Writer's Building, Interesting Facts: পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এক সময়ের মুখ্য সচিবালয় ভবন, মহাকরণ এখন প্রায় বন্ধ। দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে বাংলার রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের সাক্ষী এই রাইটার্স বিল্ডিং। একাধিক রাজনৈতিক পালাবদলের সাক্ষীও এই ঐতিহাসিক ভবনটি।
তবে ২০১১-এ তৃণমূল সরকার এ রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর সরকারি দফতর বা প্রশাসনিক প্রায় সমস্ত কাজই এখন পরিচালিত হয় নবান্ন থেকে। ফলে প্রায় আড়াইশো বছরের প্রাচীন রাইটার্স বিল্ডিং ঘিরে ব্যস্ততা এখন আর আগের মতো নেই। কিছু সরকারি কাজ এখনও এখানে চলছে।
এককালে দেশের রাজধানী কলকাতার বিবাদীবাগ অঞ্চলে লালদিঘির উত্তর দিকে এই রাইটার্স বিল্ডিং অবস্থিত। কিন্তু জানেন কি কেন কলকাতার এই ঐতিহাসিক ভবনের নাম রাইটার্স বিল্ডিং হল? এর পিছনে একটা অদ্ভুত কাহিনি রয়েছে যা হয়তো অনেকেরই জানা নেই। চলুন জেনে নে্ওয়া যাক রাইটার্স বিল্ডিং নামকরণের ইতিহাস...
রাইটার্স বিল্ডিং তৈরির ইতিহাস
আজ থেকে প্রায় আড়াইশো বছর (২৫৩ বছর আগে) আগে, ১৭৭০ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তার ইউরোপীয় কেরানিদের বসবাসের জন্য এই রাইটার্স বিল্ডিংসের নকশা তৈরি করে। এই নকশা বানিয়েছিলেন টমাস লিয়ন্স (Thomas Lyons)।
১৭৭৬ সালে টমাস লিয়ন্স ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ইউরোপীয় কেরানিদের থাকার জন্য মোট ১৭ বিঘা জমিতে উনিশটি পৃথক অ্যাপার্টমেন্ট তৈরি করেন। এই অ্যাপার্টমেন্টগুলি অনেকটা সারিবদ্ধ দোকানের মতো দেখতে ছিল। ১৭৭৭ সালে এই অ্যাপার্টমেন্টগুলি ইউরোপীয় কেরানিদের থাকার জন্য খুলে দেওয়া হয়। ১৮০০ সাল পর্যন্ত এই অ্যাপার্টমেন্টগুলি ইউরোপীয় কেরানিদের থাকার জন্যই ব্যবহৃত হতো। এর পরে এগুলিকে একত্রে প্রশিসনিক ভবন হিসাবে গড়ে তোলার কথা ভাবা হয়।
১৮৮৯ সালে গথিক স্থাপত্যের আদলে নির্মিত হয় রাইটার্স বিল্ডিংসের পরবর্তী ভবনটি। এই ভবনের সামনের অংশটি করিন্থীয় স্থাপত্যের একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। রাইটার্স বিল্ডিং ছিল সেকালের কলকাতার প্রথম তিনতলা ভবন।
রাইটার্স বিল্ডিং নামকরণের ইতিহাস
তৎকালীন ব্রিটিশ শাসিত ভারত সরকারের প্রশিসনিক ভবনের নাম ‘রাইটার্স বিল্ডিং’ কী করে হল? এর পিছনে একটা মজার গল্প রয়েছে। সে সময় সমস্ত সরকারি নথিপত্র, দলিল খাগের কলমে হাতে লিখেই তৈরি করা হতো। এই সমস্ত সরকারি নথিপত্র, দলিল লিখতেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাহেব কেরানিরা। প্রতিদিন প্রায় শ’খানেক সরকারি দলিল, নথিপত্রের প্রতিলিপিও হাতে লিখেই তৈরি করতেন এই সব ‘ক্লার্ক’ সাহেবরা। সারা দিন ধরে দিস্তা পর দিস্তা সরকারি দলিল-নথিপত্র হাতে লিখে তৈরি করাই ছিল এঁদের একমাত্র কাজ। এই ইউরোপীয় কেরানিদের সেকালে ‘রাইটার’ বলা হতো। এই ‘রাইটার’-দের ভবনের নাম পরবর্তিতে হয়ে যায় ‘রাইটার্স বিল্ডিং’ (Writers' Building)।
এখন রাইটার্স বিল্ডিংয়ে আগের মতো ব্যস্ততা আর নেই। রাজ্য সরকারি মন্ত্রীদের কক্ষগুলিও ফাঁকা পড়ে আছে। শতাব্দী প্রাচীন ভবনের আনাচে কানাচে পায়রা-প্যাঁচার গুনগুনানি শোনা যায় মাঝে মাঝে। রাইটার্স বিল্ডিংয়ে করিডোরে পায়ের শব্দ প্রতিধ্বনিত হয়ে কানে কানে যেন বলতে চায়, ‘চুপ, শব্দ করো না। এখানে ইতিহাস ঘুমোচ্ছে...’