Advertisement

Calcutta Killings & Gopal Patha: ৪৬-'র ‘গ্রেট কলকাতা কিলিং’ একাই রুখে দিয়েছিলেন গোপাল পাঁঠা, কে তিনি?

১৯৪৬ সালের ১৬ অগাস্ট মুসলিম লিগের ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে-র ডাকের পর শুরু হওয়া সাম্প্রদায়িক হিংসাকে ঘিরে কলকাতা নৃশংস হত্যাকাণ্ড দেখেছিল। কলকাতা কিলিং-এর ৭৮তম বার্ষিকীতে, ভারতমাতার সন্তান গোপাল মুখোপাধ্যায় যিনি গোপাল পাঁঠা নামেও পরিচিত, তাঁর সম্পর্কে জানব৷

‘গ্রেট কলকাতা কিলিং’ রুখেছিলেন গোপাল পাঁঠা?
Aajtak Bangla
  • কলকাতা,
  • 16 Aug 2023,
  • अपडेटेड 2:36 PM IST

আজ, ১৬ অগাস্ট, ভারতের ইতিহাসে একটি অন্ধকার অধ্যায়ে গ্রেট ক্যালকাটা কিলিংস-এর বার্ষিকী। ১৯৪৬  সালের এই দিনে, কলকাতা  ভয়ঙ্কর সাম্প্রদায়িক হিংসা দেখেছিল যা চার দিন স্থায়ী হয়েছিল এবং ১০,০০০ জন প্রাণ হারিয়েছিল। সাম্প্রদায়িক হিংসা এবং হত্যাকাণ্ড, কলকাতার ইতিহাসে এমন এক ঘটনা, ইতিহাসবিদ সুরঞ্জন দাস যাকে বাংলা 'ভাগের দাঙ্গা' সূচনা  বলে অভিহিত করেছেন।

 ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দের ১৬ অগাস্টের ভোরে পাকিস্তান তৈরির জন্য মুসলিম লিগ প্রত‍্যক্ষ সংগ্রামের ডাক দিলে শহর কলকাতা জুড়ে শুরু হয়ে যায় হিন্দু গণহত্যা। নেহেরু তখন দিল্লিতে অন্তর্বর্তীকালীন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রধানমন্ত্রী। আর অখণ্ড বাংলার শাসনের দায়িত্ব পেয়েছিল মুসলিম লিগ এবং মুখ‍্যমন্ত্রী ছিলেন সুরাবর্দি। সুরাবর্দির নির্দেশেই কলকাতায় শুরু হয় এই হিন্দু গণহত্যা। কলকাতায় ছিল মহড়া, আর পুরো উদ্দেশ্যটি কার্যকর করা হয় নোয়াখালীতে। ১৯৩১ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় বসবাসকারী মানুষের মধ্যে ৩১.৭০ শতাংশ ছিল বাইরের রাজ‍্য থেকে আসা এবং ৩০ শতাংশ ছিল কলকাতার বাইরের জেলাগুলি থেকে আসা লোকজন। ৬০ লক্ষ মানুষের বাস কলকাতায় ছিল ১২০০ জনের পুলিশ বাহিনী, এর মধ্যে মুসলমান ৬৩ জন। এছাড়া ডেপুটি কমিশনার ও একজন ও.সি ছিলেন মুসলমান। মুসলমান দাঙ্গাবাজদের বেশির ভাগ ছিল গ্রাম থেকে আসা লোক। এর মধ্যে ছিল মুসলমান শ্রমিক, কষাই, খালাসি, ছ‍্যাকড়া গাড়ির চালক। অন্যদিকে, মুসলিম লিগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার কাজে ভূমিকা ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের শিক্ষিত যুবক, ছাত্র সমাজ ও মধ্যবিত্তদের। ১৯৪৬-এর ১৬ আগস্টের সকালে মুসলিম লিগ যখন অ্যাকশান শুরু করে, তখনও পর্যন্ত কলকাতার হিন্দুরা বিষয়টা বুঝে উঠতে পারেনি। কারণ, ওই দিন বিকেলে কলকাতার তথাকথিত প্রগতিশীল “ধর্মনিরপেক্ষ” হিন্দুরা ময়দানে মনুমেন্টের তলায় মুসলিম লিগ ও ভারতের কম‍্যুনিষ্ট পার্টির যৌথ মিটিং শুনতে গিয়েছিল।

 ১৯৪৬ সালে মুসলিম লিগের নেতৃত্বে ‘গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং’ শুরু হলে রুখে দাঁড়ান গোপাল মুখোপাধ্যায় ও তাঁর ভারতীয় জাতীয় বাহিনী। মূলত একার হাতেই সেদিন কলকাতাকে বাঁচিয়েছিলেন তিনি। প্রবাদ হয়ে গিয়েছে গোপাল ছিলেন বলে টালা ট্যাঙ্ক আছে, শিয়ালদা স্টেশন আছে, আপনি, আমি রয়েছি। আর সেই প্রবাদের সঙ্গে জড়িয়ে আজও রয়েছে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উল্টোদিকে এক চিলতে মাংসের দোকান। প্রসঙ্গত ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট ‘ গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং’ রুখে ছিলেন যিনি সেই গোপাল মুখোপাধ্যায়েরও পাঁঠার মাংসের দোকান ছিল। যে কারণে গোপাল পাঁঠা নামেই তিনি পরিচিতি লাভ করেছিলেন। 

Advertisement

মুসলিম লিগের বাহিনীর হাত থেকে  হিন্দুদের বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলেন কলকাতা বৌবাজারের এই ডাকসাইটে হিন্দু যুবক কুস্তিগীর গোপাল মুখোপাধ্যায়। পরিচয়ে বিপ্লবী অনুকূলচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের ভাগ্নে। কলকাতা বৌবাজারের মলঙ্গা লেনে ১৯১৩ খ্রিস্টাব্দের ৭ ই সেপ্টেম্বর গোপালের জন্ম। সেবার  হিন্দুদের বাঁচাতে গোপাল জোগাড় করেছিলেন ২৪ পয়েন্ট বোরের রাইফেল এবং সেগুলি জোগাড় হলো ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কলকাতায় ঘাঁটি গেড়ে থাকা মার্কিন সৈন্যদের কাছ থেকে। এক বোতল হুইস্কি কিংবা সামান্য কিছু টাকা দিলেই তখন সেগুলো পাওয়া যেতো।  ছোট থেকেই গোপালের আদর্শ ছিলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু। “ভারতীয় জাতীয় বাহিনী” নামে একটি ছোট্ট সংগঠন পরিচালনা করতেন গোপাল। গোপালের সঙ্গে যোগ দিলেন যুগলকিশোর ঘোষ, কলকাতায় বসবাসকারী শিখ ও গোয়ালা সম্প্রদায়ের মানুষজন এবং এতে ছিল শ‍্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সমর্থন। গোপালের ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশি ছিলেন ডাক্তার বিধানচন্দ্র রায়। গোপাল পাঁঠার নেতৃত্বে মারমুখী হিন্দুরা পাল্টা মার দিতে শুরু করলো। মার খেতে লাগে মুসলিম লিগের দলবল। তখন সুরাবর্দি ইংরেজ সরকারকে অনুরোধ করে সেনা নামালেন।  গোপাল একদিনেই আটশো হিন্দু ও শিখ যুবককে সঙ্গে নিয়ে পাল্টা মার দিয়েছিলেন বলেই জানা যায়। শেষ জীবনে গোপাল মুখোপাধ্যায়  একজন সমাজকর্মী হিসেবে “ন‍্যাশনাল রিলিফ সেণ্টার ফর্ ডেসটিটিউটস্” নামে একটি দাতব্য প্রতিষ্ঠান চালাতেন। এলাকায় বিশাল আকারে শুরু করেছিলেন কালীপুজো। বহু বিশিষ্টজনেরা এই কালীপুজোয় এসেছেন। ২০০৫ খ্রিস্টাব্দের ১০ ফেব্রুয়ারি কলকাতার এই বীর সন্তান গোপাল পাঁঠার মৃত্যু হয়। ২০১৪ খ্রিস্টাব্দে “হিন্দু সংহতি” সংগঠনের তরফে গোপাল পাঁঠার শতবর্ষ স্মরণ অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়। মানতেই হবে কলকাতা শহরের বুকে হিন্দুদের নিরাপদ একটি ঠিকানা তৈরির কারিগর ছিলেন “গোপাল পাঁঠা।”

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement