সৌর জগতের গ্রহদের ভিড়ে শনিকে সনাক্ত করতে সময় লাগে না একটা শিশুরও। কারণ, শনিকে ঘিরে থাকা বলয় এই গ্রহটিকে বাকিদের থেকে আলাদা করে দিয়েছে। আমাদের সৌরজগতের সবচেয়ে বড় এবং উজ্জ্বল বলয় রয়েছে শনি গ্রহেরই।
গ্রহের থেকে ২৮০,০০০ কিলোমিটারেরও বেশি এলাকাজুড়ে প্রসারিত এই বলয়। শনির বলয়ের থেকে এই বলয়গুলির মধ্যে যতটা জায়গা জুড়ে রয়েছে, সেখানে পরপর ছয়টি পৃথিবীকে অনায়াসে বসিয়ে দেওয়া যেতে পারে। শনি গ্রহের এই বলয় হয়তো আর বেশিদিন এমনভাবে দেখা যাবে না। কারণ, শনিকে ঘিরে থাকা বলয়গুলি ক্রমশ ক্ষয়ে যাচ্ছে। এমনটাই ধরা পড়েছে বিজ্ঞানীদের গবেষণায়।
মহাকাশ বিজ্ঞানীদের দাবি, শনির বলয়গুলি তার পূর্বের প্রত্যাশিত সময়কালের তুলনায় অনেকটাই দ্রুত অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, শনির বলয়ে জমে থাকা বরফ অপ্রত্যাশিত গতিতে দ্রুত হারে ঝরে পড়ছে শনির পৃষ্ঠে, ছড়িয়ে পড়ছে মহাশূন্যে। গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, শনি থেকে এখন প্রতি সেকেন্ডে যে পরিমাণ বরফ গলে যাচ্ছে, তাতে মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যে একটি অলিম্পিকের নির্ধারিত আকারের পুল ভরে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট।
শনির এই বলয়গুলি মূলত বরফ আর পাথরের টুকরো দিয়ে তৈরি, যেগুলো প্রতিনিয়ত বোমাবর্ষণের মতো ঝরে পড়ছে শনির পৃষ্ঠে, মহাশূন্যে। কিছু সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মির দ্বারা পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে, আবার কিছু ছোট উল্কা মতো ঝরে পড়ছে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, শনির বলয়গুলির বরফ সূর্যের তাপে বাষ্পীভূত হয় দ্রুত উবে যাচ্ছে। বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, সূর্যের অতিরিক্ত তাপ, বিকিরণের প্রভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে শনির বলয়। 'ক্যাসিনি' মহাকাশযানের পাঠানো তথ্য বিশ্লেষণ করে এ কথা জানতে পেরেছেন মেরিল্যান্ডে নাসার গর্ডার্ড স্পেস সেন্টারের গবেষকরা।
১৯৮০-এর দশকেই শনির এই বলয় ক্ষয়ে যাওয়া বা রিং রেইন ধরা পড়েছিল বিজ্ঞানীদের চোখে, যখন নাসার ভয়েজার মহাকাশযান রহস্যময়, অন্ধকার ব্যান্ডগুলি আবিষ্কার করেছিল যেগুলি শনির চৌম্বক ক্ষেত্রের মধ্যে রিং রেইন-এর কারণ হিসাবে সামনে উঠে আসে। সে সময় গবেষকরা অনুমান করেছিলেন যে পরবর্তি ৩০ কোটি (৩০০ মিলিয়ন বছরে) বছরের মধ্যে এই রিংগুলি সম্পূর্ণরূপে বিলুপ্ত হয়ে যাবে। কিন্তু, বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণের পর বিজ্ঞানীদের ধারণা, পূর্বের অনুমিত ওই সময়কালের তুলনায় অনেকটাই দ্রুত অদৃশ্য হয়ে যাবে শনির বলয়গুলি।