নিজের হাতে গড়া তৃণমূলের দায়িত্ব ফের মুকুলেই
নিজের হাতে গড়া তৃণমূল এখন আর নেই। তিনি দল ছাড়ার পর কয়েক বছরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে দলের। আবার পুরনো কিছু লোক ছেড়েও গিয়েছেন। তবে তিনি ফের তৃণমূলে ফেরায় অনেকেই দাদার হাত ধরে ফিরেছেন। অনেকে ফিরবেন বলে তৈরি হয়ে রয়েছেন সময়ের অপেক্ষায়। আবার কেউ কেউ ফিরতে চেয়ে আবেদন জানিয়ে বসে আছেন। ভরসা শুধু দাদা-ই।
পদ নেই, আস্থা ফেরাতে চ্যালেঞ্জ
মুকুল রায়ের কথাই বলছি। দলে ফিরে এলেও তাঁকে সবর্ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক পদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। তৃণমূলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য মুকুলবাবু এবার নেপথ্যের কাণ্ডারি। তবে এবার চ্যালেঞ্জটা আলাদা। দক্ষিণবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচনে ভাল ফল করেছে তৃণমূল। কার্যত বিরোধীদের দাঁড়াতেই দেয়নি। যার জেরে রাজ্যে তৃতীয়বার সরকার গড়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে উত্তরবঙ্গে চিত্রটা অনেকটাই আলাদা। উত্তরবঙ্গে কার্যত তৃণমূলের প্রতি অনাস্থা ঘোষণা করে দিয়েছেন সাধারণ মানুষ।
চ্যালেঞ্জ কিংসাইজ
দার্জিলিং ও আলিপুরদুয়ার ও কালিম্পং জেলায় মুছে গিয়েছে তৃণমূল। অন্য়দিকে কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, দুই দিনাজপুরে কিছুটা মুখ রক্ষা করলেও সার্বিক ফল ভাল না। একমাত্র ভাল ফল হয়েছে মালদায়। যদিও উত্তরবঙ্গ হিসেবে মালদাকে ধরা হলেও, আদতে মালদা উত্তর ও দক্ষিণের মিশ্র সংস্কৃতি রয়েছে। তাই মালদাকে যদি বাদ রাখা হয় তাহলে উত্তরবঙ্গ নিয়ে মাথাব্যথা রয়েছে তৃণমূলের।
নতুন করে ভাবনার অবকাশ রয়েছে
ফলে উত্তরবঙ্গকে নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনা করার সময় এসেছে। দলীয় সূত্রের খবর, দলীয় অন্তর্তদন্তের রিপোর্টে জানা গিয়েছে, লাগামছাড়া দুর্নীতি এবং দলের কোন্দলের বহু জায়গায় হারতে হয়েছে। আবার শিলিগুড়ি সহ দার্জিলিংয়ে সংগঠন দুর্বল হওয়ায় আসন হাতছাড়া হয়েছে। উত্তরবঙ্গে একের পর এক হেভিওয়েট মন্ত্রী হেরে গিয়েছেন। গৌতম দেব, রবীন্দ্রনাথ ঘোষ হেরে যাওয়ার পর সংগঠন আরও দুর্বল হয়েছে। দলের মধ্যে আরও ফাটল চওড়া হয়েছে। এ ওকে দোষারোপ করছে। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হচ্ছে মুকুল রায়কে।
অভিষেক ব্যর্থ, পিকের টোটকাও ফেল
এর আগে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও পাঠানো হয়েছিল উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় সংগঠন গোছাতে। তিনি বিলাসবহুল হোটেলের বাইরে যাননি। স্টার হোটেলে গোটা উত্তরবঙ্গের কর্মী, সদস্য়দের ডেকে নোটস আর সাজেশন দিয়ে গিয়েছেন। যেগুলি পরীক্ষায় আসেনি। ফেল করে গিয়েছেন সকলে। সঙ্গে পিকে থাকলেও প্রশান্ত কিশোরের স্ট্র্যাটেজি খাটেনি উত্তরে।
দুর্নীতি সরিয়ে আস্থা ফেরাতে হবে
উত্তরবঙ্গে আসলে মুকুল রায়ের এখন দায়িত্ব হবে, আগের মনোমালিন্য দূর করে দলীয় কর্মীদের একজোট করা। সেই সঙ্গে দুর্নীতিবাজদের সামলে সৎ নেতাদের ফ্রন্টলাইনে আনা। যা অত্যন্ত কঠিন কাজের মধ্যে একটা। তাতে অনেকে নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে পারে। এই মুহূর্তে দল ছাড়ার মতো পরিস্থিতি না থাকায় বিক্ষুব্ধরা হয়তো দল ছাড়বে না, কিন্তু দলের ক্ষতি করতে পারে। তবে মুকুল রায় বড় খেলোয়াড়। সব দাওয়াই তাঁর জানা।
মমতাও যেখানে ব্যর্থ
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পারেননি। উত্তরবঙ্গকে ঢেলে দিয়েও মন গলেনি কঠিন পাহাড়ের। এবার মুকুলের পালা। উত্তরবঙ্গে আসছে তৃণমূলের এক সময়ের দ্রোণাচার্য। সময় গড়িয়ে গেলেও মুকুল কি বদলেছেন? তাঁর নিজের হাতে গড়া তৃণমূলে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। পারবেন কি গজিয়ে ওঠা পদ্মের জমিতে ঘাসফুল ফোটাতে ?