Advertisement

Subhas Bhowmik: ভারতীয় ফুটবলে আধুনিকতা এনেছিলেন সুভাষ, বলছেন প্রাক্তনরা

সুভাষ খেলোয়াড় জীবনে অনেক ট্রফি এনে দিয়েছেন বাংলার তিন প্রধানকে। কোচ হিসেবেও দারুণ সফল তিনি। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে আশিয়ান কাপ জয় থেকে শুরু করে চার্চিল ব্রাদার্সের হয়ে আইলিগ জয়। সব ক্ষেত্রেই সুভাষের দলের শেষ দুর্গের প্রহরী ছিলেন সন্দীপ নন্দী। শনিবারের সকালে খারাপ খবরটা পেয়ে সবটাই জেন কিছুক্ষণ থমকে গিয়েছিল তাঁর।

সুভাষ ভৌমিক। ছবি সৌজন্যে: ইন্ডিয়া টুডেসুভাষ ভৌমিক। ছবি সৌজন্যে: ইন্ডিয়া টুডে
জাগৃক দে
  • কলকাতা,
  • 22 Jan 2022,
  • अपडेटेड 2:33 PM IST
  • শোক প্রকাশ করেছেন ভাইচুং ভুটিয়া
  • ফুটবলারদের দারুণ ভাল বুঝতেন সুভাষ

দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর শনিবার সকালে প্রয়াত হলেন ভারতের অন্যতম সেরা ফূটবলার ও কোচ সুভাষ ভৌমিক। অনেকদিন ধরেই কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন সুভাষ। তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল কোভিড। এই দুইয়ের সঙ্গে লড়াইয়ে হার মানতে হল কিংবদন্তী এই ফুটবলারকে। শনিবার সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ একবালপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সুভাষ। তাঁর প্রয়াণে শোকের ছায়া ময়দানে। 


সুভাষ খেলোয়াড় জীবনে অনেক ট্রফি এনে দিয়েছেন বাংলার তিন প্রধানকে। কোচ হিসেবেও দারুণ সফল তিনি। ইস্টবেঙ্গলের হয়ে আশিয়ান কাপ জয় থেকে শুরু করে চার্চিল ব্রাদার্সের (Churchill Brothers) হয়ে আইলিগ জয়। সব ক্ষেত্রেই সুভাষের দলের শেষ দুর্গের প্রহরী ছিলেন সন্দীপ নন্দী। শনিবারের সকালে খারাপ খবরটা পেয়ে সবটাই জেন কিছুক্ষণ থমকে গিয়েছিল তাঁর। আজতক বাংলাকে ফোনে সন্দীপ বলেন, ''নিঃসন্দেহে খুব খারাপ খবর। এর চেয়ে দুঃখের কিছু হয় না। আমার ক্ষেত্রে তো বটেই গোটা দেশের ফুটবলের ক্ষেত্রে এটা খুব খারাপ দিন। কেরিয়ারে দুইবার ফুরিয়ে যেতে যেতে ফিরে এসেছি সুভাষ ভৌমিকের হাত ধরে। একবার টালিগঞ্জ অগ্রগামী থেকে উনি আমায় ইস্টবেঙ্গলে (East Bengal) সুযোগ করে দেন। তারপর আমরা আশিয়ান কাপ জিতি। আর একবার উনিই আমায় চার্চিলে নিয়ে যান। অনার কাছে রাখেন। সেবারেও আমরা আইলিগ জিতি। শুধু সাফল্য পেয়েছি বলে নয়। উনি আমার সঙ্গে পরিবারের সদস্যের মত মিশতেন। বিশেষ করে গোয়ায় থাকার সময়।'' শনিবারই মহমেডান স্পোর্টিংয়ের গোলরক্ষক কোচ হিসেবে যোগ দিচ্ছেন সন্দীপ। তাই আক্ষেপ ঝড়ে পড়ল তাঁর গলায়। সন্দীপ বলেন, ''এত ভাল খবরটা ওনাকে দেওয়া হল না। খুব খারাপ লাছে। আমার কোচিংয়ে আসা ওঁর জন্যই। যে দৃঢ়তা কোচ হিসেবে উনি দেখিয়েছেন সেটা ভাবা যায় না। যে সময় উনি জাকুজি, আইসবাথ এই সমস্ত নিয়ে এসেছিলেন সেটা সেই সময় ভাবা যেত না।''


বাইচুং ভুটিয়াও (Bhaichung Bhutia) শোকস্তব্ধ সুভাষের প্রয়াণের খবরে। প্রাক্তন তারকা বলেন, ''আমার সঙ্গে ওনার দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। জাতীয় লিগ জেতা থেকে আশিয়ান কাপ জেতা। অনেক মধুর স্মৃতি। অনেক সময় অনেক বিতর্ক হয়েছে ওনাকে নিয়ে। অনেক তর্কও হয়েছে। তবুও সম্পর্কে চিড় ধরেনি। সেই কারণেই আমি ওঁকে এত ভালবাসতাম। মনে যেটা আসত সেটাই বলতেন। আমরা তোমায় মিস করব ভৌমিক দা।''

Advertisement

আরও পড়ুন


শোকস্তব্ধ প্রাক্তন ব্রাজিলিয়ান ডিফেন্ডার ডগলাসও। ব্রাজিল থেকে হোয়াটসঅ্যাপ কলে তিনি বলেন, ''খুব খারাপ সকাল কলকাতার জন্য। আমি ব্রাজিলে রয়েছি। অনেক রাত হয়ে গিয়েছে। খবরটা শুনে ঘুম আসছে না। উনি দারুণ মানুষ ছিলেন। খুবই অসুস্থ ছিলেন। আমরা সকলেই আশা করছিলাম ও দ্রুত ফিরে আসবে। তবে তা আর হল না।'' অতীতের কথা বলতে গিয়ে ডগলাস বলেন, ''কোচ হিসেবে আমাদের আগলে রাখতেন। আমি সেই সময় ব্রাজিলের বেশ নামকরা দলে খেলতাম। সেখান থেকে ইস্টবেঙ্গলে যাই। বিদেশি ফুটবল সম্পর্কে খুব ভাল ধারনা থাকায় উনি জানতেন কী ভাবে বিদেশি ফুটবলারদের রাখতে হয়। আমার খাওয়া-দাওয়া সম্পর্কেও সবসময় খোঁজ খবর রাখতেন। ফুটবল নিয়ে ওঁর মত পড়াশুনা করতে আমি খুব কম মানুষকেই দেখেছি।'' 


সুভাষ ভৌমিকের চলে যাওয়াকে মর্মান্তিক আখ্যা দিলেন তাঁর একসময়ের সতীর্থ সব্রত ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ''এ ভাবে একজন ফুটবলারকে চলে যেতে হবে ভাবা যায় না। মর্মান্তিক। ভারতীয় ফুটবলকে এতকিছু দেওয়ার পরেও শেষ সময়ে তাঁর ঠাই হবে এক সাধারন হাসপাতালে? অন্য কোনও খেলার লোক হলে এটা হত না। ফুটবলার বলেই এত বঞ্চনার স্বীকার হতে হল।'' অতীতের কথা মনে করতে গিয়ে সুব্রত বলেন, ''১৯৭৬ সালে প্রয়াত মোহনবাগান কর্তা ধীরেন দে কে অনুরোধ করে আমি ওকে মোহনবাগানে সই করাই। ওর গোলেই আমরা অনেক সাফল্য পেয়েছি। মোহনবাগান ক্লাবে আমি প্রতিষ্ঠা পেয়েছি সুভাষ ভৌমিকের মত ফুটবলারদের জন্য। উদার মনের মানুষ ছিল। মনে পড়ছে অনেক স্মৃতি। '৭৬ সালে ডার্বি ম্যাচের আগে রয়েড স্ট্রিটে মোহনবাগানের মেসে চলে এসেছিল সুভাষ। আমি তখন মেসে থাকতাম। আমায় এসে বলে কি রে ভয় পাচ্ছিস? আমি তখন জুনিয়র ফুটবলার। ওর তার আগে ইস্টবেঙ্গলে ছয়-সাত বছর খেলা হয়ে গিয়েছে। বলল, চল আমি আছি সাথে। এক গাড়িতে মহম্মদ হাবিব, আকবর, আমি আর ভৌমিক। চললাম মোহনবাগান মাঠে। খেলে জিতলাম সেই ডার্বি। এরকম অনেক ঘটনা রয়েছে।''


গোয়া থেকে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আল্ভিটো ডি' কুনহা। তিনি বলেন, ''খুবই দুঃখজনক। দারুণ মানুষ ছিলেন। অনেকদিন ধরে অসুস্থ জানতাম। ভেবেছিলাম উনি ঠিক সুস্থ হয়ে উঠবেন। কিন্তু তা আর হল না। পরিবারের সকলকে সমবেদনা জানাই। ওরাও আমার খুব কাছের।'' 


আশিয়ান জয়ী ইস্টবেঙ্গল দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন দীপঙ্কর রায়। তিনি বলেন, ''ভারতীয় ফুটবলের বিরাট ক্ষতি হল। কিছুদিন আগেও খোঁজ নিয়েছিলাম। জাতীয় লিগ থেকে আশিয়ান কাপ জিতেছি ওনার কোচিংয়ে। উনি ফুটবলাদের বুঝতেন। সেটাই ওনার কোচ হিসেবে সাফল্যের রহস্য। ভারতীয় ফুটবলকে আধুনিক করার ক্ষেত্রে ওনার অব্দান অনস্বীকার্য। ওই সময় আমাদের পাঁচতারা হোটেলে রেখে ট্রেনিং করিয়েছিলেন। মানতে পারছি না।'' 

Read more!
Advertisement
Advertisement