীবনে সুখ থাকে। সাত জন্ম একসঙ্গে থাকার প্রতিজ্ঞা করেন। জেনে নিন কেন সিঁদুর দান করা জরুরি। এর সঙ্গে সিঁদুর দানের সময় কোন মন্ত্র জপ করা হয়-
সিঁদুর দানের আচার কখন?
বিবাহের সময়, বর কনের সিঁথিতে সিঁদুর দান করে। প্রথমে সাত পাক ঘোরেন বর-বধূ। আগুনকে সাক্ষী রেখে তাঁরা সারাজীবন একসঙ্গে থাকার প্রতিজ্ঞা করেন। সেই সঙ্গে সাতটি প্রতিশ্রুতি পরস্পরকে দেন তাঁরা। এর পর রয়েছে সপ্তপদী। এই আচারে বধূ বরের ডান পাশে বসে থাকেন। অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর মেয়েটি বাম পাশে বসে। এরপর কনের সিঁথিতে বর সিঁদুর দেন। বিয়ের পর থেকে মহিলারা সিঁথিতে সিঁদুর দেন। সিঁদুর সৌভাগ্যের প্রতীক বলে বিবেচিত হয়।
সিঁদুর দান কেন?
শাস্ত্র অনুসারে, সিঁদুর দান করার পরেই বিবাহ সম্পূর্ণ বলে বিবেচিত হয়। কারণ সিঁদুর সৌভাগ্যের প্রতীক। এর পাশাপাশি বধূর কপালে সিঁদুর ভরার কারণ হল শরীরে উপস্থিত চক্রগুলি। মানব শরীরে রয়েছে ৭টি চক্র। সেগুলি কপালের যে অংশে সিঁদুর ভরা থাকে তার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। সিঁথির পিছনের অংশে সূর্যের অবস্থান। সিঁদুর থাকলে সূর্যের তেজ প্রবল হয়। সেই সঙ্গে মেষ রাশি অবস্থান করে সিঁথিতে। যার অধিপতি মঙ্গল। এজন্য তা শুভ বলে মনে করা হয়।
সিঁদুর দানের সময় কী মন্ত্র বলা হয়?
'শিরোভূষণ সিঁদুরং ভূক্তুরায় বীব্ন্দনং সর্বরন্তকরং দিব্যানং সিঁদ্বুরং প্রতিগৃহ্যতাম'
হে ঈশ্বর আমার সংসার যেন সুখশান্তি ও অক্ষয় অমর হয়। আমার সংসারের সকলেই যেন সুখে শান্তিতে জীবন অতিবাহিত করতে পারে।
'ওঁ সুমঙ্গলিরিয়ং বধূরিামং সমেন পশ্যত, সৌভাগ্যমস্তৈ দত্বা যাথাস্তং বিপরেতন'
মন্ত্রের অর্থ, বিবাহে উপস্থিত সকলের মহিলা ও পুরুষকে সাক্ষী করে কন্যার সিঁথিতে সিঁদুর দিচ্ছি। আপনারা বধূর মঙ্গলকামনা করে তাঁকে সুখসমৃদ্ধি ও সৌভাগ্যের আশীর্বাদ প্রদান করুন। সিঁদুর দান করে আমি নিজের কর্তব্য পালন করছি। বিপরীত পরিস্থিতিতে এই সিঁদুর তোমায় রক্ষা করবে।