Advertisement

West Bengal Panchayat Election 2023: পঞ্চায়েত-হিংসায় গ্রামের গরিব মানুষেরাই নিহত, আর্থসামাজিক চিত্রের বদল প্রয়োজন

একটা সময় ছিল ২০১৮ সালে আমরা দেখেছিলাম একটা বিরোধী শূন্য রাজনীতির চিত্র। বিরোধী শূন্য হলে বরং হিংসা কম হওয়ার কথা। বিজেপি অভিযোগ করেছে, হিংসার মাধ্যমেই বিরোধী শূন্য রাজনীতির জন্ম দিয়েছে তৃণমূল। যেটা একসময় সিপিএম সম্বন্ধে অভিযোগ করত তৃণমূল।

পশ্চিমবঙ্গে পঞ্চায়েত ভোট ২০২৩।
জয়ন্ত ঘোষাল
  • কলকাতা ,
  • 09 Jul 2023,
  • अपडेटेड 1:03 PM IST
  • পঞ্চায়েত ভোটে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে হিংসা।
  • কী কারণে এই লড়াই?

নির্বাচন হল গণতন্ত্রের উৎসব। পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল এরকমই একটা উৎসবের দিন। আর সেখানে দেখা গেল রক্ত স্নাত একটা ভোটের ছবি। ভোটের বাংলায় দেখা গেল অবাধ দুষ্কৃতীরাজ। আতঙ্কে গ্রামের মানুষ কাঁপছে। এমন কি ভোট কেন্দ্রে প্রিসাইডিং অফিসার অসহায় হয়ে কাঁদছেন এই দৃশ্যও দেখা গেল। রক্তের এক হোলি খেলা । এমন নয় যে শুধু বিজেপি কর্মীরা নিহত হয়েছেন। ভোটের বলি হয়েছে তৃণমূল ,সিপিএম অন্য সব দলের কর্মীরা। সবমিলিয়ে ভোটের বলি প্রায় ২৬ জন। ভোটের দিনই এখনও পর্যন্ত ১০  প্রাণহানির খবর এসেছে।

চারদিকে অশান্তি। আরামবাগের হিয়াতপুরে বিরাট গোলমাল , কোচবিহারে পোলিং এজেন্ট খুন হয়ে গেল , শীতলকুচির সিতাইয়ে ব্যালট পুড়ল। চাপড়া ,গোয়ালপোখর ,বেজিনগর সেখানে বন্দুক নিয়ে দাপাদাপি। টেবিলের ওপর বোমা রেখে ভোট হচ্ছে। কোচবিহারের ফলিমারীতে বিজেপি পোলিং এজেন্টকে মেরে দেওয়া এটা বড় ঘটনা। মালদার  মানিকচকে তৃণমূল কর্মী নিহত হচ্ছে। আবার একইভাবে কাটোয়ায় তৃনমূল কর্মী গৌতম রায় খুন হয়েছে। বাসন্তীতে তৃণমূল সমর্থক খুন হয়েছে। লালগোলায় সিপিএম  সমর্থক খুন হয়েছে। কাজেই দলমত নির্বিশেষে একটা হিংসা লীলা দেখা গেল। একটা সময় ছিল ২০১৮ সালে আমরা দেখেছিলাম একটা বিরোধী শূন্য রাজনীতির চিত্র। বিরোধী শূন্য হলে বরং হিংসা কম হওয়ার কথা। বিজেপি অভিযোগ করেছে, হিংসার মাধ্যমেই বিরোধী শূন্য রাজনীতির জন্ম দিয়েছে তৃণমূল। যেটা একসময় সিপিএম সম্বন্ধে অভিযোগ করত তৃণমূল।

কিন্তু এখন যেখানে পাল্টা সংঘাত হচ্ছে তৃণমূল কর্মী খুন হচ্ছে কেন? কেননা , বেশ কিছু জায়গায় বিজেপি সমর্থক  তৈরি হয়েছে। নিচু তলায় গ্রামের সাধারণ গরিব মানুষদের মৃত্যু বেশি হয়েছে। যারা বড় নেতা তারা তো কেউ মারা যাননি কোন দলেরই। কিন্তু একদম গ্রাম বাংলার নিচু তলায় তৃণমূল এবং বিজেপি  কর্মীরা যে কেউ খুব মতাদর্শ বা ইস্তাহার মেনে কাজ করে তা নয়। অনেক সময় তৃণমূলের প্রার্থী মনোনয়ন না পেয়ে সে নির্দল প্রার্থী হল। সেই নির্দল প্রার্থীর পেছনে এসে দাঁড়াল বিজেপি বা অন্য কোনো রাজনৈতিক দল। তখন সেটা হয়ে গেল তৃণমূল বনাম বিজেপি। অর্থাৎ বিক্ষুব্ধ তৃণমূল কিন্তু বিরোধী দলে গিয়ে বিরোধীদের তকমা লাগিয়েছে। কেননা নিচু তলায় সব সময় বিজেপির কর্মী ও যেভাবে তৃণমূলের সংগঠন আছে সেভাবে বিজেপির সংগঠন নেই। বিজেপি সংঘাতের মধ্যে দিয়ে নিজেদের সমর্থনটা বাড়াচ্ছে। তার ফলে মনোনয়ন পর্বে হিংসার মাত্রা কম হলেও ভোটপর্বে কিন্তু দেখা গেল হিংসার মাত্রা আরও বেড়ে গেল। হিংসার জেরে নানান ধরনের ব্যাখা হল। অনেক সময় প্ররোচনামূলক কথা বলে অতীতে হিংসার বাতাবরণ তৈরি করা হয়েছে ভোটের আগে। সেটা হয় তাতে অনেকে ভয় পেয়ে যায়। শাসক দলের পেশী শক্তি প্রদর্শন হয়। আবার বিজেপিও সেই পেশী শক্তির মোকাবিলার জন্য পাল্টা পেশী শক্তির প্রদর্শন করছে।

Advertisement

২০১৮-এর পঞ্চায়েত নির্বাচনের মনোনয়ন পর্বে হিংসার মাত্রা, ধরন , বিস্তার এক রকমের ছিল। এবারে কিন্তু অনেকটা বদলে গেছে। এবারে ২০১৯-এ যেরকম লোকসভা আসনে বিজেপি ১৮ টা আসন লাভ করেছে ২০২১-এ বিধানসভা নির্বাচনে পর্যদুস্ত হলেও বিজেপি তার ভোটব্যাঙ্ক বাড়িয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনেও বিজেপি কিন্তু অনেক জায়গায় প্রার্থী দিয়েছে। আর সিপিএম , কংগ্রেসও কিন্তু অনেক জায়গায় প্রার্থী দিয়েছে। তার ফলে ভোটের ফলাফল কি হবে সেটা এখনো স্পষ্ট নয়। কেন না বিজেপি অভিযোগ করছে যে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট হয়নি। নির্বাচন কমিশনকে কোথাও দেখা যায়নি। নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব প্রাপ্ত অফিসার রাজিব সিনহা তাঁকে সকাল থেকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনেক সময় দেখা যাচ্ছে সকালবেলা এক - দু ঘণ্টার মধ্যে অনেক জায়গায় ভোট হয়ে গেছে। সুতরাং প্রশ্ন উঠেছে যে ব্যালট পেপার নিয়ে কারচুপি হয়েছে। কোনও একটা জায়গায় ব্যালট বাক্স নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। সুতরাং এই সব দৃশ্য তুলে ধরে বিজেপি দেখাতে চাইছে যে শান্তিপূর্ণ ভোট হয়নি। যে কারণে শুভেন্দু অধিকারী দাবি তুলেছেন যে কালীঘাট চলো , ৩৫৫ , ৩৫৬ ধারা জারি করার সময় এসে গেছে।

এই রাজনৈতিক বিতর্ক ভোটের ফলাফল বেরোনোর পরেও থেকে যাবে। সেখানে কে জিতলো কে হারলো তার বিবেচনা হবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে গরিব মানুষ তারা রাজনীতিকেই মূলধন করে তাদের রুটি রুজির ব্যবস্থা করছে এখনও গ্রামের বহু জায়গায়। সেখানে নিহত হয়েছে কিন্তু গ্রামের গরিব মানুষেরা। এই  আর্থসামাজিক চিত্রটাই কিন্তু বদলানোর প্রয়োজন। এর জন্য রাজনৈতিক ঐক্যমত যার ভিত্তিতে পশ্চিমবঙ্গকে আবার নতুন করে একটা ইতিবাচক পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার নেওয়া যেতে পারে। অনেকে বলবেন যে এটা অসম্ভব , কুকুরের লেজ সোজা করা। কিন্তু সিনিক হয়ে লাভ নেই। মুক্তির পথ খোঁজাটাও কিন্তু গণতন্ত্রের বড় দায়িত্ব।

 

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement