প্রবল গরম বাংলায়। চলছে তীব্র দাবদাহ। এই সময়ে এসি আর রেফ্রিজারেট একমাত্র ভরসা। খাবার ও পানীয়কে পচন থেকে বাঁচিয়ে রাখে ফ্রিজ। প্রযুক্তির অগ্রগতির অন্যতম আবিষ্কার ফ্রিজ। যা দীর্ঘ সময়ের জন্য ফল ও সবজিকে টাটকা রাখে। বর্তমানে স্বামী ও স্ত্রী দুজনেই চাকরিজীবী। কারও হাতেই সময় নেই। ফলে ফ্রিজে খাবার রাখতে বাধ্য হন বহু মানুষ। কারণ তিনবেলা রান্না করার সময় নেই। অনেকেই এখন সকালে খাবার রান্না করেন। সেই খাবারই রাতে গরম করে খান। ফ্রিজে দিনভর রাখা থাকে সেই খাবার। খাবার ফ্রিজে রাখলে দীর্ঘক্ষণ নিরাপদ থাকে। কিন্তু এমন অনেক সবজি ও ফল রয়েছে যা ভুলেও ফ্রিজে রাখা উচিত নয়।
ছুটির দিনে অনেকেই গোটা সপ্তাহের জন্য খাবার এবং পানীয় কিনে ফ্রিজে রেখে দেন। ফ্রিজে থাকে ফল, শাকসবজি ও পাউরুটি। কিন্তু জানলে অবাক হবেন,কিছু ফল এবং সবজি ফ্রিজে রাখলে হিতে বিপরীত হয়। সেই সব সবজি বা ফলের পুষ্টি অক্ষত থাকে না। ভুলেও এই সব খাবার ফ্রিজে রাখবেন না। এই সব খাবার ফ্রিজে না রেখে বাইরে রাখলে বেশি নিরাপদ ও পুষ্টিকর থাকে। চলুন জেনে নেওয়া যাক, গরমকালে কোন কোন ফল বা সবজি ভুলেও ফ্রিজে রাখা উচিত নয়।
১। পেঁয়াজ, আদা ও রসুন- রসুন ও পেঁয়াজ ফ্রিজে রাখা উচিত নয়। খুব কম এবং আর্দ্র তাপমাত্রায় পেঁয়াজের স্টার্চ শর্কতাতে রূপান্তরিত হতে পারে। এতে পেঁয়াজ খুব নরম হয়ে যায়। এমনকি নষ্টও হতে পারে। পেঁয়াজের মতো রসুনও ফ্রিজে রাখবেন না। স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ঘরে রাখাই শ্রেয়। এতে দীর্ঘসময় রসুন সতেজ থাকবে। ফ্রিজে রাখা পেঁয়াজ ও রসুন স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। আদাও ফ্রিজে না রাখেই শ্রেয়।
২। তরমুজ-গরমের সেরা ফল তরমুজ। যা শরীরে জলের অভাব পূরণ করে। শরীরকে হাইড্রেটেড রাখে। তরমুজ পেট ঠান্ডাও রাখে। ফ্রিজে কাটা তরমুজ রাখলে বিষক্রিয়ার ঝুঁকি হতে পারে। কাটা তরমুজ ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে। যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক। ভুল করেও তরমুজ ফ্রিজে রাখা উচিত নয়।
৩। পাউরুটি- ভুলেও পাউরুটি ফ্রিজে রাখবেন না। দরকারে পর্যাপ্ত পাউরুটি কিনুন। অতিরিক্ত খাবেন না। পাউরুটি ঘরের তাপমাত্রায় ৩-৪ দিন রাখা যায়। পলিথিনেও রাখতে পারেন পাউরুটিষ কিন্তু ফ্রিজে রাখলে পাউরুটিতে জৈব বিক্রিয়া ঘটে। এতে পাউরুটি পেটে গোলযোগ তৈরি করতে পারে।
৪। মধু- ঔষধি গুণে ভরপুর মধু যদি ঘরের তাপমাত্রায় রেখে সেবন করা হয় তবে তা অনেকদিন থাকে। নষ্ট হয় না। মধু ফ্রিজে রাখলে দানার আকৃতি নেয়। দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। মধু ফ্রিজে রাখলে তা ঘন হয়ে শক্ত হতে শুরু করে। ফ্রিজে রাখলে তার রাসায়নিক বদলও ঘটে। ফলে মধু একেবারেই ফ্রিজে রাখবেন না।
৫। শসা- শসাকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নীচে রাখলে তাতে দ্রুত পচন ধরতে শুরু করে। তাই শসা স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখুন। দীর্ঘদিন ফ্রিজে শসা রাখলে তা স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে।
৬। আলু- আলু কখনও ফ্রিজে রাখবেন না। আলুতে থাকা স্টার্চ চিনিতে রূপান্তরিত হয়। ফলে ডায়াবেটিস রোগীরা খেলে সুগার বেড়ে যেতে পারে। আলু স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখুন। ফ্রিজডে আলু রাখলে তাড়াতাড়ি শুকিয়ে যায়। এমনকি গঠন ও স্বাদেও আসে পরিবর্তন।
৭। আচার-তেল- রান্নার তেল স্বাভাবিক তাপমাত্রায় ভাল থাকে। বাদাম তেল ফ্রিজে রাখতে পারেন। এছাড়া জ্যামজেলি ও আচার ফ্রিজে রাখবেন না। তার গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায়। স্যালাড কেটেও ফ্রিজে রাখা উচিত নয়।
৮। টেমেটো- কাঁচা বা পাকা কোনও টমেটোই ফ্রিজে রাখা উচিত নয়। টমেটো স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখুন। টেমেটো কেচাপও ফ্রিজে রাখবেন না। এগুলির অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট দ্রুত ভেঙে যায়।
৯। মিষ্টি- কেক- ফ্রিজে ভুলেও রাখবেন না মিষ্টি, কুকিজ, কেক বা কুকিজ। এগুলি বাইরে এয়ারটাউট বাক্সে রেখে দিন। শুকনো ফল বা ড্রাইফ্রুটসও কখনও ফ্রিজে রাখা উচিত নয়। সেই সঙ্গে গুঁড়ো মশলাও ফ্রিজে রাখবেন না। তার গন্ধ ও স্বাদ হারায়।
১০। আপেল ও অন্যান্য ফল - ফ্রিজে ভুলেও আপেল রাখবেন না। এতে আপেল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এছাড়া কলা, আনারস, অ্যাভোকাডো, পিচ, চেরি, লেবু ও কমলার মতো সাইট্রাস–জাতীয় ফল ফ্রিজে রাখবেন না। এগুলি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রাখুন।