বাংলায় এখন বিধানসভা নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা চরমে! রাজ্যে ভোটের জন্য প্রতিবারের মতোই এ বারও প্রচুর বাস তুলে নেওয়া হয়েছে রাস্তা থেকে। নির্বাচনী পর্বে জনসাধারণের জন্য সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বেশ কয়েক হাজার বাস এখন ‘ভোটের ডিউটি’ করছে।
সুষ্টু ও নিরপেক্ষ ভোট নিশ্চিত করতে এবারের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলায় রেকর্ড সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী এসেছে। করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচতে বাড়তি সতর্কতা হিসাবে বুথের সংখ্যাও বেড়েছে প্রায় ৩০ হাজার। এই দুইয়ের চাপে রাস্তা থেকে উধাও হয়েছে প্রায় ৮৫ শতাংশ বাস!
রাজ্যে বিধানসভা ভোটের কাজে আসা আধা-সামরিক বাহিনীর জওয়ানদের ও নির্বাচনের সঙ্গে যুক্ত কর্মীদের যাতায়াতের জন্য আট দফার এই বিরাট ভোট পর্বে বুথে বুথে পৌঁছে দিতে হাজার হাজার বাস তুলে নেওয়া হয়েছে।
নিত্যযাত্রীদের বক্তব্য, গত বছর লকডাউন চলাকালীনও রাস্তায় এতটা অভাব ছিল না বাসের। রাজ্যের এই দীর্ঘায়িত ভোট পর্বে প্রবল সমস্যার মুখে পড়েছেন বেসরকারি বাস মালিকরাও। বাড়ন্ত ডিজেলের দাম, কর্মী অসন্তোষ সামলে বাস চালানোটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ তাঁদের কাছে।
রাজ্য বেসরকারি বাস সিন্ডিকেটসের জয়েন্ট কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক (জেনারেল সেক্রেটারি) তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্যের প্রায় ৮৫ শতাংশ বাস এখন ‘ভোটের ডিউটি’ করতে রাস্তা থেকে উঠে গিয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নিত্যযাত্রীদের।”
তপনবাবু বলেন, “ভোটের কাজে তুলে নেওয়া বাস প্রতি দৈনিক ২,৩০০ টাকা ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। এই বাজারে যা যথেষ্ট কম। প্রতিবেশি রাজ্য ঝাড়খণ্ডে এই বাস ভাড়া দৈনিক ৩,৫০০ টাকা। ফলে অগ্নিমূল্য ডিজেলের বাজারে উপযুক্ত পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বাস মালিকরা।”
বাবুঘাট, নবান্ন, নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের সামনে শয়ে শয়ে বেসরকারি বাস দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। এই বাসগুলি ‘ভোটের ডিউটি’র জন্য তুলে নেওয়া হলেও পড়ে রয়েছে পথের পাশেই। এদিকে বাইরে বেরিয়ে বাস পেতে নাকাল হতে হচ্ছে নিত্যযাত্রীদের।
এ প্রসঙ্গে বেঙ্গল বাস সিন্ডিকেটের সহ-সভাপতি সুরজিৎ সাহা বলেন, “শুধুমাত্র উত্তর ও দক্ষিণ কলকাতার বিধানসভা কেন্দ্রগুলির জন্য ৪৭৩টি বাস তুলে নেওয়া হয়েছে। অকারণে বাসগুলিকে ৪-৫ দিন করে ফেলে রাখা হচ্ছে। ফলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে বাস মালিও ও নিত্যযাত্রী— উভয়পক্ষকেই।”
সুরজিৎবাবু বলেন, “৬ এপ্রিল রাজ্য পরিবহণ দপ্তর ভোটের কাজে যুক্ত বাসের ভাড়া কিছুটা বাড়ালেও বাসচালক ও কন্ডাক্টরদের মজুরি কিংবা খোরাকি বাবদ এ বারেও মাত্র ১৭০ টাকাই ধার্য করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে দৈনিক অন্তত ৩০০ টাকা করার কথা বলা হয়েছিল। ফলে পরিবহণ শ্রমিকদের ক্ষোভ ক্রমেই বাড়ছে।”
বাসচালক ও কন্ডাক্টরদের মজুরি প্রসঙ্গে বেসরকারি বাস সিন্ডিকেটসের জয়েন্ট কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক তপনবাবু বলেন, “রাজ্যে ৮৫ শতাংশ নিত্যযাত্রী বেসরকারি বাসের উপর নির্ভরশীল। কৃষির পর সব থেকে বেশী মানুষ বেসরকারি বাস শিল্পের সঙ্গে জরিত। করোনা মহামারির ফলে এই শিল্পটা এমনিতেই কোমায় চলে গিয়েছে। তার উপর বাসচালক ও কন্ডাক্টর ন্যূনতম মজুরি না পেলে শিল্পটা বাঁচবে কীকরে! অগত্যা তাই নিজেদের গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে পরিবহণ শ্রমিকদের অসন্তোষ সামাল দিচ্ছেন বাস মালিকরা।”