কোনও দলের হারের পর কোচ, ক্যাপ্টেন বরখাস্ত হওয়া কিংবা খেলোয়াড়কে ছেঁটে ফেলার ঘটনা আকছার ঘটে। কিন্তু শ্রীলঙ্কা যা করল, তাতে তোলপাড় গোটা বিশ্ব। এমনিতেই চলতি বিশ্বকাপ ক্রিকেটে শ্রীলঙ্কার অবস্থা শোচনীয়। এর মধ্যে ভারতের সঙ্গে মাত্র ৫৫ রানে শেষ হয়েছে শ্রীলঙ্কান ইনিংস। এর আগে এশিয়া কাপের ফাইনালেও ৫০ রানে অলআউট হয়েছিল লঙ্কান ব্যাটাররা। সেটিকে অঘটন বলে কাটিয়ে দেওয়া গেলেও বিশ্বকাপের ব্যর্থতা আর হজম করতে পারল না শ্রীলঙ্কা সরকার। তাদের রোষে কোনও ক্রিকেটার বা কোচ নয়, শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট বোর্ড। শ্রীলঙ্কার ক্রীড়ামন্ত্রী, রোশন রণসিংঘে, দলের বিশ্বকাপ পারফরম্যান্সের জেরে জাতীয় ক্রিকেট বোর্ডকেই বরখাস্ত করে দিলেন। বিশেষ করে ভারতের কাছে তাদের সাম্প্রতিক পরাজয় তাঁদের কাছে সম্মানহানি বলে মনে হয়েছে।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে ক্রীড়ামন্ত্রী রোশন রণসিংঘে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের কঠোর সমালোচনা করেছেন। এটিকে অবিশ্বাস্য এবং দুর্নীতির দ্বারা কলঙ্কিত বলে অভিযোগ করেছেন। তিনি অবিলম্বে বোর্ড সদস্যদের পদত্যাগের আহ্বান জানান। এরপরে, শ্রীলঙ্কা ক্রিকেটের সচিব, মোহন ডি সিলভা, যিনি সংস্থার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদে ছিলেন, শনিবার বোর্ডের সদর দফতরের বাইরে ভক্তদের বিক্ষোভের মধ্যে পদত্যাগ করেছেন।
১৯৯৬ সালে শ্রীলঙ্কা ক্রিকেট দলকে তাদের একমাত্র বিশ্বকাপ জেতেনো ক্য়াপ্টেন অর্জুনা রণতুঙ্গাকে বোর্ডের অন্তর্বর্তী চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ করা হয়েছে। যেমন রণসিংহে বলেছেন, নবগঠিত সাত সদস্যের কমিটিতে সুপ্রিম কোর্টের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এবং বোর্ডের প্রাক্তন সভাপতিও রয়েছেন।
৭ ম্যাচে ৪ পয়েন্ট নিয়ে বর্তমানে টেবিলের সপ্তম স্থানে রয়েছে শ্রীলঙ্কা। তাদের দুটি জয় এবং পাঁচটি পরাজয় নিয়ে সেমির দৌড় থেকে অনেকটাই দূরে। শ্রীলঙ্কার জন্য কাঙ্ক্ষিত চতুর্থ অবস্থানে একটি স্থান নিশ্চিত করতে, তাদের কেবল তাদের বাকি দুটি ম্যাচ জিততে হবে তাই নয়, অন্যান্যদের হার-জিতের উপর নির্ভরও করে থাকতে হবে। যা এই পরিস্থিতিতে কার্যত অসম্ভব।
শেষ ম্যাচে ভারতকে টস জিতে ব্যাট করতে পাঠায় শ্রীলঙ্কা যেখানে ভারত ৮ উইকেটে ৩৫৭ রান করে। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে মাঠে আশা করা গিয়েছিল লড়াই হবে। জেতা কঠিন হলেও শ্রীলঙ্কা লড়বে বলে সবাই আশা করেছিলেন। ভারতের শক্তিশালী বোলিং ফায়ারপাওয়ারে শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কাকে মাত্র ৫৫ রানে গুটিয়ে দেয় ভারতীয় বোলাররা।
প্রাথমিক ইনিংসে, ভারতের স্কোরবোর্ড ব্যাটিং দক্ষতার দুর্দান্ত প্রদর্শনী দেখায়। শুভমান গিল, বিরাট কোহলি এবং শ্রেয়াস আইয়ার সকলেই মোট সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। গিল ৯২ বলে ৯২ রান, কোহলি ৯৪ বলে ৮৮ রান করেন। আইয়ারের বিস্ফোরক ইনিংসে মাত্র ৫৬ বলে ৮২ রান সংগ্রহ করেন।
দ্বিতীয় ইনিংসে, মহম্মদ শামি উজ্জ্বল হয়ে ওঠেন, ওডিআই বিশ্বকাপে তার তৃতীয় পাঁচ ৫ উইকেট হল লাভ করেন। ভারতের দেওয়া ৩৫৮ রানের চ্যালেঞ্জিং টার্গেট তাড়া করতে গিয়ে লঙ্কান দল লড়াইয়ের বিন্দুমাত্র ফিরিয়ে দতে পারেনি। বুমরার প্রথন বলেই আউট হওয়ার পর সেই ধাক্কা থেকে বের হতে পারেনি সিংহলিজরা। মোহাম্মদ সিরাজও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন, ৩ টি উইকেট নেন তিনি। জসপ্রিত বুমরাহ এবং রবীন্দ্র জাদেজা প্রত্যেকে একটি করে উইকেট নিয়ে অবদান রেখেছিলেন। ভারতীয় বোলারদের এই সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফলে শ্রীলঙ্কা মাত্র ১৯.৪ ওভারে মাত্র ৫৫ রানে গুটিয়ে যায়।