সামনেই গ্রীষ্মের ছুটি। এই সুযোগে সপরিবারে হাওয়াবদল করতে পারেন। গরম থেকে সাময়িক স্বস্তিও পাবেন। আর বন্ধুবান্ধব এবং পরিবারের সঙ্গে বেড়ানোর জন্য আপনি যদি ভাল গন্তব্যের সন্ধান করছেন তাহলে এই প্রতিবেদন কাজে লাগতে পারে। কোথায় যাবেন? কত টাকা খরচ? সঠিক রুট কী? সেখানে পর্যটকদের ঘোরার জন্য কোন জায়গাগুলো ভাল- সব প্রশ্নের উত্তর পাবেন। রইল ভারতের ১০টি সুন্দর পর্যটন গন্তব্যের হালহকিকত।
চিতকুল (হিমাচল প্রদেশ) - চিতকুল হিমাচল প্রদেশের কিন্নৌর জেলার একটি সুন্দর গ্রাম। এটি ইন্দো-তিব্বত সীমান্তের শেষ শহর। বসপা নদীর তীরে অবস্থিত চিতকুলে অবাধে ঘুরতে পারেন ভারতীয়রা।
খরচ - প্রায় ১৫,০০০ টাকা।
রুট- চিতকুলে গাড়ি, বাস, ট্রেন বা বিমানে যাওয়া যায়। চিতকুলের নিকটতম বিমানবন্দর ভুন্তর। নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন কালকা। এছাড়া গাড়ি চালিয়ে দিল্লি-চণ্ডীগড়-শিমলা-কারচম হয়ে চিতকুলে পৌঁছতে পারেন।
দেখার জায়গা- ভারতের শেষ গ্রাম। মাথি মন্দির, স্রোতস্বিনী নদী, হাইড্রো ফ্লোর মিল, বৌদ্ধ মন্দির, আপেল বাগান এবং চিতকুল ফোর্ট।
ভ্রমণের সেরা সময়- জুন।
ম্যাকলিওডগঞ্জ (হিমাচল প্রদেশ)- ম্যাকলিওডগঞ্জ হিমাচল প্রদেশের কাংড়া জেলার একটি ছোট জায়গা। এই স্থানটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬,৩৮১ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। তিব্বতি ধর্মগুরু দালাই লামা এখানেই থাকেন। সেজন্য এই স্থানটি পর্যটকদের জন্যও আকর্ষণীয়। ম্যাকলিওডগঞ্জে বৌদ্ধমঠ এবং নৈসর্গিক পরিবেশের জন্য আদর্শ ভ্রমণস্থল।
খরচ- প্রায় ১০ হাজার টাকা।
রুট- গাড়ি, বাস, ট্রেন অথবা বিমানে যেতে পারেন। নিকটবর্তী বিমানবন্দর গগ্গল। রেলস্টেশন অম্ব অন্দৌরা। এছাড়া গাড়ি নিয়ে দিল্লি-সোপিপত-পানিপত-করনাল-অম্বালা-রূপনগর-আনন্দপুর সাহিব আর নাঙ্গল হয়ে পৌঁছতে পারেন।
দেখার জায়গা- ত্রিউন্ড, ভাগসু জলপ্রপাত, ভগুনাথ মন্দির, নামগ্যাল মঠ, কাংড়া ফোর্ট।
সেরা সময়- মে-জুন।
আলমোড়া (উত্তরাখণ্ড)- উত্তরাখণ্ডের আলমোড়া উত্তর ভারতের সবচেয়ে সুন্দর স্থানগুলির মধ্যে অন্যতম। এই জায়গাটি উত্তরাখণ্ডের কুমায়ুন পর্বতমালায় অবস্থিত। আলমোড়ার জনসংখ্যা প্রায় ৩৫,০০০। আলমোড়া অনন্য হস্তশিল্প, প্রাচীন মন্দির এবং প্রকৃতির আশ্চর্যজনক দৃশ্যের জন্যও খ্যাত৷
খরচ- প্রায় ১০,০০০ টাকা।
রুট- গাড়ি, বাস, ট্রেন বা উড়ানে আলমোড়া পৌঁছাতে পারেন। পন্তনগর বিমানবন্দর আলমোড়ার নিকটতম। কাছের রেলওয়ে স্টেশন কাঠগোদাম। সড়কপথে দিল্লি-মোরাদাবাদ-রুদ্রপুর-হলদওয়ানি-রানিখেত হয়ে আলমোড়া পৌঁছাতে পারেন।
ঘোরার জায়গা- গোবিন্দ বল্লভ মিউজিয়াম, চিতই গোলু দেবতা মন্দির, আলমোড়ার কালীমঠ এবং কাসর দেবী মন্দির। সেরা সময়- এপ্রিল থেকে জুলাই।
মাউন্ট আবু (রাজস্থান)- মাউন্ট আবু রাজস্থানের সিরোহি জেলায় অবস্থিত একটি জনপ্রিয় পর্যটনস্থল। মাউন্ট আবু সবুজ সমভূমি, জলপ্রপাত, হ্রদ এবং নদী দ্বারা বেষ্টিত। মাউন্ট আবুতে প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ মানুষ বেড়াতে যান।
খরচ- প্রায় ৭০০০ টাকা।
রুট- গাড়ি, বাস বা ট্রেনে ভ্রমণ করতে পারেন। বিমানেও আপনি মাউন্ট আবু পৌঁছতে পারেন। ডবোক বিমানবন্দর নিকটতম। আবু রোড নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন। দিল্লি-গুরুগ্রাম-পুষ্কর-আলওয়ার-আজমেঢ় হয়ে মাউন্ট আবু পৌঁছতে পারেন।
পর্যটন আকর্ষণ- দিলওয়ারা জৈন মন্দির, সানসেট পয়েন্ট, অচলেশ্বর মহাদেব মন্দির, মাউন্ট আবু বাজার এবং বন্য অভয়ারণ্য।
ভ্রমণের সেরা সময়- এপ্রিল থেকে জুন
নৈনিতাল (উত্তরাখণ্ড)- উত্তরাখণ্ডের নৈনিতাল এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত দেখার জন্য একটি দুর্দান্ত জায়গা। এই সুন্দর হিলস্টেশনটি সবুজ পাহাড় এবং হ্রদ দ্বারা বেষ্টিত। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৬,৮৩৭ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। নৈনিতালের পাহাড় থেকে ২ মাইল জুড়ে আমের আকৃতির একটি হ্রদও রয়েছে।
খরচ- প্রায় ৫০০০ টাকা।
রুট- এনসিআর থেকে নৈনিতালের দূরত্ব মাত্র ৩২৩ কিলোমিটার। আপনি গাড়ি, বাস বা ট্রেনে সহজেই পৌঁছতে পারেন। কাঠগোদাম এখানকার নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন। দিল্লি-মোরাদাবাদ-টান্ডা-ডাডিয়াল-বাজপুর থেকে কালাদুঙ্গি হয়ে নৈনিতাল যাওয়া যায়।
পর্যটন আকর্ষণ- নৈনিতাল লেক, নয়না পিক, কাঞ্চি ধাম, নয়না দেবী মন্দির এবং ইকো কেভ গার্ডেন।
ভ্রমণের সেরা সময়- এপ্রিল থেকে জুন এবং ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি।
কুর্গ (কর্নাটক)- কর্নাটকের কুর্গ চূড়া এবং সুন্দর উপত্যকার জন্য বিখ্যাত। নৈসর্গিত প্রকৃতির জন্য জন্য ভারতের সেরা পর্যটন স্পটগুলির মধ্যে ধরা হয়। বিশাল চা বাগান, সবুজ বন ও প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ আসেন। বন্ধুদের সঙ্গে একটি সুন্দর জায়গা অন্বেষণ হোক বা স্ত্রীর সঙ্গে হানিমুনে যেতে চাইলে কুর্গকে বেছে নিতে পারেন।
খরচ- প্রায় ২৫০০০-৩০০০০ টাকা।
রুট - কুর্গ যাওয়ার জন্য রেল বা বিমানপথই শ্রেয়। নিকটতম ম্যাঙ্গালোর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং রেলওয়ে স্টেশন মহীশূর।
ঘোরার জায়গা- দুবারে এলিফ্যান্ট ক্যাম্প, অ্যাবে ভ্যালি, নাগারহোল ন্যাশনাল পার্ক, ওমকারেশ্বর মন্দির, চেতালি।
সেরা সময় - অক্টোবর থেকে মার্চ।
গুলমার্গ (জম্মু ও কাশ্মীর)- কাশ্মীরের বারামুলা জেলায় অবস্থিত গুলমার্গ মধুচন্দ্রিমার প্রথম পছন্দ হয়ে উঠেছে। শীতকালে, গুলমার্গের পর্বতগুলি তুষার চাদরে আবৃত থাকে এবং গ্রীষ্মে উপত্যকাগুলি থাকে ফুলে ভারা। এখানে স্কিইং, স্লেডিং, গন্ডোলা রাইড এবং ট্রেকিং উপভোগ করতে পারেন। শীতকালে এখানকার তাপমাত্রা -৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
খরচ -প্রায় ২৫,০০০-৩০,০০০ টাকা।
রুট- বিমান বা ট্রেন রুট নিতে পারেন। গুলমার্গ যাওয়ার নিকটতম বিমানবন্দর শ্রীনগর। নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন জম্মুতে। আপনাকে গাড়ি বা বাসে গুলমার্গ পৌঁছতে হবে।
পর্যটন আকর্ষণ- গুলমার্গ স্কাই এরিয়া, বাবা রেশি মন্দির, নাগিন ভ্যালি, গল্ফ কোর্স এবং খিলানমার্গ।
ভ্রমণের সেরা সময় - এপ্রিল থেকে জুন এবং নভেম্বর থেকে জানুয়ারি।
শিলং (মেঘালয়)- এককালে বাঙালির প্রিয় হাওয়াবদলের জায়গা শিলং। একে প্রাচ্যের স্কটল্যান্ডও বলা হয়। শিলং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪,৯০৮ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। এখানকার উঁচু পাহাড় স্কটল্যান্ডের কথা মনে করিয়ে দেয়।
খরচ - প্রায় ২০,০০০-২৫,০০০ টাকা।
রুট- আপনি বিমান এবং রেলপথে শিলং পৌঁছতে পারেন। শিলংয়ের নিকটতম বিমানবন্দর উমরোই প্রায় ২৫ কিমি দূরে। রেলওয়ে স্টেশন গোহাটি।
পর্যটন আকর্ষণ- এলিফ্যান্ট ফলস, শিলং পিক, ওয়ার্ডস লেক, পুলিশ বাজার, উমিয়ম লেক এবং সুইট ফলস
সেরা সময় - মার্চ থেকে জুন।
গ্যাংটক (সিকিম)- সিকিমের গ্যাংটক সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫,৪১০ ফুট উচ্চতায় হিমালয় পর্বতমালায় অবস্থিত। গ্যাংটকের আবহাওয়া সারা বছরই মনোরম থাকে। এর আগে এই স্থানটি এত জনপ্রিয় ছিল না। ১৮৪০ সালে আঞ্চি মঠ গঠনের পর এটি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে। গ্যাংটক প্রকৃতি প্রেমীদের কাছে প্রিয় জায়গা।
খরচ- প্রায় ২৫,০০০-৩০,০০০ টাকা।
রুট- দিল্লি-এনসিআরে বসবাসকারী লোকেরা গ্যাংটকে পৌঁছতে পারে বিমান বা রেলপথের মাধ্যমে। নিকটতম বিমানবন্দর বাগডোগরা এবং জলপাইগুড়ি নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন।
পর্যটন আকর্ষণ- রুমটেক মঠ, নাথুলা পাস, সোমগো লেক, হনুমান টোক, কাঞ্চনজঙ্ঘা
ভ্রমণের সেরা সময়- সেপ্টেম্বর থেকে জুন।
মালানা (হিমাচল প্রদেশ)- মালানাকে বলা হয় ভারতের গ্রিস। এই স্থানটি সৌন্দর্যের পাশাপাশি প্রাচীন সংস্কৃতির জন্যও বিখ্যাত। জমদগ্নি ও রেণুকা দেবীর মন্দির পর্যটনের দু'টি প্রধান কেন্দ্র। এছাড়াও আপনি এখানে ঘন দেওদার বন, মালানা ড্যাম, দেও টিব্বা পর্বত এবং পার্বতী উপত্যকা দেখতে পারেন।
খরচ- প্রায় ৮০০০ টাকা।
রুট- দিল্লি-এনসিআর থেকে বিমান, রেল বা সড়কপথে পৌঁছনো যায়। নিকটতম বিমানবন্দর কুল্লু মানালি প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে। যেখানে মালানা হল্ট নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন।
পর্যটন আকর্ষণ- জমদগ্নি মন্দির, রেণুকা দেবীর মন্দির, খীরগঙ্গা, কাসোল, তোশ এবং মানিকরণ।
সেরা সময়- মে থেকে আগস্ট।
আরও পড়ুন- নববর্ষে ষোড়শ ব্যঞ্জন, কলাপাতায় খাওয়ার ৫ উপকারিতা জানলে চমকে যাবেন