উত্তরবঙ্গের (North Bengal) ধু ধু প্রান্তর বা গ্রাম্য পরিবেশে মেঠো পথে দাঁড়িয়ে কখনও আকাশের দিকে দুই হাত বাড়িয়ে তাকে কাছে ডেকেছেন? অথবা গরুর গাড়ি কিংবা হাতির পিঠে মাহুতের চলন কোনদিন চাক্ষুষ করেছেন? অনেকে করেছেন, অনেকের হয়তো সুযোগ হয়নি। তবে সরাসরি না হলেও সুরে সুরে সেই সবকিছুই হয়তো ধরা দিয়েছে অনেকের কাছে। আর যাঁর কণ্ঠের উদাস করা সুরের ভেলায় চড়ে উত্তরবঙ্গের জল হাওয়া মিশে গিয়েছে শহুরে মানুষের শরীরে ও মননে, তিনি প্রখ্যাত ভাওয়াইয়া শিল্পী আব্বাসউদ্দীন আহমেদ (Abbasuddin Ahmed)। যাঁর দরদী কণ্ঠ বিশ্বের দরবারে পৃথক জায়গা করে দিয়েছে ভাওয়াইয়া গানকে। শিল্পীর প্রয়াণ দিবসে ভাওয়াইয়া (Bhawaiya) গানের প্রচার ও প্রসারে তাঁর অবদানের বিষয়ে উঠে এল বেশকিছু কথা।
আব্বাদউদ্দীন আহমেদের প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে লোকসঙ্গীত শিল্পী শ্রী স্বপন বসু জানান, "কোচবিহারে ওনার জন্ম, পরে চলে যান বাংলাদেশের রংপুরে। সাংস্কৃতিক এলাকা হিসেবে কোচবিহার ও রংপুর দুইই ভাওয়াইয়া অঞ্চল। দুই অঞ্চলই একই সাংস্কৃতিক সীমানার অন্তর্গত। উত্তরবঙ্গের ভাওয়াইয়া গানকে তিনিই প্রথম জনসমক্ষে নিয়ে আসেন, জনপ্রিয় করেন।"
অন্যদিকে রাজবংশী ভাষা অ্যাকাডেমি ও রাজবংশী ডেভলপমেন্ট এন্ড কালচারাল বোর্ডের চেয়ারম্যান বংশীবদন বর্মন বলেন, "ওনার অবদান দু -এক কথায় বলা সম্ভব না। রাজবংশী সমাজের শ্রেষ্ঠ কৃষ্টি ও পরম্পরা ভাওয়াইয়া গানকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেন আব্বাসউদ্দীন আহমেদ। লন্ডনে ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দেরে গেয়ে উনি ভাওয়াইয়া সম্রাট উপাধি পান। এখানকার মানুষের আলাদা এই সংস্কৃতিকে উনি বিশ্বের সামনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর জন্যই ভাওয়াইয়া গানকে সবাই চেনেন জানেন। তাঁর অবদান অস্বীকার করা যাবে না।"
বংশীবাবু আরও জানান, শিল্পীর প্রয়াণ দিবসে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হচ্ছে। পাশাপাশি কোচবিহারে শিল্পীর যে বাড়ি রয়েছে সেটি অধিগ্রহণ করার জন্যও সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। সেক্ষেত্রে এখন দেখার রাজবংশী সম্প্রদায়ের দাবি মেনে আব্বাসউদ্দীনের বাড়ি অধিগ্রহণ করে কি না সরকার।