১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর। সেদিন অযোধ্যায় করসেবা করতে আমরা পৌঁছেছিলাম। পশ্চিমবঙ্গ থেকে হাজার হাজার করসেবক সেদিন অযোধ্যা গিয়েছিলেন। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও করসেবকরা আসেন। রাম মন্দির পুন:প্রতিষ্ঠা করতে হবে, এই ছিল আমাদের লক্ষ্য। লক্ষ্যপূরণের জন্য অনেক আগে থেকে পরিকল্পনা শুরু হয়। ৯০ সালের করসেবা ব্যর্থ হওয়ার পর আমরা আরও প্রত্যয়ী হয়েছিলাম। সেজন্য গ্রামে-শহরে করসেবকদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক সারেন আরএসএস ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদ। ৬ ডিসেম্বর নিয়ে আমাদের কাছে নির্দেশ নির্দিষ্ট নির্দেশ ছিল।
আমার উপর দায়িত্ব ছিল বীরভূম থেকে অযোধ্যায় করসেবকদের নিয়ে যাওয়ার। তার আগে ৯০ সালের করসেবাতেও অংশ নিয়েছিলাম। তবে সেবারের অভিজ্ঞতা ভালো হয়নি। অযোধ্যার আগেই গাজিপুরে আমাদের ট্রেন থেকে নেমে যেতে হয়। মুলায়ম সিংয়ের সরকার তখন উত্তরপ্রদেশে। প্রচণ্ড অত্যাচার করা হয়েছিল করসেবকদের উপর। আমাদের একটা স্কুলবাড়িতে আটকে রাখা হয়েছিল সেবার। কদিন পর সেখান থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বলে দেওয়া হয়, যে যার জায়গায় ফিরে যেতে।
তবে করসেবকরা থেমে যাওয়ার লোক নয়। তাই ৯২ সালে ফের পরিকল্পনা। এবারও আমরা ট্রেনে করেই পৌঁছলাম অযোধ্য়া। সবাই নিজের পকেট থেকে টাকা খরচ করেই গিয়েছিলাম। যাওয়ার সময় কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে হয়নি। অযোধ্যা যখন পৌঁছলাম তখন দেখলাম, লক্ষ লক্ষ করসেবক সেখানে উপস্থিত হয়েছেন। আমরা যারা বীরভূম থেকে গিয়েছিলাম, তাদের অযোধ্যাতেই একটা বাড়িতে রাখা হল।
অযোধ্যা পৌঁছতেই বুঝতে পারলাম, এবারের পরিকল্পনা সফল হবে। লাখ লাখ করসেবক তখন অযোধ্যায়। রাস্তায় বেরোলেই দেখা যাচ্ছে। সে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। সেখানেও আমাদের স্বয়ংসেবকদের বৈঠক হয়। নির্দেশিকা দেওয়া হয়। আমরা সেই মোতাবেক কাজ শুরু করি। তারপর এল সেই ৬ ডিসেম্বর।
সেদিন খুব ভোরে আমরা পোঁছে গেলাম ঘটনাস্থলে। তারপরের ঘটনা আপনারা সবাই জানেন। আমরা জানতাম যে কোনও রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। সেজন্য মানসিকভাবে প্রস্তুতও ছিলাম। হলও তাই। ঠিক সন্ধেবেলা আমাদের কাছে নির্দেশ চলে এল, অযোধ্যা ছাড়তে হবে। আর একটুও অপেক্ষা করা যাবে না। বলা হল, যে যেভাবে পারবেন বাড়ি ফিরে যান। নিরাপদে যান। কোথাও কোনও সমস্যা হলে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নিন। বুঝলাম, ফিরতে হবে।
বীরভূম থেকে অনেকে গিয়েছিলেন। তাঁদের সংবদ্ধভাবে নিয়ে যাওয়া ও ফিরিয়ে আনার দায়িত্ব আমার উপরই ছিল। সিদ্ধান্ত নিলাম যেমন করেই হোক অযোধ্যা থেকে বেরোতে হবে। তখন থেকে মোবাইল ছিল না। এত উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থাও ছিল না। ফলে শুনতে পাচ্ছিলাম অশান্তির খবর। সংযোজক বললেন, যেমন করেই হোক বেরোও অযোধ্যা থেকে। আমরাও নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করলাম। কিন্তু অযোধ্য়া থেকে বেরোনর পরই বুঝলাম, পরিস্থিতি ভালো নয়। আমরা চলে এলাম বারাণসী। কিন্তু বারাণসীতেও আমাদের জন্য আরও বিপদ অপেক্ষা করছিল। (ক্রমশ চলবে)
(লেখক দুধকুমার মণ্ডল। এই বক্তব্য একান্তই তাঁর। bangla.aajtak.in-এর দায়িত্ব নেবে না।)