Advertisement

পুজো ও বুদ্ধদেব গুহ : 'চিঠি লিখে বিরক্ত করতাম তাঁকে, উত্তর দিতেন সবুজ কালিতে'

শিশু আর কিশোর সাহিত্যের মধ্যে একটি ফারাক আছে। যেমন আছে গোয়েন্দা কাহিনীর বুনোটের মধ্যে। পুজোর লেখা মানেই শুধু ছোটদের জন্য হয় না। ছোট, বড়, বালক, বালিকা, সবাইকে নিয়েই যে জীবন তা শারদোৎসবে আরো নতুন করে আবির্ভূত হয়। আমাদের এখনকার সাহিত্যে এই মিলনের কথা খুব কমজনই লিখেছেন।

উদয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়
Aajtak Bangla
  • কলকাতা,
  • 11 Oct 2021,
  • अपडेटेड 10:26 PM IST
  • একটা সময় ছিল যখন ‘কোজাগর’ এর লাইনগুলো প্রায় মুখস্ত হয়ে গেল
  • চিঠি লিখে বিরক্ত করতাম তাঁকে
  • উত্তর আসতো সবুজ কালিতে, নরম ভাষায়

শিশু আর কিশোর সাহিত্যের মধ্যে একটি ফারাক আছে। যেমন আছে গোয়েন্দা কাহিনীর বুনোটের মধ্যে। পুজোর লেখা মানেই শুধু ছোটদের জন্য হয় না। ছোট, বড়, বালক, বালিকা, সবাইকে নিয়েই যে জীবন তা শারদোৎসবে আরো নতুন করে আবির্ভূত হয়। আমাদের এখনকার সাহিত্যে এই মিলনের কথা খুব কমজনই লিখেছেন। 

ছোটদের জন্য লিখতে গেলে নারী চরিত্র একদম বাদ দিতে হবে এটা বাংলা সাহিত্যের একটি বৈশিষ্ট্য বলা যায়। কিছুকাল হল সেই পরম্পরায় ছেদ পড়েছে। তাও সেটা সুচিত্রা ভট্টাচার্যের ‘মিতিন মাসির’ হাত ধরে। কিন্তু সবেতেই কেমন একটা পবিত্রতার ছোঁয়া। শিশু সাহিত্য অবশ্যই আমাদের ছোটদের এই বিপুল ভুবন সম্পর্কে অবহিত করবে, শিক্ষিত করে তুলবে চারপাশ সম্পর্কে। কিন্তু একটা বয়সের পর যখন ভাবনা চিন্তায় বদল আসতে থাকে, একটু ভাললাগা, প্রেম প্রীতির প্রতি আগ্রহ জন্মায় তখন সাহিত্য সঙ্গীতে তার প্রতিফলন না দেখলে হতাশ লাগে। ছোটদের সিনেমা বা সাহিত্য বড়রাও দেখছেন, কতটা ছোটদের জন্য তা উপযোগী তাই নিয়ে আলোচনা করছেন, পবিত্রতার একেবারে ধ্বজাধারী হয়ে সংসার সামাল দিচ্ছেন, এসব আমাদের দেখতে দেখতে বড় হতে হয়েছে। সেখানে কেউ পনেরো ষোল বছরেই পড়ার বইয়ের ফাঁকে  ‘খেলা যখন’ পড়ছে , এই বাস্তবতাটি হয়তো নজরেই আসেনি।

তুমুল জনপ্রিয় সাহিত্য মানেই তা সাহিত্যগুনে দুর্বল এইরকম একটি ধারনা আমাদের সমাজে আছে। বড়দের জন্য লেখা ছোটরা পড়বে না, এমন বিশ্বাস থেকেই তৈরি করা হয়েছে  আরোপিত সামাজিক বিভাজন। জীবনের প্রতিটি পর্বের যে একটি নিজস্বতা থাকে তা অনেক সময়ে বিস্মৃত হই। প্রকৃতি আমাদের একভাবে তৈরি করেছে, আর সামাজিক অনুশাসন অন্যভাবে। শিল্প সাহিত্যের দায় হল এর মধ্যে একটি সামঞ্জস্য আনা। জীবনের নানা ভাবনা, অনুশাসনের প্রতি বিরক্তি খুব অল্প বয়সেই জন্মাতে পারে। তাকে সাহিত্যে স্থান দেওয়া যাবে না কেন?

Advertisement

বড়দের সাহিত্য মানে সেখানে অহেতুক যৌনতার ছড়াছড়ি থাকবে আর শিশু কিশোর সাহিত্যে পবিত্রতা, এ তো একধরনের চাপিয়ে দেওয়া বিষয়। সাহিত্যে কখনই এরকম বিভাজন থাকা উচিত নয়। জীবনে যেমন সবার উপস্থিতি কাম্য তেমনি সাহিত্যে ঘটতেই পারে তার প্রতিফলন। বিশ্ব সাহিত্য এইভাবেই সবার প্রতিনিধিত্বে সমৃদ্ধ হয়েছে। আমাদের সাহিত্যও তার ব্যতিক্রম ছিল না। এটা তৈরি করা হয়েছে। একজন লেখক একই সাথে বড়দের জন্য লিখছেন আবার শিশু সাহিত্যেও তাঁর অবাধ বিচরণ।  কালজয়ী লেখা কখনও বয়স সাপেক্ষে নির্ধারণ করা যায়না। পাঠক তাকে বাঁচিয়ে রাখেন।

বুদ্ধদেব গুহর উল্লেখযোগ্য লেখাগুলি প্রত্যেকটিই আমাদের অল্প বয়সে পড়ে ফেলা। সত্যি বলতে, ঋজুদার গল্পগুলি গোগ্রাসে পড়তাম ঠিকই কিন্তু বন্ধুদের আলোচনায় প্রাধান্য পেতো ‘কোয়েলের কাছে’,  আর ‘খেলা যখন’। একটা সময় ছিল যখন ‘কোজাগর’ এর লাইনগুলো প্রায় মুখস্ত হয়ে গেল। চিঠি লিখে বিরক্ত করতাম তাঁকে। উত্তর আসতো সবুজ কালিতে, নরম ভাষায়। সেই চিঠি নিয়ে সেকি উত্তেজনা ! একে তাকে পড়ানো, বন্ধুদের কাছে একটু হিরো সাজা, এই আর কি !

‘খেলা যখন’ এর ‘বুলবুলি’ তো আমাদের চারপাশে ঘুরঘুর করে। তারা বুল্বুলির মতই গায় আর দেমাক ধরে। আমরা সেসব দেখি আর মনে মনে ‘রাজার’ মতো  লেখক সত্তা যাপন করি। চারিদিকে শাসনের  বাঁধন। বেচাল হওয়া চলবে না। বুদ্ধদেব গুহ একটা বয়সের পর হারিয়ে যান।

তারপর তাঁর গান শুনি। রবীন্দ্রসঙ্গীত, পুরাতনী, বিশেষত টপ্পা। লেখক বুদ্ধদেব গুহ গায়ক হয়ে ওঠেন। হয়তো তাঁর এই দ্বৈত সত্তা বহুমাত্রিক প্রতিভার পরিচয়। কিন্তু কোথাও একটি দুঃখবোধ থেকে যায়। তা পাঠকের সাথে সাথে লেখকেরও নয় কি? তাঁর লেখা দুরন্ত প্রেমের গল্পগুলি যেমন আমাদের ধীরে ধীরে বড় করে তুলেছিল তেমনি প্রকৃতি আর মানুষের হরেক ওঠাপড়া নিয়ে জীবনের যে অলীক ছন্দ তাও ধরা দিত, নিভৃতে  মনের গহনে। চুপচাপ তাকে লালন করেছি কিশোরবেলায়। এমন গদ্য যা অনেকটা কবিতার মতো। জীবনের নানা রঙে রাঙানো। সেখানে কেউ বুড়ো হন না। সবার মনে পুলক জাগিয়ে যিনি রাখতে পারেন, জনপ্রিয় তিনি তো হবেনই। এখানে সাহিত্য হয়ে ওঠে আনন্দের খনি।

(মতামত লেখকের একান্তই নিজের, আজতক বাংলা এর দায়ভার নেবে না)
 

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement