আমরা চাকরিজীবী হই বা শিক্ষার্থী, প্রত্যেক ক্ষেত্রেই কিন্তু গ্রহের প্রভাব রয়েছে। আমাদের জ্যোতিষশাস্ত্র অনুযায়ী জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে গ্রহের প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোন গ্রহ আমাদের ব্যক্তিজীবনের মঙ্গলের সহায়ক, কোন গ্রহ কর্মজীবনে উন্নতি বা ভাল চাকরি পেতে সাহায্য করে এই সব জানা প্রয়োজন। এমন অনেক কেরিয়ার রয়েছে যেখানে বেতন হয় তো, কম কিন্তু প্রভূত যশের অংশীদার হওয়া যায়। প্রকৃতপক্ষে যারা কেরিয়ারে প্রভূত উন্নতি করে যশ লাভ করে, তাদের অধিপতি গ্রহে দশমেশের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। জ্যোতিষশাস্ত্রে দশম ঘরকে কর্মের ঘর বলা হয়। এই ঘরের অধিপতিকে দশমেশ বা কর্মেশও বলা হয়। এখন জেনে নেওয়া যাক বিভিন্ন গ্রহের রাশি অনুযায়ী, কারা কারা কেরিয়ারে প্রভূত উন্নতি করবে এবং কোন গ্রহের সাহায্যে তাদের উন্নতি হবে।
সূর্য
যে সব ব্যক্তিদের বৃশ্চিক রাশি বা লগ্ন হয় তাদের কর্মজীবনে শুধুমাত্র সূর্যের প্রভাব প্রকটভাবে দেখা যায়। সূর্যের কৃপাতেই এরা সরকারি চাকরি পায়। এইসব ব্যক্তিদের জীবনে সূর্য যত শক্তিশালী হবে ততই এদের জীবনে প্রভাব, প্রতিপত্তি ও অর্থের নিশ্চয়তা বাড়বে। এই রাশির শিক্ষার্থীরা যারা আইএএস বা আইপিএস বা পিসিএসের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, তাদের সূর্যদেবের আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য সকালে খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠা দরকার। বিশেষ করে সূর্য উদয়ের সময় এদের পড়াশোনা করা উচিত। যারা ইতিমধ্যেই চাকরিতে আছেন তাদের কখনওই অফিসের বস বা অফিসের ক্ষতি বা নিন্দা করা উচিত নয়। এতে সূর্যদেব কূপিত হতে পারেন। এরা বিশেষ করে যে ব্র্যান্ড বা প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করেন তা শক্তিশালী থাকলে এদের ওপরেও সূর্যের প্রভাব শক্তিশালী থাকবে।
চন্দ্র
তুলা রাশির জাতক-জাতিকাদের কেরিয়ারের শীর্ষে উঠতে চাইলে চন্দ্রের সাহায্য প্রয়োজন। এই সকল ব্যক্তিদের মানসিক এবং কর্মজীবনকেও নিয়ন্ত্রণ করে চন্দ্র। কর্মজীবনের দিকনির্দেশনাও চন্দের দ্বারাই হয়ে থাকে। এদের ক্ষেত্রে চন্দ্র যত শক্তিশালী হবে চাকরিতে তত তাড়াতাড়ি পদোন্নতি হবে। চন্দ্রকে খুশি করতে বা কেরিয়ারে সমৃদ্ধি আনতে সরাসরি চন্দ্র দেবতার কাছে প্রার্থনা করতে হবে। পূর্ণিমার দিনে চন্দ্র দেবতার পূজা ও দর্শন অবশ্য কর্তব্য। সম্ভব হলে দুধ ও জল মিশিয়ে অর্ঘ্য দান করা যেতে পারে। শিক্ষার্থীদের চাঁদের উপস্থিতিতে দুধ পান করতে হবে এবং যদি তারা দুধ পান করতে না পারে বা দুধ না পায়, তবে দুধ বা দুগ্ধজাত খাবার গ্রহণ করতে হবে।
মঙ্গল
কর্কট ও কুম্ভ রাশির জাতক-জাতিকাদের জন্য মঙ্গল হল কর্মজীবনের অধিপতি। এদের মঙ্গলকে খুশি করতে সর্বদা উদ্যমী হওয়া উচিত। এদের যে কোনও কাজে সক্রিয় থাকতে হবে, অলসতা একদমই করা উচিত নয়। অফিসের উচ্চস্থানীয়দের সম্মান করতে হবে। ভাইদের সঙ্গে ঝগড়া করা উচিত নয়। মঙ্গল হল শক্তির গ্রহ, তাই মঙ্গলকে ক্রোধের বদলে শক্তিতে রূপান্তর করতে হবে। এই রাশির মানুষদের আজীবন শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য যোগব্যায়াম করা উচিত।
বুধ
কন্যা ও ধনু রাশির জাতক-জাতিকাদের চাকরি ও ব্যবসার অধিপতি বুধ। বুধকে খুশি করতে পারলে জীবনে উন্নতি আসবে। গাছ লাগানো, ছায়াযুক্ত গাছের পরিচর্যা, তুলসী গাছ দান করা ইত্যাদি করা যেতে পারে। পথে কোনও শিল্পী বা নপুংসক ব্যক্তির দেখা পেলে তাদের সম্মান করতে হবে, প্রয়োজনে তাদের উপহার দিতে হবে।
বৃহস্পতি
দেবগুরু বৃহস্পতি মিথুন এবং মীন রাশির কর্মজীবনের অধিপতি এবং আরোহী। এদের কর্মজীবনে সমৃদ্ধি আনার জন্য দেবগুরু বৃহস্পতিকে খুশি করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে দেবগুরুকে খুশি করতে কিছু প্রতিকারের নিয়ম পালন করা যেতে পারে। যেমন, দরিদ্র শিশুকে স্কুলে ভর্তি করানো, তাকে খাতা, বই, অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য, পোশাক ইত্যাদি সরবরাহ করা যেতে পারে। এছাড়াও পূর্ণিমার দিনে সত্যনারায়ণ কথা শোনা এবং পুরোহিতকে হলুদ রঙের বস্ত্র দান করা যেতে পারে।
শুক্র
সিংহ রাশি এবং মকররাশির অধিপতি শুক্র। শুক্রকে প্রসন্ন করতে দেবী দুর্গার আরাধনা করা উচিত। দেবীর স্তোত্র বা জাগরণ গান গাওয়া ও শোনা উচিত। দেবীকে ওড়না ও শাড়ি ইত্যাদি প্রদান করতে হবে। শুক্র সৌন্দর্য ও সুগন্ধের সঙ্গে সম্পর্কিত, তাই সুন্দর পরিষ্কার পোশাক পরা উচিত বা সুন্দর গন্ধযুক্ত পারফিউম লাগানো উচিত।
শনি
শনি হলেন মেষ ও বৃষ রাশির কর্মের দেবতা। শনি দেবতা এদের চাকরি , গৃহ, যশ ইত্যাদি প্রদান করে। শনি দেবতার কৃপা পেতে জীবনে সুকর্ম করতে হবে, কেন না ইনি পুজোর চেয়েও বেশি কর্মে খুশি হন। অফিসে চতুর্থ শ্রেণীর কেউ থাকলে তাকে পুরস্কৃত করলে শনিদেব প্রসন্ন হয়।