ফেলুদার কোল্ট ৩২ রিভলভারের কথা মনে আছে নিশ্চই! ফেলুদা সিনেমার জন্য ওই পিস্তল সংগ্রহ করা হয়েছিল কলকাতারই একটি পুরোনো দোকান থেকে। শুধু তাই নয়, শতরঞ্জ কি খিলাড়ি ছবির জন্য তলোয়ার খুঁজছিলেন সত্যজিৎ রায়। কিন্তু বহু শহরে ঘুরেও পছন্দসই তলোয়ার পাচ্ছিলেন না তিনি। একদিন এলেন ডালহৌসির ‘নরসিংহচন্দ্র দাঁ অ্যান্ড কোং, গান অ্যান্ড রাইফেল মেকার্স’–এর দোকানে। চোখে পড়ল শো–কেসে রাখা বেলজিয়ামের তৈরি ‘মাদার অফ পার্লে’র দিকে (তলোয়ারটির নাম)। গোটা তলোয়ারে সোনার মিনে করা। দেখেই বলেন, ‘এটাই তো আমি গোটা জয়পুরে খুঁজে বেড়াচ্ছিলাম।’ সেই তলোয়ার এখনও দোকানের শো–কেসে যত্নে সাজানো রয়েছে।’ বলছিলেন, সুদীপ দাঁ। তিনি দোকানের এখনকার কর্ণধারদের মধ্যে অন্যতম।
১৮৬ বছরের পুরোনো এই দোকানে এখনও থরে থরে সাজানো রয়েছে বন্দুক, রাইফেল। সুদীপবাবু বলেছেন, ‘তখন আমাদের দোকানের ম্যানেজার হীরেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়। মানিকবাবু দোকানে এসে তলোয়ার খুঁজছিলেন। কথায় কথায় বেরিয়ে এল, ওঁরা দুজন প্রেসিডেন্সির সহপাঠী। জমে উঠল গল্প। তারপর বিভিন্ন প্রয়োজনে ক’য়েকবার এই দোকানে এসেছিলেন সত্যজিৎ রায়।’
রয়্যাল বেঙ্গল রহস্য ছবির জন্য ফেলুদার প্রিয় আগ্নেয়াস্ত্র কোল্ট রিভলবারের জন্য এসেছিলেন সন্দীপ রায়। ওই ছবিতে ফেলুদার চরিত্রে ছিলেন সব্যসাচী চক্রবর্তী। সব্যসাচী ওরফে বেণুদা নিজেও এসে রিভলবারের খুঁটিনাটি জেনে গিয়েছিলেন। সুদীপবাবু বলছিলেন, ‘শুধু ফেলুদা নন, এসেছিলেন ব্যোমকেশ, আবির চট্টোপাধ্যায়ও।’ এছাড়াও বিভিন্ন ক্ষেত্রে বহু নামজাদা মানুষ এখান থেকে পিস্তল, রিভলবার কিনে নিয়ে গেছেন। সেগুলো মেরামতের জন্য তাঁরা এখনও আসেন অতি পরিচিত এনসি দাঁ-এর বন্দুকের দোকানে।
শতাব্দীপ্রাচীন দোকান জুড়ে রয়েছে অজস্র রাইফেল, পিস্তল। পাশাপাশি রয়েছে বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র। রাজরাজড়াদের আমলের ঢাল তরোয়াল, বর্শা। রয়েছে বহু অ্যান্টিক বন্দুক। কয়েকটি ষোড়শ শতকের। যেগুলি এখন অমূল্য। সেসবের পাশপাশি সাজানো রয়েছে সত্যজিৎ, ফেলুদার স্মৃতিমাখা তলোয়ার, কোল্ট রিভলবার।
বন্দুকের বিষয়ে সুদীপবাবু জানালেন, ‘বন্দুকের চাহিদা এখনও আছে। রাজ্যের ও দেশের বিভিন্ন প্রান্তে এখন অনেক নতুন দোকানও হচ্ছে। সেখানেও আমরা বন্দুক সরবরাহ করি।’ তিনি আরও জানান, বিভিন্ন ব্যবসায়ী, বিখ্যাত ব্যক্তি, রাজনৈতিক নেতাদের সুরক্ষার জন্য তৈরি হওয়া বিভিন্ন সিকিউরিটি এজেন্সি বা ওই রকম সংস্থার প্রয়োজনীয় বন্দুকও যায় এখান থেকে। পাশাপাশি রয়েছে নানা রকম এয়ারগান বিক্রি। এই বন্দুক কিনতে লাইসেন্স লাগে না, দামও কম। বন্দুক আসে মূলত বিহারের মুঙ্গের, জম্মু-কাশ্মীরের খাটুয়া ও উত্তরপ্রদেশ থেকে।
আরও পড়ুন-Satyajit Ray: ফেলুদা নিয়ে মাত্র ২টো সিনেমা, আর কোনও সিনেমা কেন বানাননি সত্যজিৎ রায় ?