ঊর্ধ্বমুখী তাপমাত্রার পারদ! তাপমাত্রা প্রতিদিনই প্রায় ৩৮ ডিগ্রি থেকে ৪০ ডিগ্রির কোঠায় ঘোরা-ফেরা করছে। গরমে ফুটছে চারপাশ। অথচ অ্যাপ-ক্যাবেও এসি চলছে না! ভাড়া হলুদ ট্যাক্সির চেয়ে বেশি পড়লেও নেই বাড়তি আরামটুকুও।
এমনিতেই ঊর্ধ্বমুখী করোনা সংক্রমণের জেরে বাসে, ট্রেনের ভিড় ঠেলে যাতায়াত করতে যাইছেন না অনেকেই। মাঝে-মধ্যে খুব প্রয়োজনে বাড়ি থেকে বেড়লে এসির হাওয়ায় একটু স্বস্তিতে যাতায়াতের জন্য বেশ কিছুটা বেশি ভাড়া দিয়েও হলুদ ট্যাক্সির পরিবর্তে অ্যাপ-ক্যাবই পছন্দ অধিকাংশের। কিন্তু নতুন পরিস্থিতিতে ওই স্বস্তিকুও উধাও হয়েছে!
অ্যাপ-ক্যাবে কিলোমিটার প্রতি গুণতে হয় প্রায় ২০-২২ টাকা। তার উপর মাঝে-মধ্যে সার্জ প্রাইস লাফিয়ে লাফিয়ে বেশ কয়েক গুণ বেড়ে যায়। কিন্তু দ্বিগুণ বা তিন গুণ ভাড়া দিয়েও অ্যাপ-ক্যাব যাত্রায় ন্যূনতম পরিষেবা পাচ্ছেন না অনেক যাত্রী।
ক্যাবে উঠলেই কখনও চালক নিজেই বলে দিচ্ছেন, ‘এসি চালানো যাবে না’। কখনও যাত্রী এসি চালাতে বললে উত্তর মিলছে, ‘এসি চলবে না।’ গাড়ির এসি কেন চলবে না তা জানতে চাইলে অবশ্য একেক জন চালক একেক রকম কারণ বলছেন।
কোনও চালক গাড়ির এসি না চালানোর জন্য তার সংস্থার দোহাই দিচ্ছেন। বলছেন, ‘অফিস থেকে বারণ করেছে’। কোনও চালক আবার করোনার কারণ দেখিয়ে গাড়ির এসি বন্ধ রাখছেন। এ দিকে অ্যাপ-ক্যাব সংস্থাগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করলে বোঝা যাচ্ছে, এসি বন্ধ রাখার কোনও নির্দেশই চালককে দেওয়া হয়নি!
সংস্থার নির্দেশ না থাকলে কেন গাড়ির এসি বন্ধ রাখছেন অ্যাপ-ক্যাব চালকরা? এ বিষয়ে অবশ্য কয়েকজন অ্যাপ-ক্যাব চালক সোজা-সাপটা স্বীকার করে নিয়েছেন, সংস্থার কমিশন দিয়ে, আকাশছোঁয়া ডিজেলের দাম মিটিয়ে এসি চালালে সারাদিন গাড়ি চালিয়ে ২০০ টাকাও ঘরে তুলতে পারবেন না তাঁরা।
সব মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে, শহরে চলা অ্যাপ-ক্যাব সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগ যাত্রী ও চালক— দু’পক্ষেরই! অ্যাপ-ক্যাব চালকদের অভিযোগ, সংস্থা ভাড়ার প্রায় ২৫-৩০ শতাংশ কেটে নেয়। তার পর সারাদিনের তেলের খরচ, গাড়ির মেন্টেন্যান্স বাদ দিলে যৎসামান্যই হাতে পড়ে থাকে।
যাত্রীদের অভিযোগ কারণে-অকারণে অ্যাপ-ক্যাবের আকাশছোঁয়া সার্জ প্রাইস, তার উপর নানা কারণে উপযুক্ত পরিষেবার অভাব, বাড়তি ভাড়া গুণেও গাড়ির এসি বা অন্যান্য সাচ্ছন্দের অভাব-সহ আরও একাধিক সমস্যা নিয়ে।
গাড়ির এসি বন্ধ রাখার কারণে যাত্রীদের থেকে খারাপ রেটিং পাচ্ছেন অনেক ক্যাব চালকই। কিন্তু তাঁদের বক্তব্য, ‘রেটিং কমছে ঠিকই, কিন্তু এঅ বাজারে আয় কমলে বাঁচবো না!’ AITUC অনুমোদিত অ্যাপ-ক্যাব চালক সংগঠনের অভিযোগ, অ্যাপ ক্যাব সংস্থাগুলিকে কমিশনের হার কমানোর কথা বলা হলেও তারা তা মানেনি।
অ্যাপ ক্যাব সংস্থাগুলির উপর সে ভাবে কোনও সরকারি নিয়ন্ত্রণ না থাকায় যাত্রী ও চালক— উভয় পক্ষেরই সমস্যা হচ্ছে, এ কথা মানছে West Bengal Online Cab Operators Guild, AITUC, CITU-এর মতো অ্যাপ-ক্যাবের চালক সংগঠনগুলিও। তার উপর দেশজুড়ে আকাশছোঁয়া তেলের দামে হাঁসফাঁস অবস্থা সকলেরই। তাই অ্যাপ ক্যাব পরিষেবার মধ্যস্থতাকারী সংস্থাগুলির উপর যতদিন না সরকারি নিয়ন্ত্রণ কায়েম হচ্ছে, ততদিন এই ধরনের নানা সমস্যা থেকেই যাবে।