নতুন ভাবে সেজে উঠেছে মোহনবাগান (Mohun Bagan Club) তাঁবু। আর সবুজ-মেরুনের সেই তাঁবু উদ্বোধন করলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। এর আগে বিধান চন্দ্র রায়, প্রফুল্ল সেন, জ্যোতি বসুরা মোহনবাগান তাঁবুতে পা রেখেছেন। বিভিন্ন বিষয় কলকাতার শতাব্দী প্রাচীন ক্লাবের পাশে থাকলেও তাঁবুতে আসা হয়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। আর সেই জন্যই নিজেদের ক্লাব তাঁবুর উদ্বোধন করতে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ করেছিলেন মোহনবাগান সচিব দেবাশিস দত্ত। সেই আবেদিনে সাড়া দিয়েই মোহনবাগান তাঁবুতে এলেন মমতা। বিকেল চারটে নাগাদ ক্লাবে এসে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী। মোহনবাগান ক্লাবকে ৫০ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মমতা।
ঢাকের তালে মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানান হয়। মহিলা ঢাকিরা ঢাক বাজাতে থাকেন। গোটা অনুষ্ঠানের তদারকি করতে দেখা যায় ক্লাব সচিব দেবাশিস দত্তকে। গতকাল থেকেই এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ঘিরে সাজো সাজো রব ছিল ক্লাব চত্বরে। মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তায় যেন কোনও ফাঁক না থাকে সেদিকে কড়া ব্যবস্থা করা হয়েছিল। ক্লাব তাঁবুর উল্টো দিকের লনে মঞ্চ করা হয়েছে। কেবলমাত্র মোহনবাগানের অধিনায়ক এবং রত্ন সম্মানে ভূষিত ক্রীড়াবিদদেরই এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এদিনের অনুষ্ঠানে এটিকে মোহনবাগানের (ATK Mohun Bagan) কর্ণধার সঞ্জীব গোয়েঙ্কাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তবে ব্যস্ততার কারণে থাকতে পারেননি তিনি।
বক্তব্য রাখতে গিয়ে নিজের ছোটবেলায় ফিরে যান মমতা। তিনি বলেন, '' এই ক্লাবের ঐতিহ্য কেউ ভুলতে পারবে না। আমরা কেউ সেই ইতিহাস মুছতে পারব না।মোহনবসাগানের কথা মনে পড়লেই আমার মায়ের কথা মনে পড়ে। পেলে এসেছিলেন কলকাতায় খেলতে। বিদেশ সেই ম্যাচে গোল করেছিল। মা কালঘাটে পুজো দিতে চলে গিয়েছিলেন। মোহনবাগানের খেলা থাকলেই পুজো পাঠাতেন কালিঘাটে। ১৯১১ সালে খালি পায়ে মোহনবাগানের ফুটবলাররা ব্রিটিশদের হারিয়েছিলেন। তাঁরাই ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন শুরু করেছিলেন। আমি স্যালুট জানাই তাদের যারা মোহনবাগান ক্লাব তৈরি করেছেন, এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। মোহনবাগানের তুলনা মোহনবাগান নিজেই।'' পাশাপাশি মোহনবাগান ক্লাবকে আরও ৫০ লক্ষ টাকা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন মমতা।
গোটা তাঁবু ঘুরে দেখেন তিনি। নতুন ভাবে সেজে ওঠা তাঁবুর প্রশংসা করেন মমতা। ঘুরে দেখেন ট্রফি ক্যাবিনেট, সচিবের ঘর। সঙ্গে ছিলেন সচিব দেবাশিস দত্ত ও কর্তা সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়। এরপর মঞ্চে ওঠেন তিনি। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ক্লাবের সহ সভাপতি কুণাল ঘোষ, রাজ্যের ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী মনোজ তিওয়ারি। ক্লাব কর্তা বাবুন বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে ছিলেন না সভাপতি টুটু বসু।
সচিব দেবাশিস দত্ত বলেন, 'দিদি আজ আমাদের মধ্যে এসেছেন সকলের পক্ষ থেকে সবুজ মেরুন শুভেচ্ছা। ক্লাব তাঁবু উরদধনের সময় বললেন, আমার শাড়িটা দেখেছ? সবুজ মেরুন। এটা উনিই পারেন। আমাদের ক্লাবে ফ্লাডলাইট, টেন্ট, সাজঘর তৈরি হয়েছে। বিশবমানের জিম হয়েছে। সবটাই দিদির জন্য। আর্থিক সাহায্য দেওয়ার পাশাপাশি মানসিক ভাবেও সবসময় পাশে থেকেছেন। প্রথমবার দিদি ক্লাবে এলেন। তাঁর পায়ের ধুলো পড়ল আমাদের ক্লাবে। সকলে মিলে একটা স্পোর্টস কালচার তৈরি করতে চাই।''
মুখ্যমন্ত্রীর গলায় সবুজ-মেরুন উত্তরীয় পরিয়ে দেন প্রাক্তন ফুটবলার সুব্রত ভট্টাচার্য, পুস্পস্তবক তুলে দেন প্রদীপ ভট্টাচার্য, লাইফ মেম্বারশিপ তুলে দেন সত্যজিৎ চট্টোপাধ্যায়, মমতার হাতে ফুটবল তুলে দেন প্রাক্তন ফুটবলার মানস ভট্টাচার্য।