ভারতে মানুষ ব্যাপক হারে ডায়াবেটিসে ভুগছেন এবং এই সংখ্যা ক্রমাগত বাড়ছে। ডায়াবেটিস রোগে চিকিৎসার পাশাপাশি সঠিক খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রার যত্ন নেওয়া খুবই জরুরি। আপনার যদি এই রোগ থাকে, তাহলে আপনি যা খান এবং পান করেন, তা আপনার শরীরে কী প্রভাব ফেলবে, সে সম্পর্কে আপনাকে পুরোপুরি সচেতন থাকতে হবে। শুধু তাই নয়, আপনার ডায়েটে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণও খেয়াল রাখতে হবে কারণ এটি সরাসরি আপনার রক্তে শর্করার মাত্রাকে প্রভাবিত করে।
আমেরিকান ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন (ADA) ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে শূন্য-ক্যালোরি বা কম-ক্যালোরিযুক্ত পানীয় খাওয়ার পরামর্শ দেয়। অনেক সময় আমাদের সবার সঙ্গে এমন হয় যে হঠাৎ গলা শুকিয়ে গেলে আমরা কোলা বা অন্য কোন সফ্ট ড্রিঙ্ক পান করি, কিন্তু আপনি যদি ডায়াবেটিসে ভোগেন তবে এই ভুলের জন্য আপনাকে ভারী মূল্য দিতে হতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিনি যুক্ত সফ্ট ড্রিঙ্ক পান করা উচিত নয়। যদি আপনার গলা শুকিয়ে যায় এবং আপনি জল বা চিনি ছাড়া লেবু জল পান করতে পারেন। এটি আপনার জন্য একটি দুর্দান্ত বিকল্প হবে। এই খবরে, আমরা আপনাকে বলব যে আপনি বা আপনার আশেপাশের কেউ যদি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন তবে তারা কী ধরণের পানীয় পান করতে পারেন।
১. জল
শরীরকে হাইড্রেট করার ক্ষেত্রে জল ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সবচেয়ে ভালো বিকল্প। কারণ এটি আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়াবে না। উচ্চ রক্তে শর্করা ডিহাইড্রেশন হতে পারে।
পর্যাপ্ত জল পান করলে আপনার শরীর থেকে অতিরিক্ত গ্লুকোজ প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। ADA সুপারিশ করে যে একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের দিনে কমপক্ষে ১৩ গ্লাস (তিন লিটার) এবং মহিলাদের প্রায় ৯ গ্লাস (দুই লিটার) পান করা উচিত। আপনি যদি বারবার জল পান করতে একঘেয়ে লাগে তবে আপনি এতে লেবু, কমলার টুকরো, তুলসী, পুদিনা জাতীয় জিনিস যোগ করতে পারেন। এতে জলের স্বাদ বদলে যাবে এবং আপনি অনেক ভিটামিনও পাবেন।
২. সোডা জল
সেল্টজার ওয়াটার হল এক ধরনের সোডা ওয়াটার। এটিকে স্পার্কলিং ওয়াটারও বলা হয় যাতে কোন অ্যাডেবিভস থাকে না। এটি চিনিযুক্ত সোডা পানীয়ের একটি দুর্দান্ত বিকল্প। সাধারণ জলের পরিবর্তে, সেল্টজার জলে ক্যালোরি, কার্বোহাইড্রেট এবং চিনি থাকে না। এটি হাইড্রেটেড থাকার এবং রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখার একটি দুর্দান্ত উপায়।
৩. গ্রিন টি
অনেক গবেষণায় এটা প্রমাণিত হয়েছে যে গ্রিন টি আপনার স্বাস্থ্যের উপর ভালো প্রভাব ফেলে। প্রতিদিন গ্রিন টি খাওয়া মানুষের টাইপ 2 ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা হ্রাস করে। তবে এ বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন। গ্রিন টির পাশাপাশি আপনি কালো, সাদা বা অন্যান্য ভেষজ চাও পান করতে পারেন।
এছাড়াও ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা ক্যামোমাইল, হিবিস্কাস, আদা এবং পিপারমিন্টের মতো ভেষজ চা পান করতে পারেন। এগুলি দুধ এবং চিনির চায়ের একটি দুর্দান্ত বিকল্প।
৪. চিনিহীন কফি
২০১৯ সালের একটি সমীক্ষা অনুসারে, কফি চিনির বিপাককে উন্নত করে টাইপ 2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। চায়ের মতো, এটি চিনি ছাড়া হওয়া উচিত। কফিতে দুধ, ক্রিম বা চিনি যোগ করলে তাতে ক্যালোরির পরিমাণ বেড়ে যায়, যার কারণে আপনার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
৫. সবজির রস
সারা বিশ্বে পাওয়া প্রায় সব ফলের রসে চিনি থাকে, তাই আপনি যদি টমেটো বা অন্য কোনও সবজির জুস পান করেন তবে তা শুধু আপনার রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রণে রাখবে না বরং আপনার স্বাস্থ্যও নানাভাবে উপকৃত হবে। বিভিন্ন ধরনের সবুজ শাক সবজির রসে শসার রস, একমুঠো বেরি এবং জোয়ান মিশিয়ে একটি স্বাস্থ্যকর পানীয় তৈরি করতে পারেন, যা আপনাকে অনেক ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান দেবে।
৬. কম চর্বিযুক্ত দুধ
দুধে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং খনিজ রয়েছে। তবে এটি আপনার শরীরে কার্বোহাইড্রেট বাড়ায়। ডায়াবেটিস রোগীদের সবসময় চিনি ছাড়া দুধ পান করা উচিত। সেই সঙ্গে কম চর্বি হওয়া উচিত। স্কিমড মিল্কও ব্যবহার করতে পারেন।
৭. দুধের বিকল্পগুলিও চেষ্টা করুন
আপনি দুধের পরিবর্তে বাদাম, ওট, চাল, সয়া বা নারকেল দুধও ব্যবহার করতে পারেন। এগুলি দুগ্ধমুক্ত এবং কম কার্বোহাইড্রেট থাকে। তারা শরীরকে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি এর মতো গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি সরবরাহ করে, যা হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।