প্রবাদ আছে, কলকাতায় নাকি খুঁজলে 'বাঘের দুধ'ও মেলে! বড় বিচিত্র এই শহর। এই যেমন ধরুন, রসগোল্লা (Rosogolla)। নামেই গোল্লা। অর্থাত্ গোল। নবীন ময়রার অমর আবিষ্কার। এহেন রসগোল্লা হয়ে গেল চ্যাপ্টা (Chapta Rosogolla)। মুখে দিলেই জিভের পেল্লায় আরাম। ভূমিকা ছেড়ে মোদ্দা কথায় আসি। তো এই চ্যাপ্টা রসগোল্লা কলকাতার (Kolkata Rosogolla) কোথায় মেলে? এর ইতিহাসও বেশ প্রাচীন। তাহলে আসুন চ্যাপ্টা রসগোল্লার অভিযানটা সেরে ফেলা যাক।
কলকাতার কালীঘাট মন্দিরের (Kalighat Temple) অদূরেই দেবনারায়ণ লেনে রয়েছে এই দোকান। না, এই দোকানের কোনও পোশাকি নাম নেই, নেই কোনও সাইনবোর্ডও। এই দোকান পরিচিত প্রতিষ্ঠাতার নামেই। সেই কারণেই এটি হারান মাঝির মিষ্টির দোকান (Haran Majhi Sweet Shop) বলেই পরিচিত লোকমুখে। স্থানীয়রা অবশ্য হারান ময়রার মিষ্টির দোকান বলেই ডাকে। এই দোকানেই পাওয়া যায় চ্যাপ্টা রসগোল্লা।
আসলে আমরা রসগোল্লা বলতে যেটা বুঝি সেটার আকার আলাদা। সেই মিষ্টির আসল নাম ক্ষীরমোহন, তবে রসগোল্লা যেভাবে তৈরি করা হয় ঠিক সেভাবেই এই মিষ্টি তৈরি হয়। তৈরির পাকে কিছু পার্থক্য থাকলেও রসগোল্লা যেভবে তৈরি করা হয়, ঠিক সেভাবেই ক্ষীরমোহনকে রসে ফোটানো হয়। পার্থক্য বলতে শুধু আকারের। গোল না করে চ্যাপ্টা করা হয়। সেই কারণেই এই মিষ্টি চ্যাপ্টা রসগোল্লা নামেই বিক্রি হয়।
১৫০ বছরেরও বেশি পুরনো এই হারান মাঝির মিষ্টির (Haran Majhi Sweet) দোকান। হাওড়ার দেউলটির বাসিন্দা হারান চন্দ্র মাঝি এই দোকান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কালীঘাট মন্দিরের পেছনে। সেই থেকেই এই দোকান চলে আসছে চার পুরুষ ধরে। বর্তমানে দোকানের হাল ধরেছেন বুবাই মাঝি ও রাজু মাঝি। বুবাই জানালেন যে এই ক্ষীরমোহন বা চ্যাপ্টা রসগোল্লা রোজ ২০০ পিস করে বিক্রি হয়। অনেক দূর থেকে লোকজন এই মিষ্টি কিনতে আসেন। অনেকে আবার এই মিষ্টি দিয়ে কালীঘাট মন্দিরে পুজো দেন।
হারান মাঝির দোকানের আরেকটি বিশেষত্ব আছে। এই দোকান থেকেই কালীঘাটের মায়ের ভোগের জন্য় মিষ্টি যায়। অন্য সবকিছুর সঙ্গে এই দোকানের মিষ্টিও মা কালীকে নিবেদন করা হয় সন্ধ্যারতির সময়। বলা হয়, হারান মাঝির দোকানের মিষ্টি খেয়েই মা কালী শয়নে যান। চার পুরুষ ধরে ব্যবসা চললেও এই দোকানের অন্দরসজ্জা পুরনো আমলের। ঝকঝকে তকতকে ব্যাপার নেই। কলকাতার বহু মানুষ তাই এই দোকানের খোঁজ জানেন না। সঙ্গে জানেন না এই দোকানের মাহাত্মের কথাও।