ICC World Cup 2023 India VS Bangladesh: ১৯ অক্টোবর ২০২৩, পুনের মহারাষ্ট্র ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন স্টেডিয়ামে ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে ওয়ার্ল্ড কাপ ২০২৩ এর ম্যাচ নম্বর ১৭ চলছিল। ভারতীয় দল জেতার একেবারে দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছিল। বিরাট কোহলি নিজের সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৩ রান দূরে ছিলেন। তাঁর সেঞ্চুরির জন্য উইকেটকিপার ব্যাটার কেএল রাহুল লাগাতার কোহলিকে স্ট্রাইক দিচ্ছিলেন এবং সিঙ্গেলস নিতে অস্বীকার করেছিলেন। যাতে কোহলি সেঞ্চুরি পূরণ করতে পারেন। বাংলাদেশ এবং ভারতীয় ইনিংসের ৪২ তম ওভারে বাঁহাতি অর্থোডক্স স্পিনার নাসুম আহমেদ বল করতে আসেন। তিনি প্রথম বলটাই লেগ সাইডের বাইরে করেন। কিন্তু আম্পায়ার রিচার্ড কেটেলবরো ওয়াইড দেননি। কিছু ফ্যানেদের মনে হতে শুরু করে যে, বলটি ওয়াইড দেওয়া উচিত ছিল। আম্পায়ার রিচার্ড পক্ষপাত করেছেন এবং বিরাট কোহলিকে সেঞ্চুরি করার সুযোগ করে দেন। এই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় উঠে যায়।
বিরাট নাসুমকে নেগেটিভ লাইনে বোলিং করতে দেখে কিছু মুহূর্তের জন্য সারপ্রাইজ হয়ে যান। তার এমন মনে হতে থাকে যে আম্পায়ার রিচার্ড ওয়াইড দিয়ে দেবেন এবং তিনি সেঞ্চুরি থেকে দূরেই থেকে যাবেন। কিন্তু রিচার্ড কোনও সিগন্যাল দেননি। এরপর বিরাট পরে নাসিমকে স্টেপ আউট করে ছক্কা মারেন এবং ৪৮ তম সেঞ্চুরি পূরণ করেন।
এরপরে বিরাট নিজের স্টাইলে ব্যাট ঘোরান এবং প্যাভিলিয়ন ফিরে আসেন। এটি ভারতের এই টুর্নামেন্টে লাগাতার চতুর্থ জয়। যদিও এই ওয়াইড বল নির্ণয়ের উপর সোশ্যাল মিডিয়ায় ফ্যানেদের মহাভারত শুরু হয়ে গিয়েছে। একাধিক লোকেরা মনে করছেন যে এটি পরিস্কার ওয়াইড ছিল।
হোয়াইট বল কেন দেওয়া হয়নি?
শেষমেশ কোন পরিস্থিতিতে একজন আম্পায়ার ওয়াইড বল না দিতে পারে এই বিষয়ে আমরা ক্রিকেট নিয়ম তৈরি করা সংস্থা মেরিলিবোন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি)-র নিয়ম দেখি। এমসিসি ল-এর ২২.৪ ক্লজের নিয়ম অনুসারে ওয়াইড বল নিম্নলিখিত শর্তে না দেওয়া যেতে পারে। ২০২২ঃএ নিয়মে এই বদল আনা হয়েছে।
যদি ব্যাটার বল করার সময় মুভ করতে থাকে, তাহলে ওয়াইড বল নাও দিতে পারেন আম্পায়ার। অরিজিনাল স্টান্স-এর ওপর দিয়ে বল গেলে সেই বলটি কে ওয়াইড দেওয়া হবে না। সেখানে যদি ব্যাটার এর খুব কাছ দিয়ে বল যায় যদি ব্যাটারকে বল প্রায় ছুঁয়ে বেরিয়ে যায়, তাহলেও আম্পায়ার কোনও ডেলিভারি ওয়াইড বলে মনে করবেন না।
এখানে ক্রিকেটে নিয়মে বলা রয়েছে যদি ব্যাটসম্যান নড়াচড়া করতে থাকে এবং সেই সময়ে তার কাছ দিয়ে বল চলে যায় তাহলে আম্পায়ার কোনও ডেলিভারি ওয়াইড বলে মনে করবেন না। যদিও ম্যাচের সময়ে প্রাক্তন উইকেটকিপার ব্যাটার এবং কমেন্ট্রি করতে থাকা দ্বীপ দাশগুপ্ত আলটপকা মন্তব্য করে ফেলেন যে কেএল রাহুল এবং আম্পায়ারের সামান্য সাহায্যে বিরাট কোহলি নিজের সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন। এরপরেই অনেকের মনে হতে থাকে যে এটি বোধহয় বিরাট কোহলিকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। আসলে ব্যাটারের অরিজিনাল স্টান্স বা পজিশন দেখতে হয়। মুভ করে বিরাট এগিয়ে যান এবং বলটি বিরাটের অরিজিনাল স্টান্সের উপর দিয়েই যায়। সে কারণে দেওয়া হয়নি।
কে এই রিচার্ড কেটেলবরো?
অত্যন্ত জনপ্রিয় আম্পায়ার তিনি। ইংল্যান্ডের জন্য ফাস্ট ক্লাস ক্রিকেটও খেলেছেন। আম্পায়ারিং কেরিয়ারের কথা বলতে গেলে তিনি ১১২ টি টেস্ট ম্যাচের টিভি আম্পায়ার এবং মাঠের আম্পায়ারিং এর ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি ১৫৫ ওয়ানডে ম্যাচে আম্পায়ারিং এবং ভূমিকা পালন করেন এবং ৫১ টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও তিনি আম্পায়ারিং করেছেন।
ক্রিকেট কেরিয়ার
এছাড়া তিনি ৩৩ টি ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচে ১২৫৮ এবং ২১ টি লিস্ট এ ম্যাচে ২৯০ রান করেছেন। সেখানে তিনি বাঁ হাতি টপ অর্ডার ব্যাটার এবং পার্ট টাইম বোলার ছিলেন। ২০০৬ সালে তিনি আম্পায়ারিং তালিকা যুক্ত হন। তিনি ২০০৯ সালে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে ইংল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মধ্যে টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক অভিষেক ঘটান।
রিচার্ডের আইসিসি রেকর্ড
সেখানে ২০১১ সালে ভারতে আয়োজিত ভারতে ১৮ টি আম্পায়ারিং প্যানেলের মধ্যে শামিল হন সেখানে ওই বছরই আইসিসির এলিট প্যানেলের তিনি অন্তর্ভুক্ত হন। এরপর তিনি আইসিসির এলিট প্যানেলেও অন্তর্ভুক্ত হন। তখন তার বয়স ছিল ৩৮ বছর এবং প্যানেলের সবচেয়ে কম বয়সী আম্পায়ার তিনি ছিলেন। এর দু'বছর পর ২০১৩ সালে এলিট প্যানেলে শামিল করা হয় এবং তাকে আইসিসির আম্পায়ার অব দ্যা ইয়ার পুরস্কারও দেওয়া হয়।
ভারতের জন্য় অপয়া?
আইসিসি ইভেন্টে যখন ভারতের ম্যাচে ফিল্ড আম্পায়ারিং করেন তখন টিম ইন্ডিয়া সঙ্গে কিছু না কিছু দুর্ঘটনা ঘটে, তা সে টি-টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপ ২০২১ হোক কিংবা ২০১৯ এ নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারতের সেমিফাইনাল। যেখানে খেলিয়েছেন ভারতের জন্য আনলাকি প্রমাণিত হয়েছেন। এর মধ্যে ২০১৪ সালে টি-টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপে ২০১৫ ওয়ার্ল্ডকাপে ২০১৬ টি টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপে, ২০১৬-১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নকআউট মোকাবিলায় তিনি ভারতের ম্যাচে আম্পায়ারিং করেছেন।