Darjeeling Hill Strike:বনধ সংস্কৃতি পছন্দ নয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আর তাঁর উত্তরবঙ্গ সফরের মাঝেই দেখতে হল চা-শ্রমিকদের বনধ। ২০ শতাংশ বোনাসের দাবিতে সোমবার ১২ ঘণ্টার পাহাড় বনধের ডাক দিয়েছে পাহাড়ের ৮ টি শ্রমিক সংগঠন। এই বনধে স্তব্ধ পাহাড়ের বেশিরভাগ এলাকা। যদিও বনধ সমর্থকরা দাবি করেছেন তাঁরা পর্যটনে কোনও রকম আঘাত আসতে দেবেন না, তবু পর্যটকদের ভোগান্তির মুখে পড়তে হয়েছে এদিন। ২০১৬ সালে ধারাবাহিক হিংসার পর এই প্রথমবার পাহাড়ে বনধ পালিত হল। প্রায় আট বছর পর। আর এই বনধে সমর্থন মিলেছে সাধারণ মানুষেরও।
ধর্মঘটের জেরে সোমবার সকাল থেকে কার্যত স্তব্ধ দার্জিলিং। চা বাগানগুলি তো বটেই, পাহাড়ি শহরের জনবহুল স্থানও কার্যত শুনশান। প্রায় ৮ বছর পর এভাবে বনধ চলছে পাহাড়ে। এদিন দার্জিলিং ও কালিম্পং জেলার সর্বত্রই ছিল শুনশান। সকাল থেকেই পাহাড়ের জায়গায় জায়গায় পিকেটিং করতে দেখা গিয়েছে বনধ সমর্থকদের। বন্ধ সমস্ত দোকানপাট, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। বন্ধ ছিল যান চলাচল। এদিন সকালে কার্শিয়াংয়ে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয় বনধ সমর্থকদের। সকাল থেকে চা বাগানের দরজা পর্যন্ত খোলেনি।
দার্জিলিং মলের ছবি
দার্জিলিংয়ের জনবহুল ম্যাল একেবারে ফাঁকা। চক বাজার এলাকাও ছিল জনশূন্য। দোকানপাট খোলেনি। অন্যদিকে কার্শিয়াংয়েও একই চিত্র দেখা গিয়েছে। মিরিক লেক ছিল জনশূন্য। পর্যটকদের ইতিউতি ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেলেও, বেশিরভাগই এদিন হোটেলবন্দি হয়ে কাটিয়েছেন। তবে যাঁরা একটু প্রত্য়ন্ত এলাকায় হোম-স্টেতে গিয়েছিলেন। চেক আউট করার কথা ছিল আজই। তাঁদের হিসেব গোলমাল হয়ে গিয়েছে। অনেকের এদিন ট্রেন ধরার কথা রয়েছে। যাঁরা ট্যুর অপারেটরদের মাধ্যমে গিয়েছেন, তাঁদের বন্দোবস্ত হলেও, যাঁরা একা গিয়েছেন তাঁদের সমস্য়ায় পড়তে হয়েছে। কারণ পাহাড়ে থেকে সমতলে কোনও গাড়ি ওঠানামা করছে না। সন্ধ্যের আগে যদি গাড়ি মেলে তার জন্য খোঁজ খবর করতে দেখা গিয়েছে অনেককে। বনধের সিদ্ধান্ত সন্ধ্যার পর আসায় বিকল্প বন্দোবস্ত করতে পারেননি অনেকে।
সমস্যার কথা স্বীকার করে নিয়েছেন সিটুর জেলা সম্পাদক তথা প্রাক্তন সাংসদ সমন পাঠক। তিনি বলেন, "যাঁরা প্লেন বা ট্রেনের টিকিট দেখাচ্ছেন তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া জরুরি পরিষেবা, পরীক্ষা বা বিয়েবাড়ি, শবযাত্রার গাড়িকে ছাড়া হচ্ছে। তবে শাটল গাড়ি না থাকায় কিছুটা ভোগান্তি হচ্ছে। " তাঁর দাবি, আগে থেকে ঘোষণা না হওয়ায় কিছুটা সমস্য়া হলেও এ ছাড়া উপায় ছিল না।
উল্লেখ্য, পাহাড়ের ৮৭টি চা বাগানের শ্রমিকদের এখনও পুজো বোনাসের নিষ্পত্তি হয়নি। ২ সেপ্টেম্বর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়। তার পর থেকে তিনটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে। শ্রমিকরা ২০ শতাংশ বোনাসের দাবিতে অনড়। অন্যদিকে, মালিকপক্ষ ১৩ শতাংশের বেশি বোনাস দিতে নারাজ। আগের প্রতিটি বৈঠকই ভেস্তে গিয়েছে। এদিনের বৈঠকেও কোনও সমাধানসূত্র বেরিয়ে না আসায় ১২ ঘণ্টার পাহাড় বনধের ডাক দিয়েছে প্রতিটি শ্রমিক সংগঠন।
তবে খবর মিলেছে সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হয়েছে নবান্ন। সূত্রের খবর, চা শ্রমিক ও মালিকপক্ষকে আলোচনায় ডেকে বোনাস নিয়ে সমস্যা সমাধানে শ্রম দফতরকে দ্রুত পদক্ষেপ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পর্যটনের মরশুমে কোনওভাবেই যাতে ছন্দ বিগড়ে না যায়, তার জন্য শ্রম দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন মুখ্যসচিব।