স্থানীয় সোনু সুদ
একে লক ডাউনে কাজ নেই। তায় আবার পরিবার সুদ্ধ করোনা আক্রান্ত। বিপদের ডাবল ডোজে বিপর্যস্ত গোটা পঁয়ষট্টি পরিবার। বিপদের সময় সকলে মুখ ঘোরালেও তাঁদের বাড়ির দরজায় পৌঁছে যাচ্ছেন বিডিও। হাতে রেশনের ব্যাগ। তাতে যা যা লাগবে আলু, চাল, ডাল, ডিম, অন্যান্য সামগ্রী। শুধু তাই নয়, সুস্থ হতে কি কি করা দরকার, তার একটা মৌখিক তালিকাও বুঝিয়ে দিচ্ছেন আক্রান্তদের। আর দুয়ারে এভাবে রেশন পেয়ে, তাও আবার বিডিও-র কাছ থেকে! প্রাপকের ঘাড় নাড়ানো ছাড়া আর কিছু করার থাকে না। আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনি ব্লকের বিডিও প্রশান্ত বর্মন এখন স্থানীয় সোনু সুদের মতোই সুপার হিরোর তকমা পাচ্ছেন।
বয়কট করা হয় পঁযষট্টিটি পরিবারকে
করোনা সংক্রমণের জেরে কার্যত সামাজিক বয়কট করা হয়েছে আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনি ব্লকের পঁয়ষট্টি পরিবারকে। এই পরিবার গুলোর বেশিরভাগ মানুষ হত দরিদ্র এবং দিন মজুর। সকলেই উপসর্গ হীন করোনা সংক্রমণের কারণে তাদের সেফ হোমে রাখা হয়নি।
একে করোনা তায় কাজ নেই
কাজ না থাকায় চরম বিপাকে পড়েছেন করোনা আক্রান্ত এই সহজ সরল মানুষ গুলো। দু বেলা খাবার জুটছে না। অনেকের দেহেই পর্যাপ্ত পুষ্টির অভাব দেখা দিয়েছে। তাদের হাতে নেই ওষুধ কেনার টাকা। দুঃস্থ এই মানুষ গুলোর নিদারুণ কষ্ট, যন্ত্রনার কথা শুনেই উদ্যোগ নেন কালচিনি ব্লকের বিডিও প্রশান্ত বর্মন। করোনা আক্রান্ত এই অসহায় মানুষদের সাহায্য করতে কালচিনি ব্লকে তৈরি করে ফেলেন কোভিড যোদ্ধা দল।
বাড়ি বাড়ি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বিডিও
খোঁজ খবর নিতে শুরু করেন করোনা আক্রান্ত ওই মানুষদের অসুবিধার সমস্ত বিষয়ের। সামাজিক বয়কটের শিকার করোনা রোগীদের বাড়ি বাড়ি ব্লক প্রশাসনের তরফে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে পরিবার পিছু ২৪ কিলো চাল, এক কেজি সর্ষের তেল ও লবন ও তিনশো টাকার শাকসবজি। এ ছাড়াও ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককে সঙ্গে নিয়ে বিডিও প্রশান্তবাবু তাঁদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র।
করোনা কন্ট্রোল রুম
এরপর বিডিও সেই এলাকার স্থানীয় মানুষদের সামাজিক বয়কট নিয়ে সচেতন করেন। সামাজিক বয়কট একটি পরিবারকে বা একটি জাতিকে কতটা বিপদে ফেলতে পারে সে বিষয়েও তিনি সচেতন করেন। যদিও এই পর্যায়ে তিনি ওই আক্রান্ত ওই পরিবার গুলোর পাশে দাঁড়াতে মানুষদের আবেদন করেন। আক্রান্ত ওই পরিবারের কোন মানুষ যাতে অভুক্ত না থাকে তার জন্য স্থানীয় মানুষদের কাছে তিনি আবেদন জানান। গোটা বিষয়টি তদারকি করার জন্য কালচিনি বিডিও অফিসে খোলা হয়েছে একটি কোভিড-১৯ কন্ট্রোল রুম। এই কন্ট্রোল রুম থেকেই করোনা আক্রান্ত সমস্ত মানুষদের তথ্য পৌঁছে যাচ্ছে বিডিওর কাছে।করোনা আক্রান্ত মানুষদের কোন খবর জানা মাত্রই সাহায্য পৌছে যাচ্ছে তাদের কাছে।
বিডিও উবাচ
বিডিও জানান কালচিনির বহু মানুষের জীবিকা দিনমজুর। এদের বেশির ভাগ মানুষ ভুটানে শ্রমিকের কাজ করেন। দীর্ঘদিন ধরেই এই মানুষ গুলো কর্মহীন হয়ে রয়েছে। তার মধ্যেই এই পরিবার গুলো করোনা আক্রান্ত বিডিও বলেন এই আক্রন্ত পরিবার গুলোকে মানুষ সংক্রমণের ভয়ে সামাজিক বয়কট করেছে। মানবিক কারণেই ব্লক প্রশাসনকে বিপদে পড়া ওই পরিবার গুলির পাশে দাঁড়াতে হচ্ছে। করোনা আক্রান্তদের প্রতি ব্লকের তরফে সবসময় সাহায্য করা হবে। প্রশান্ত বর্মন বলেন, আমি রাজ্য সরকারের একজন কর্মী হিসেবে আমার দায়িত্ব পালন করছি।