Holong Tourist Lodge: হলঙে ঐতিহ্যবাহী বনবাংলো আগুনে পুড়ে যাওয়ার পর ওই জায়গাতেই একই ধাঁচে আবার নতুন করে একটি বনবাংলো তৈরির জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতার হস্তক্ষেপ দাবি করেছিল উত্তরবঙ্গের পর্যটন ব্যবসায়ীদের সংগঠন। উত্তরবঙ্গের অন্যতম পর্যটন সংগঠন ‘হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড টুরিজ়ম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক’-এর তরফে মুখ্যমন্ত্রীকে সেই দাবি জানিয়ে একটি চিঠি পাঠানো হয়েছিল। সেই চিঠিতে বনবাংলো পুনর্নির্মাণের আর্জি জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছিল। তাঁদের দাবি ছিল, হলং বনবাংলো উত্তরবঙ্গের অন্যতম ‘হেরিটেজ’ বাংলো ছিল। এ বছর ১৮ জুন বিধ্বংসী আগুনে তা পুড়ে গিয়েছে। পুরনো নির্মাণশৈলী, নকশার আদলেই তা তৈরির আবেদন জানানো হয়। প্রশাসন সূত্রে খবর, সেই দাবি অনুযায়ী কাজ করা হবে।
আলিপুরদুয়ারের ঐতিহ্যবাহী হলং বনবাংলো কয়েক মাস আগেই অগ্নিকাণ্ডে ভস্মীভূত হয়ে গিয়েছে। সেই বনবাংলো দ্রুত তৈরি করতে চায় বন দফতর। সম্প্রতি নতুন বনবাংলো তৈরি করার জন্য নকশা জমা পড়েছে নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দফতরে।
বন দফতর সূত্রে খবর, মোট চারটি নকশা জমা পড়েছে নবান্নে। প্রস্তাবিত নতুন বনবাংলোর নকশাগুলি খতিয়ে দেখে মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানা গিয়েছে। চারটি নকশার মধ্যে যেটিতে তিনি অনুমোদন দেবেন, সেই নকশা অনুযায়ী বাস্তবে বাংলো তৈরি করবে বন দফতর। বামফ্রন্ট জামানায় বনের অন্দরে নির্মিত যে কোনও সরকারি অফিস বা বাংলোর নির্মাণের দায়িত্বে থাকত পর্যটন দফতর। কিন্তু হলং বনবাংলোটি পুড়ে ছারখার হয়ে যাওয়ার পর নতুন বাংলো নির্মাণের জন্য উদ্যোগী হয় প্রশাসন। তখনই সিদ্ধান্ত হয় বনের কোর এলাকায় যে কোনও নির্মাণের দায়িত্ব থাকবে বন দফতরের হাতে। সেই নিয়ম মেনেই নতুন বনবাংলো তৈরির নকশা মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে জমা দিয়েছে বন দফতর।
বনমন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের দফতর থেকে চারটি নকশা পাঠানো হয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে। সেখান থেকে অনুমোদন এলেই আমরা কাজ শুরু করে দেব। সব ক্ষেত্রেই পরিবেশের কথা মাথায় রাখব আমরা।’’
(পুরনো পুড়ে যাওয়ার আগের চেহারা)
কবে কাজ শুরু হবে?
হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্রাভেল ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্কের সম্পাদক সম্রাট সান্যাল জানিয়েছেন, এটি একটি আবেগের জায়গা। হলং বনবাংলোতে যায়নি এমন বাঙালি মেলা ভার। এখানে বুকিং পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। একই রকম আদলে গড়ে তুললে পর্যটক আকর্ষণ বজায় থাকবে বলে তিনি মনে করছেন। পর্যটন ব্যবসায়ী তাপস সাধন রায় জানিয়েছেন, রাজ্যের উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাই, এত দ্রুত এই সিদ্ধান্ত ও কাজ করার জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য।
হলং নদীর তীরে এই বাংলোটি বানানো হয়েছিল সম্পূর্ণ কাঠ দিয়ে। পুরোনো সেই আদল ফুটিয়ে তোলার জন্য দক্ষ কাঠের কারিগর খোঁজাটাই এখন বন দফতরেরের কাছে চ্যালেঞ্জ। এর আগে সংস্কারের ক্ষেত্রে শাল-সেগুন কাঠ ব্যবহার করা হয়েছিল। এবারেও যেন ভালো মানের কাঠ দিয়েই কাজ করা হয়, সেই দাবিও উঠেছে।
১৯৬৭ সালে মাদারিহাটে জলদাপাড়া জঙ্গলের ভিতর বাংলোটি তৈরি হয়। বিভিন্ন বন্যজন্তু ও পাখিদের সান্নিধ্য উপভোগ করার জন্য দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় ছিল এই বনবাংলো। জঙ্গলের নিস্তব্ধতায় কিছুটা সময় কাটাতে এসেছেন অনেক নামী-দামি মানুষ। প্রায় ৬৮ বছর ধরে এই বাংলোটিতে অজস্র পর্যটক এসে থেকেছেন। বাংলোটি পুড়ে যাওয়ার খবরে পর্যটনমহলেও মন খারাপ। সম্পূর্ণ কাঠের তৈরি এই বন বাংলোটি যেন আগের মতো করেই গড়ে তোলা হয়, সেই দাবি তুলছেন সকলে। অন্যদিকে, হলং বনবাংলোয় আগুন নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে অভিযোগ জানাবেন বলে দাবি করেছেন আলিপুরদুয়ারের বিজেপি সাংসদ মনোজ টিগ্গা।