পাকিস্তানের গোল রক্ষা করা বলাই দে-কে এবার সম্মান জানাচ্ছে মোহনবাগান। ২৯ শে জুলাই তাঁর হাতে জীবনকৃতি সম্মান তুলে দেওয়া হবে। পূর্ব বঙ্গের কটালিপাড়ায় জন্মান কলকাতার দুই ক্লাবে দাপিয়ে খেলা প্রাক্তন এই ফুটবলার। ১৯৬১ সালে মাত্র ১৫ বছর বয়সে খুলনা হিরোজের হয়ে খেলার সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলেন। ঢাকা মহমেডান, খুলনা টাউনের হয়ে ভাল খেলার সুবাদে পাকিস্তান জাতীয় দলের হয়েও খেলার সুযোগ পান।
১৯৬৫ সালে কলকাতায় আত্মীয় বাড়িতে ঘুরতে এসে স্থানীয় ক্লাবের হয়ে খেলতে নেমে পড়েছিলেন। সেখান থেকেই বিএনআর কর্তাদের চোখে পড়েন। ৪২৫ টাকা মাসিক রেতনে বিএনআর এ যোগ দেওয়ার প্রস্তাব পান। তবে সমস্যা হয় অন্য জায়গায়। তখনও বলাই দে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিক। এই সময় এই সমস্যার কথা বলাই দেকে ধরিয়ে দেন ইস্টবেঙ্গলের প্রবাদপ্রতীম কর্তা জ্যোতিষ গুহ। ফিফার অনুমতি ছাড়া ভারতের ক্লাবে খেলতে পারবেন না তিনি। যা বিএনআর নিয়ে আসতে পারতেন না। এই অবস্থায় জ্যোতিষ গুহ প্রস্তাব দেন তিনি এই অনুমতি নিয়ে আসবেন। তার বদলে বলাই দেকে ইস্টবেঙ্গলের হয়ে খেলতে হবে। লাল- হলুদের এই প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান তিনি। খেলার জন্য মোট ছয় হাজার টাকা দেওয়া হয়। সঙ্গে ভাইয়ের চাকরি।
''খেলার ব্যবস্থা হলেও সেই সময় সমস্ত তারকা গোলরক্ষকের ভিড় ইস্টবেঙ্গলে। পিটার থঙ্গরাজ, সনৎ শেঠ খেলছেন। সেখানে আমি খুব কম ম্যাচ পাই। এরপর নতুন মরশুমে প্রস্তাব দেয় এরিয়ান। টাকা অত বেশি না হলেও নিয়মিত খেলানোর প্রতিশ্রুতি দেউ তারা। ১৯৬৭ সালে যোগ দিই এরিয়ানে। সেই মরশুম ভাল খেলায় পরের বারেই মোহনবাগান থেকে আসে প্রস্তাব। ১৯৬৮ থেকে ১৯৭১ টানা সবুজ-মেরুন ক্লাবে খেলি। ওটাই আমার সেরা সময়।'' এক নিঃশ্বাসে বলে গেলেন বলাই দে।
মোহনবাগানে খেলার এক বছরের মধ্যেই ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়ে যান বলাই দে। তিনি বলেন, ''১৯৬৯ সালেই ভারতীয় দলে সুযোগ পেয়ে যাই। সে দিক থেকে বলা যায়, পাকিস্তান এবং ভারত দুই দেশের জার্সি গায়ে চাপয়েছি।'' তাঁর সাফল্যের তালিকাও বেশ লম্বা। মোহনবাগানের জার্সিতে কলকাতা লিগ, আইএফএ শিল্,ড ডুরাণ্ড কাপ, রোভার্স কাপ যেমন জিতেছেন, তেমনি বাংলার হয়ে সন্তোষ ট্রফি জিতেছেন। পূর্ব পাকিস্তানে আবার ক্লাব ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাঁর। ক্রিকেটে বলাই দের নৈপুন্যের প্রশংসা করেছিলেন হানিফ মহম্মদও। বলাই দে বলছেন,“জীবনে বহু সম্মান পেয়েছি। ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত ক্লাব ফুটবল খেলেছি। অবসরের আগে শেষ দুই বছর ইস্টবেঙ্গলে খেলেছিলাম। অফিস ফুটবল খেলেছি ৮৮ সাল পর্যন্ত। তবে সবার উপরে মোহনবাগানের জীবন কৃতি সম্মান। এটা আমার জীবনের সেরা।”
তিনি আরও বলেন, ''আমি বাঙাল হলেও মোহনবাগান থেকেই সব পেয়েছি। স্টেট ব্যাঙ্কের চাকরি, হোক বা খেলার সুযোগ সবটাই। বাঙাল হলেও আমি মনে প্রাণে মোহনবাগান। তাদের দেওয়া যে কোনও সম্মান আমার কাছে সেরা।”