ছেলেরা যখন কিশোর বয়সে পৌঁছায়, তখন তাদের দাড়ি-গোঁফ গজাতে শুরু করে। আজকাল ফিল্ম তারকাদের দাড়ি-গোঁফের ক্রেজ এতটাই বেড়ে গেছে যে প্রতিটি ছেলেই দাড়ি-গোঁফ রাখতে চায়। তবে অনেক সময় ছেলেদের দাড়ি-গোঁফ না রাখায় হরমোন নষ্ট হয়ে যাওয়ায় এবং মহিলাদের হরমোনের ক্ষয়ের কারণে অনেকের মুখেই গাড়ি-গোঁফ দেখা যায়। মহিলারা ক্রিম, মোমের স্ট্রিপ, রেজার এবং এপিলেটর ইত্যাদি দিয়ে মুখের এই লোমগুলি মুছে ফেলেন। কিন্তু ভারতে এমনও এক মহিলা রয়েছেন যার গোঁফ রয়েছে এবং তিনিও গোঁফ রাখতে পছন্দও করেন। অনেক সময় লোকে তাকে ঠাট্টাও করেছে, কিন্তু তিনি তার গোঁফ কাটেনি। এই মহিলাটি কে? গোঁফ থাকার কারণ কি? এ বিষয়ে জেনে নিন।
কে এই গোঁফওয়ালা মহিলা
গোঁফওয়ালা এই মহিলার নাম শায়জা, যিনি কেরালা রাজ্যের কান্নুরের বাসিন্দা। ৩৫ বছর বয়সি শায়জাকে তার মুখ এবং গোঁফের জন্য বহুবার ট্রোলের মুখে পড়তে হয়েছে, কিন্তু তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন যে গোঁফ তিনি রাখবেনই। এক সাক্ষাৎকারে শায়জা বলেন, ‘আমি গোঁফ রাখতে পছন্দ করি, তাই আমি কোনও অবস্থাতেই গোঁফ কাটব না।
অনেক নারীর মতো শায়জার মুখেও বেশি চুল ছিল। তিনি নিয়মিত থ্রেডিং করাতেন কিন্তু তিনি কখনই উপরের ঠোঁটের (গোঁফ বা উপরের ঠোঁট) চুল সরানোর প্রয়োজন অনুভব করেননি। প্রায় পাঁচ বছর আগে তার গোঁফের চুল ঘন হতে শুরু করে। শায়জা এখন গোঁফ ছাড়া বাঁচার কথা কল্পনাও করেন না।
সাক্ষাতকারে শায়জা বলেছিলেন, “করোনা মহামারীর সময়, আমি মাস্ক পরতেও পছন্দ করিনি কারণ আমাকে সারাক্ষণ মাস্ক পরতে হয়েছিল। এর ফলে আমার গোঁফ ঢেকে যেত। অনেকে আমাকে গোঁফ কাটার পরামর্শ দিলেও আমি কাটব না। আমি কখনই অনুভব করিনি যে আমি সুন্দর নই।"
আজ শায়জার পরিবার এবং তার মেয়ে তাকে অনেক সমর্থন করেন। তার মেয়ে প্রায়ই তাকে বলে যে তার গোঁফ ভালো দেখায়। অনেকবার শায়জা রাস্তার লোকজনের কাছ থেকে নিজের জন্য কটূক্তিও শুনেছেন, কিন্তু লোকেদের মজা করাতে তার কোনও আপত্তি নেই।
এ কারণে গোঁফ কাটতে চান না
সাক্ষাতকারে শায়জা বলেন, “যদি আমার দুটি জীবন থাকত, আমি অন্যদের জন্য একটি জীবন কাটাতে পারতাম। এখন পর্যন্ত আমার ৬টি অস্ত্রোপচার হয়েছে। গত কয়েক বছরে, স্তনের একটি পিণ্ড অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচার এবং তারপর ডিম্বাশয় থেকে সিস্ট অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল। আমার শেষ অস্ত্রোপচার ছিল পাঁচ বছর আগে হিস্টেরেক্টমি। যখনই আমার কোনো অস্ত্রোপচার হতো, আমি মনে করতাম এটাই আমার শেষ অস্ত্রোপচার এবং এর পর আমাকে আর কখনও অপারেশন থিয়েটারে যেতে হবে না। অনেক অস্ত্রোপচারের পরে, আমি আত্মবিশ্বাস অর্জন করেছি এবং ভেবেছিলাম যে আমার এমন জীবনযাপন করা উচিত যা আমাকে সুখী করে।"
এক সময় ঘর থেকে বেরতে পারতেন না
শায়জা জানান, ছোটবেলা থেকেই তিনি খুব লাজুক ছিলেন এবং তার গ্রামের মহিলারা সন্ধ্যা ৬টার পর বাড়ি থেকে বের হতেন না। তার গ্রামে মহিলাদের ঘর থেকে বের হতে এমনকী ঘরের বাইরে বসতেও দেওয়া হয়নি। কিন্তু বিয়ে হলে তিনি তামিলনাড়ুতে শ্বশুর বাড়িতে চলে যান। সেখানে তিনি অনেক ছাড় পেয়েছেন। তার স্বামী কাজে যেতেন এবং কিছু প্রয়োজন হলে রাতে একা দোকানে যেতেন। এতে তিনি নিজে থেকে কাজ করতে শিখেছেন এবং তাঁর আত্মবিশ্বাস বেড়েছে।
মহিলাদের কেন দাড়ি-গোঁফ গজায়
ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিকের মতে, কিছু মহিলাদের শরীরের নির্দিষ্ট অংশে বেশি চুল গজায়। এই চুল ঠোঁটের উপরে, চিবুক, বুক, পেটের নীচের অংশে পাওয়া যায় এবং সময়ের সাথে সাথে ঘন হয়ে যায়। এটাও বলা যায় যে, পুরুষদের শরীরের যে অংশে ঘন চুল থাকে, নারীদের সেই অংশে চুল ঘন হয়। ডাক্তারি ভাষায় এই অবস্থাকে বলা হয় হিরসুটিজম (Hirsutism). শরীরে পুরুষ হরমোন বেড়ে যাওয়া বা নারী হরমোন কমে যাওয়ায় হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয় এবং অনেক জায়গায় অবাঞ্ছিত লোম আসে।
হিরসুটিজম এমন একটি অবস্থা যেখানে আপনার শরীরের নির্দিষ্ট অংশে অতিরিক্ত চুল গজায়। হিরসুটিজমের ফলে মহিলাদের শরীরে অবাঞ্ছিত লোম গজায়, কণ্ঠস্বর ভারী হয়ে যায়, স্তনের আকার ছওট হয়ে যায়, পেশী বৃদ্ধি পায়, সেক্স ড্রাইভ বাড়ে, ব্রণ আসে। PCOS আছে এমন মহিলাদের ৭০-৮০ শতাংশই হিরসুটিজম প্রবণ।
হিরসুটিজমের অনেক কারণ থাকতে পারে। পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম, এন্ড্রোজেন উৎপাদন, অতিরিক্ত ওষুধ খাওয়া, মেনোপজ হওয়ার পর, কুশিং সিনড্রোম ইত্যাদি কারণে এই অবস্থা হতে পারে। এই অবস্থাটি সাধারণত ভূমধ্যসাগরীয়, হিস্পানিক, দক্ষিণ এশীয় বা মধ্যপ্রাচ্যে বসবাসকারী মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।