খেলোয়াড়দের জীবন বদলে দেয় আইপিএল (IPL)। আইপিএল এত বছর ধরে শত শত খেলোয়াড়কে কোটিপতি করেছে। এবার সেই তালিকায় যোগ দিলেন বাংলার ফাস্ট বোলার মুকেশ কুমারও (Mukesh Kumar)। মুকেশ কুমারকে দিল্লি ক্যাপিটালস (Delhi Capitals) আইপিএল ২০২৩-এর মিনি নিলামে ৫.৫০ কোটি টাকায় কিনেছিল। মুকেশ কুমারের বেস প্রাইস ছিল ২০ লক্ষ টাকা। সেখান থেকে তিনি ২৭ গুণ বেশি টাকা পেয়েছেন।
মুকেশের ক্রিকেটার হয়ে ওঠা সহজ ছিল না
বিহারের গোপালগঞ্জ জেলার বাসিন্দা মুকেশ কুমারের আইপিএল এবং টিম ইন্ডিয়া (Team India) পর্যন্ত সফরটা বেশ কঠিন ছিল। মুকেশ কুমার তাঁর বাবাকে তার ট্যাক্সির ব্যবসায় সাহায্য করার জন্য ২০১২ সালে কলকাতায় চলে আসেন। কিন্তু সেখানে বাবাকে সাহায্য করার পাশাপাশি তিনি স্থানীয় ম্যাচও খেলতে শুরু করেন, যেখানে তিনি ৪০০-৫০০ টাকা পারিশ্রমিক পেতেন। মুকেশ কুমারের বাবা প্রয়াত হয়েছেন। তিনি থাকলে ছেলের এই সাফল্য তাঁকে দারুণ খুশি করত।
আরও পড়ুন: IPL-র নিলামে কাব্য মারানের 'দিদিগিরি', তা-ও ট্রোলড কেন?
ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল (CAB) একটি 'ভিশন 2020 প্রোগ্রাম' চালু করছিল। সেখান থেকেই তাঁর উঠে আসা। বাংলার ফাস্ট বোলার এবং বোলিং কোচ রণদেব বসুর তত্ত্বাবধানে প্রতিভাবান বোলারদের তুলে আনার কাজ চালু হয়। এই ট্রায়ালগুলি ভিভিএস লক্ষ্মণ, ওয়াকার ইউনুস এবং মুত্তিয়া মুরালিধরনের নির্দেশনায় পরিচালিত হয়। এই ট্রায়ালের এক বছরের মধ্যে মুকেশ কুমারকে বাংলা দলের জন্য নির্বাচিত করা হয়। তাঁর ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের কারণে, মুকেশ এই বছর ভারত-এ দলে নির্বাচিত হন, যেখানে তিনি দুর্দান্ত বল করেন। নিউজিল্যান্ড-এ দলের বিরুদ্ধে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন। এক মাস পরে, মুকেশ দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ওডিআই সিরিজের জন্য টিম ইন্ডিয়ায় নির্বাচিত করা হয়। মুকেশ কুমার আইপিএলে একটিও ম্যাচ না খেলে এই সাফল্য অর্জন করেছিলেন, যা প্রশংসনীয়।
এক সাক্ষাৎকারে মুকেশ কুমার বলেছিলেন, 'গোপালগঞ্জে, যেখানে আমার বাড়ি সেখানে আমি জেলার সেরা বোলার হয়েছিলাম। তবে এরপর কলকাতা আমার জীবন বদলে দিয়েছে। আমাকে জীবনে কষ্ট হয়েছে, কিন্তু এটা খুব স্বাভাবিক। এটা সবার সঙ্গেই হয়। আমার লক্ষ্য ছিল সর্বোচ্চ স্তরে ক্রিকেট খেলা এবং আমি আমার স্বপ্ন সফল করতে পেরেছি। জীবনে কোনো কষ্ট না থাকলে হয়তো আমি এখানে পৌঁছাতে পারতাম না।'
মুকেশ মনে করেন যে তিনি তার জীবনের প্রতিটি ধাপে তিনি ভাগ্যবান। তাঁর বাবা বাংলায় আসতে বাধ্য করেছিলেন। রণদেব বসু তাঁকে নেটে বোলিং করতে দেখে অবাক হয়েছিলেন। মুকেশ বলেন, 'আমি ভাগ্যবান। প্রতি পদক্ষেপে সমর্থন পেয়েছি। আমার বাবা আমাকে ক্রিকেট ক্যারিয়ার গড়তে এক বছরের সময় দিয়েছেন এবং তার পরে, আমি রণো স্যার (রণদেব), মনোজ ভাইয়া (তিওয়ারি), অরুণ লাল স্যারের কাছ থেকে শেখার সৌভাগ্য পেয়েছি। এই মানুষগুলো না থাকলে আমি কখনোই এখানে পৌঁছাতে পারতাম না।'
আরও পড়ুন: মাত্র ৯০ লক্ষ টাকায় চেন্নাইয়ের থেকে বিধ্বংসী ব্যাটারকে ছিনিয়ে নিল KKR
বাবা চেয়েছিলেন আমি সেনাবাহিনীতে যোগ দিই: মুকেশ
মুকেশ কুমারের জানান, যখন তাঁকে বুচি বাবু টুর্নামেন্টের জন্য বাংলা দলে নির্বাচিত করা হয়েছিল, তখন তার কাছে ক্রিকেট কিটও ছিল না। মুকেশ বলেন, 'মনোজ ভাইয়া আমাকে ব্যাট, প্যাড এবং গ্লাভস দিয়েছিলেন।' ২০১৯-২০ মরশুম শুরু হওয়ার আগে, মুকেশকে তাঁর বড় ভাই বাবার মৃত্যুর কথা জানিয়েছিলেন। এ বিষয়ে মুকেশ বলেন, 'আমার বাবার ২০১৯ সালে ব্রেন হেমারেজ হয়েছিল। আমাকে ক্রিকেট খেলতে দিতে চাননি। চেয়েছিলেন আমি সেনাবাহিনীতে যোগ দিই। আমিও দুবার সিআরপিএফ পরীক্ষা দিয়েছিলাম। আজ যদি বাবা থাকতেন...'