প্রকৃতির বৈচিত্র্য এবং মহাবিশ্বের গভীরতা বোঝা সহজ নয়। বিজ্ঞানীরা নিরন্তর অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি এমন একটি গ্রহের সন্ধান পাওয়া গিয়েছে, যা সম্পূর্ণ লোহা দিয়ে তৈরি। এই গ্রহের আয়তন প্রায় পৃথিবীর সমান। এর নাম Gliese 367b। এটি একটি আল্ট্রাশর্ট পিরিয়ড (ইউএসপি) গ্রহ। আল্ট্রাশর্ট পিরিয়ড গ্রহের অর্থ হল এটি তার সূর্য অর্থাৎ তারার চারদিকে মাত্র ৭.৭ ঘণ্টায় ঘোরে। বিজ্ঞানীরা এখনও পর্যন্ত ৫ হাজারের বেশি এক্সোপ্ল্যানেট আবিষ্কার করেছেন। যার মধ্যে ২০০টি অতি সংক্ষিপ্ত সময়ের গ্রহ।
Gliese 367B শুধুমাত্র এই কারণেই অনন্য নয়। বরং এটি পৃথিবীর দ্বিগুণ ঘনত্বের একটি গ্রহ। এই গ্রহটি শুধুমাত্র লোহা দিয়ে ভরা। এটা বিশ্বাস করা হয় যে এর ভিতরে সবচেয়ে বিশুদ্ধ লোহা ভরা রয়েছে। এটি আবিষ্কার করতে TESS অর্থাৎ Transiting Exoplanet Survey Satellite (TESS) এর সাহায্য নেওয়া হয়েছিল। তখন থেকেই এই গ্রহকে নিয়ে উৎসাহ বাড়ছিল। নতুন গবেষণাটি দ্য অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নাল লেটার্সে প্রকাশিত হয়েছে।
তুরিন বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি ছাত্রী বিজ্ঞানী এলিজা গোফো এই বিষয়ে গবেষণা করেছেন। তিনি বলেছেন যে Gliese 367B-এরও দুটি বোন গ্রহ রয়েছে। এই দুটিই ইউএসপি গ্রহ। তারা ১১.৪ এবং ৩৪ দিনে একই নক্ষত্রের চারপাশে ঘোরে। যাদের নাম Gliese 367 C এবং D। তাদের ওজন Gliese 367B এর চেয়ে কম। TESS এই গ্রহটি দুই বছর আগে আবিষ্কার করেছিল। এর তারার নাম Gliese 367। এটি একটি লাল বামন। ঠিক আমাদের সূর্যের মতো।
বিজ্ঞানীরা এই গ্রহের ভর এবং ব্যাসার্ধ পরিমাপের জন্য রেডিয়াল ভেলোসিটি প্ল্যানেট অনুসন্ধানকারী (HARPS) বর্ণালীগ্রাফের সাহায্য নিয়েছিলেন। তারপরই জানা গেল যে এটি পৃথিবীর আয়তনের ৭২ শতাংশ। তার মানে একটু ছোট। ওজন পৃথিবীর ওজনের ৫৫তাংশ। কিন্তু ঘনত্ব দ্বিগুণ বেশি। অর্থাৎ এর পৃষ্ঠের নীচে কম স্তর রয়েছে।
এই গ্রহের মূল অংশ খুবই ঘন। সম্পূর্ণ লোহা দিয়ে তৈরি। যার চারপাশে সিলিকেট ভরা আবরণ রয়েছে। কিন্তু এর কোনও ভূত্বক নেই। এটি এক ধরনের প্রোটোপ্ল্যানেট। যার বাইরের স্তর শেষ হয়ে গিয়েছে। তার মানে ম্যান্টেল নিজেই উপরে। সে সবে শক্ত হয়ে গেছে। এছাড়াও Gliese 367b সুপার বুধ গ্রহের বিভাগে পড়ে। মানে ছোট এক্সোপ্ল্যানেট।