হালতুর মোড়ের মাথায় ছোট্ট একটা ফাস্ট ফুড কাউন্টার। দোকান বললে ভুল হয়। বড় ছাতার তলায় একটা টেবিল। সেখানেই মুখরোচক নানা খাবার নিয়ে বসেন এক মোহনবাগান সমর্থক (Mohun Bagan Fan)। সবুজ-মেরুনের ম্যাচ মানেই শিলাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায় (Shiladitya Banerjee) একেবারে সামনের সারিতে। স্লোগানে, গানে মুখোরিত করে রাখেন মোহনবাগান (Mohun Bagan) গ্যালারি। আর রবিবারের পর থেকে তিনি তো ভাইরাল। 'ভাই তোর ঠিকানা দিস... আমি আজীবন ইস্টবেঙ্গল! কিন্তু তুই আমার ভাইকে কাঁধে নিয়েছিস! বিজয়ার দিন, যতদিন বেঁচে আছি... তোর মাকে প্রণাম করে আসব। জয় মোহনবাগান! জয় ফুটবল!' সোমবার সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টটি করেছেন অভিনেতা দেবদূত ঘোষ (Debdut Ghosh)। কথা শুনে সেই শিলাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের চোখে জল। নায়কের সম্মান যে তিনি পাবেন, তা ভাবেননি।
মনে করেন, যেটুকু করেছেন, তা মানবিকতার জন্য। নিজের মা, বোন, স্ত্রীর কথা ভেবে। মানুষের কথা ভেবে। সভ্যতার কথা ভেবে। সমাজের কথা ভেবে। আরজি কর হাসপাতালের নারকীয় ঘটনা ভীষণভাবে নাড়িয়ে দিয়েছিল এই যুবককে। সেই কারণেই রবিবারের মিছিলে সামিল হয়েছিলেন শিলাদিত্য। বিখ্যাত হবেন ভেবে কিছুই করেননি। তবে ঠিক কী কারণে কট্টর মোহনবাগান সমর্থক হলেও, ইস্টবেঙ্গল সমর্থককে কোলে তুলে নিলেন শিলাদিত্য? মোহনবাগান ফ্যান বলেন, 'যখন প্রতিবাদ করছিলাম, আমার স্ত্রীর ওপর একজন পুরুষ পুলিশ লাঠিচার্জ করেন। আমি কেঁদে ফেলেছিলাম। ওঁকে বলি, আপনি নিজেও জানেন যে, আপনি ভুল করছেন। আমাদের প্রতিবাদ তো নিজেদের স্বার্থে নয়, আপনারও দিদি-বোনের জন্য। মোহনবাগানের পতাকা ধরে কাঁদছিলাম।'
এরপর তিনি আরও যোগ করেন, 'সেই সময় মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল সমর্থকেরা আলাদা আলাদা জটলায় প্রতিবাদ করছিল। আচমকাই আমার মনে হয়, কেন আমার কাঁধে উঠে আরও জোরাল কণ্ঠে স্লোগান দেবে না ইস্টবেঙ্গলের সমর্থকেরা? সেই ভাবনা থেকেই ওই ইস্টবেঙ্গল সমর্থককে কাঁধে তুলে নেওয়া। আমি চিনতামও না ওঁকে। পরে আমাদের ছবি ভাইরাল হওয়ার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় জানলাম, ওই ইস্টবেঙ্গল সমর্থকের নাম রোহন গুহ। আমাকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়েছেন। আমি অ্যাকসেপ্টও করেছি।'
হালতুর সেই দোকানে পোলাও-মাংস ছাড়াও পাওয়া যায় নানা সুস্বাদু খাবার। ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের একটা বিরাট অংশ তাঁর ক্রেতা। রবিবার সন্ধ্যা সাতটায় সস্ত্রীক বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে ফিরে সাড়ে সাতটায় দোকান খুলেছিলেন। এভাবেই নিয়মিত খেলা দেখেন তিনি। কারণ পেটের টান যেমন আছে তেমনই আছে ভালবাসার মোহনবাগানও।
শিলাদিত্য বলছিলেন, 'আমার বাবা পার্থ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে গত ৭০ বছরের মোহনবাগানের সব খেলার সব খবর পেপার কাটিং করে রাখা আছে। বাবা-দাদু সকলেই মোহনবাগান ভক্ত।' রবিবার মাঠের ডার্বি না হলেও, প্রতিবাদে মুখর তিন বড় দলের সমর্থকদের কাছে শিলাদিত্য-রোহনরাই উদাহরন। আর এই ছবিটা এশিয়ার সবচেয়ে বড় ডার্বিকে আরও স্পেশাল করে দিল।