ভারতীয় ক্রিকেট দলের তরুণ ব্যাটসম্যান ইশান কিষান আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কেরিয়ারের শুরুটা বেশ ভালোই করেছেন। অভিষেক ম্যাচেই তিনি হাফসেঞ্চুরি করে ভারতীয় ক্রিকেট দলের জয়ের নেপথ্যে নায়ক হয়ে উঠেছেন। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টি-২০ সিরিজ়ের দ্বিতীয় ম্যাচে তিনি ৩২ বলে ৫৬ রান করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে উঠে এসেছেন। তবে ইশানের কাছে এই ভারতীয় ক্রিকেট দলে খেলার রাস্তাটা খুব একটা সহজ ছিল না। এমন একটা সময় গেছে, যখন তিনি রাতে খাবার পর্যন্ত খাননি। এর পিছনের গল্পটা তাঁর বাবা নিজেই বললেন।
(ছবি - ইনস্টাগ্রাম)
ইশান আজ ক্রিকেটের যে শৃঙ্গ স্পর্শ করেছেন, সেজন্য তাঁকে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়েছে। ছোটোবেলাতেই তাঁর পরিবার ইশানকে পটনা থেকে রাঁচি পাঠিয়ে দেয়, যাতে ক্রিকেটকেই তিনি নিজের কেরিয়ার হিসেবে বেছে নিতে পারেন।
ইশানকে এই পরামর্শ দেওয়া হয় যে যদি তিনি ক্রিকেটকেই নিজের কেরিয়ার হিসেবে বেছে নিয়ে জীবনে এগিয়ে যেতে চান, তাহলে পটনা থেকে রাঁচি যেতে হবে। সেকারণে মাত্র ১২ বছর বয়সে ইশানের পরিবার তাঁকে প্রতিবেশী রাজ্য ঝাড়খণ্ডে পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সেখানে ইশান স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া লিমিটেডের (SAIL) হয়ে জেলা ক্রিকেট টুর্নামেন্ট খেলতে শুরু করেন।
(ছবি - ইনস্টাগ্রাম)
ইশানের বাবা প্রণব কুমার পাণ্ডে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, "ইশানের কোচ এবং প্রত্যেকে এই পরামর্শ দিয়েছিল যে যদি ও ক্রিকেটের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ অর্জন করতে চায়, তাহলে ওর রাঁচি যাওয়া উচিত।" তিনি আরও যোগ করেছেন, "ওই সময় ওর মা খুব চিন্তিত ছিল। কিন্তু, অনেক ভাবনাচিন্তার পর আমরা ওকে প্রতিবেশী রাজ্যে পাঠানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি। মনের ভিতরে সামান্য ভয় ছিল ঠিকই, কিন্তু ইশান রাঁচি যাবে বলে জেদ ধরে বসেছিল। ওখানের চারজন সিনিয়র ক্রিকেটারের সঙ্গে ইশানকে ঘর ভাগাভাগি করে নিতে হয়েছিল। ঘরের মধ্যে ওর কাজ ছিল পরিষ্কার করা এবং জল ভরে রাখা। কারণ রান্না ও করতে পারত না।"
(ছবি - ইনস্টাগ্রাম)
ইশানের বাবার এই কথা বলার অর্থ হল, যখনই তাঁর সিনিয়র রুমমেট রাতেরবেলা খেলতে চলে যেতেন, ইশান কিছু না খেয়েই শুয়ে পড়তেন। তিনি ব্যাপারটা আরও খোলসা করে বললেন, "ইশানের সিনিয়ররা রাতে ক্রিকেট খেলতে যেত। আর এমন পরিস্থিতিতে ও রাতে কিছু না খেয়েই শুয়ে পড়ত। আমাদের কখনও ও নিজের মুখে এই কথাটা জানায়নি।"
তিনি আরও যোগ করেন, "এইভাবে প্রায় বছর দুয়েক কেটেছিল। ও চিপস, কুরকুরের মতো খাবার খেয়ে রাতে শুয়ে পড়ত। যখন আমাদের ফোন করত, তখন মিথ্যে কথা বলত যে ওর খাওয়া হয়ে গেছে। এই খবর আমাদের কানে আসতেই আমরা ঠিক করি যে রাঁচিতে একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে আমরা থাকব।" এরপর ইশানের মা সুচিত্রা নিজের ছেলের সঙ্গে নতুন বাড়িতে চলে যান।
অবশেষে ইশানের এই পরিশ্রম কাজে এল। ২০১৬ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ ভারতীয় ক্রিকেট দলকে নেতৃত্ব দেন তিনি। এই ব্যাচ থেকেই উঠে এসেছেন ঋষভ পান্থ, ওয়াশিংটন সুন্দর এবং খলিল আহমেদের মতো ক্রিকেটাররা। আর সেই প্রথমবার ইশানের বাবা বুঝতে পারেন তাঁর ছেলের মধ্যে কতটা প্রতিভা রয়েছে।
যদিও বিশ্বকাপের ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ়ের কাছে ভারতকে হারতে হয়েছিল। ২২ বছর বয়সি ইশান ঘরোয়া ক্রিকেটে ঝাড়খণ্ড এবং আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্স দলের হয়ে খেলেন। ইতিপূর্বে গুজরাট লায়ন্স দলের হয়েও তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন। ইশানের বাবা স্বীকার করেছেন যে পড়াশুনোয় তাঁর ছেলের একেবারেই মনোযোগ ছিল না। তাঁর মতে, ইশান যদি ক্রিকেটে সাফল্য নাও পেত তাহলে সরকারি কোনও চাকরিতে ও ঢুকে যেত।
প্রথম ম্যাচে হাফসেঞ্চুরি করলেও আজ মাত্র ৪ রানে ইশান আউট হয়ে গেলেন। ৫.২ ওভারে ক্রিস জর্ডনের বাউন্সারে কুপোকাত হলেন ইশান কিষান। ইংল্যান্ডের ফাস্ট বোলিং এককথায় অসাধারণ হচ্ছে। অফসাইডের সামান্য বাইরে পড়েছিল বলটা। সেই বলেই ব্যাট চালাতে গিয়েছিলেন ইশান। বল তাঁর ব্যাটের কানা লেগে সোজা উইকেটরক্ষক জস বাটলারের দস্তানায় গিয়ে জমা পড়ে। আজ ৯ বল খেলে মাত্র চারটে রান করলেন ইশান কিষান।