North Bengal Hills Tour: পুজোয় এবার লম্বা ছুটি। মন বলছে কোথাও একটা ঘুরে আসি। কিন্তু পরিকল্পনা রূপায়নের অভাবে সব সময় ইচ্ছেগুলি দানা বেঁধে ওঠে না। আবার বাজেটের বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। তার মধ্যে মোটামুটি দার্জিলিং পাহাড়ের কয়েকটা দিন ঘুরে আসা কিন্তু সুবিধাজনক। এমনিতে এখানে সারাবছরই লোক আসেন। তবে পুজোর মরশুম থেকে পর্যটন শুরু হয়ে যায়। তাই বিশেষ সুবিধা মেলে। কম খরচে কয়েকটা দিন ঘুরে বেড়ানোর দুর্দান্ত সুযোগ রয়েছে দার্জিলিং-কার্শিয়াংয়ে। মোটামুটি দিন পাঁচেক হাতে থাকলে প্রায় গোটা দার্জিলিং পাহাড় ঘুরে ফেলা সম্ভব। খরচ তো আগেই বলেছি, তেমন বেশি নয়।
দার্জিলিং পাহাড়ের যে কোনও জায়গায় ঘুরতে গেলে ৫ দিন আসলে যথেষ্ট নয়। এক একটি জায়গাতেই ৫ দিন কেন আরও বেশি সময় কাটাতে মন চাইবে। তবু সময় তো আর অফুরন্ত নয়, তাই কীভাবে গেলে মোটামুটি ৫ দিনে বেশ কিছু সুন্দর জায়গা ঘুরে আসতে পারবেন, তার একটা পরিকল্পনা আপনাদের দিতে পারি।
প্রথম দিন মিরিক
শিলিগুড়িতে বাসে, ট্রেনে বা বিমানে নেমে সড়কপথে মিরিক চলে যান। ঘণ্টা দেড়েক সময় লাগবে। মিরিকের সৌন্দর্য নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার নেই, মিরিক লেক, সুইস কটেজ থেকে এখানকার আবহাওয়া আকর্ষণীয়। মুহূর্তে মেঘে ঢেকে যায় চারিদিক। আবার কিছুক্ষণ পরেই রোদ ঝকঝকে আকাশ মন ভাল করে দেয়। মিরিকের আবহাওয়ায় কখনওই গরম লাগে না। এখন তো বেশ ঠান্ডা। প্রথম দিন বরাদ্দ রাখুন এই ছবির মতো ছোট্ট শহরের জন্য।
মিরিকে পৌঁছে প্রাতঃরাশ সেরে নিন। লেকের কাছেই একাধিক রেস্তোরাঁ ও রোডসাইড ফুডস্টল রয়েছে। এরপর বিখ্যাত সুমেন্দু লেক ঘুরে বেড়ান। হর্স রাইডিং করতে পারেন, লেকের আশপাশ দিয়ে। এরপর চকোরলিং মনেস্ট্রি ঘুরে পৌঁছে যেতে পারেন টিং-লিং ভিউ পয়েন্টে। মনেস্ট্রি থেকে মাত্র ৮ কিমি দূরে এই টিং-লিং ভিউ পয়েন্ট। এই ভিউ পয়েন্ট থেকে চা বাগান গোটা মিরিক ও পাহাড়ের দৃশ্যের সৌন্দর্য অবর্ণনীয়। টিং-লিং ভিউ পয়েন্ট ঘুরে সুবিধামতো লাঞ্চ সেরে বেড়িয়ে পড়ুন কার্শিয়াংয়ের উদ্দেশ্যে। মাঝের গোটা রাস্তাটাই সৌন্দর্যের খনি। পথে কোথাও ডিনার সেরে নিতে পারেন। অনেক জায়গাতেই রাস্তার ধারে ধাবা বা ছোট রেস্তোরাঁ আছে। ভাত-রুটি-মোমো সবই মেলে। রাতে কার্শিয়াংয়ে প্রচুর সরকারি-বেসরকারি থাকার জায়গা রয়েছে। বিশ্রাম নিন।
আরও পড়ুনঃ Durgapuja 2022: প্রথমা থেকে নবমী, পুজোয় কোন পোশাক পরলে মা-দুর্গার কৃপা পাবেন?
দ্বিতীয় দিন কার্শিয়াং
কার্শিয়াংয়ের সৌন্দর্য সম্পূর্ণ আলাদা । সাদা অর্কিডের শহরও বলা হয় একে। তাই সাদা অর্কিডের বাগান দেখতেই হবে আসতে পারেন। সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে বেড়িয়ে পড়ুন। কার্শিয়াং থেকে সোজা চলে যান অম্বোটিয়া টি-গার্ডেন। এই চা বাগানটি লিফ টি-র জন্য বিখ্যাত। গ্রিনটিও এখানকার সুস্বাদু। এখান থেকে যেতে পারেন ঈগল ক্র্যাগ ভিউ পয়েন্টে। এরপর লাঞ্চ সেরে ঘুরে নিন গিদ্ধে পাহাড় ভিউ-পয়েন্টে। এই ভিউ পয়েন্টটিতে দর্শণার্থীদের জন্য সারাদিন যে কোনও সময়ে বিনামূল্যে ভ্রমণের অনুমতি আছে। যেতে পারেন রহস্য রোমাঞ্চে ঘেরা ডাউহিল। এখানকার ভৌতিক গল্প লোকের মুখে মুখে ফেরে। আরেকটি দর্শনীয় স্থান সেন্ট মেরি হিল চার্চও খুব কাছে। একবার ঘুরে আসতে পারেন মনে করে। এরপর কার্শিয়াং টুরিস্ট লজে গিয়ে বিকেলের চা-জলখাবার খেয়ে নিতে পারেন। এটাই কার্শিয়াংয়ের সেরা খাবার জায়গা। এখানকার মোমো খেতে বাইরে থেকে লোক আসেন। সারাদিন ঘুরে দার্জিলিং রওনা দিন সন্ধ্য়ার দিকে। কার্শিয়াং থেকে দার্জিলিং এর দূরত্ব ২২কিমি। এক ঘন্টা মতো সময় লাগবে। দার্জিলিং ফিরে ডিনার করে নিন। হাজারটা জায়গা আছে খাবার। আপনার ইচ্ছেমতো বেছে নিলেই হলো।
তৃতীয় দিন দার্জিলিং সাইট সিন
ভোরে উঠে টাইগার হিল চলে যান। কপাল ভাল থাকলে আকাশ যদি মেঘলা না হয়, কাঞ্চনজঙ্ঘার পিছন থেকে সূর্যোদয় দেখতে পাবেন। টয়ট্রেন থেকে চিড়িয়াখানা, চা বাগান কিংবা হিমালয় দর্শন সমস্ত কিছুই পর্যটকদের কাছে বেশ মনোরঞ্জক। এরপর স্থানীয় কোনও রেস্তোরাঁ থেকে ব্রেকফাস্টটা সেরে নিন। এবার ইচ্ছে করলে হিমালয়ান মাউন্টেনিং ইনস্টিটিউটে রক ক্লাইম্বিং করতে পারেন। বিশ্বের প্রথম এভারেস্টজয়ীর অন্যতম তেনজিং নোরগের জিনিস দেখতে পাবেন সংগ্রহশালায়। রোপওয়ে ট্যুর মিস করলে পস্তাবেন। রোপওয়ে থেকে মাত্র ১কিমি দূরে অবস্থিত পিস প্যাগোডা। এখান থেকেও হিমালয়ের অসাধারণ দৃশ্য প্রত্যক্ষ করতে ভুলবেন না। রয়েছে বাতাসিয়া লুপ। টয় ট্রেনে বসে এই সুন্দর প্রকৃতিকে ক্যামেরাবন্দী করতে কিন্তু একদম ভুলবেন না। কাছেই ঘুম মনাস্ট্রি দেখে নিন চট করে। বিকেলে অলস সময় কাটানোর জন্য বরাদ্দ রাখুন। আর তার জন্য আদর্শ জায়গা হল দার্জিলিং ম্যাল। সন্ধ্যায় হালকা খাবার থেকে রাতের আহার জাস্ট সময় কাটান নিজের মতো।
চতুর্থ দিন কালিম্পং
চতুর্থ দিন সকালে উঠে পৌঁছে যান কালিম্পং। সকালে দার্জিলিং-এ প্রাতঃরাশ সেরে একটা ছোট গাড়ি চেপে ৫০ কিমি দূরে কালিম্পং। পাহাড় ও চা বাগানে মোড়া এই শহরটিতে যেতে সময় লাগবে ২ ঘণ্টার কাছাকাছি। কালিম্পঙের দূরবিনদারা পাহাড়,দূরবিন মনেস্ট্রি ঘুরে নিন ঝটপট।
মনাস্ট্রি থেকে মাত্র ৫ কিমি দূরে অবস্থিত এই অঞ্চল থেকে আপনি অনেকগুলো ভিউ পয়েন্ট পাবেন। প্রতিটি আলাদা সৌন্দর্যের খনি। স্থানীয় হাট বসে এখানে। নাম হাটবাজার। স্থানীয় স্টল থেকে নানা জিনিস স্মারক হিসেবে সংগ্রহ করতে পারেন। কালিম্পং থেকে এবার বেড়িয়ে পড়ুন লোলেগাঁও এর উদ্দেশ্যে। কালিম্পং জেলার দৃশ্যসদৃশ একটি ভ্রমণ স্থান হল লোলেগাঁও। ভিড় খানিকটা কম, তাই খোলামেলা ভ্রমণের জন্য লোলেগাঁও আদৰ্শ।
পঞ্চম দিন লাভা-লোলেগাঁও-নেওড়া ভ্যালি
পঞ্চম দিন লোলেগাঁওয়ের অরণ্যের সৌন্দর্য উপভোগের মধ্যেই ব্রেকফাস্ট সেরে নিন। পৌঁছে যেতে পারেন বোখিম খাসমহল-এর ক্যানপি ওয়াকে। এখানে কাঠের ঝুলন্ত ব্রিজ পরিদর্শন করে আসতে কিন্তু একদম ভুলবেন না । এখানে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে লাঞ্চ সেরে নিন। এরপর রওনা হন লাভার উদ্দেশ্যে। এখা থেকে মাত্র ৫০ কিমি দূরে লাভা। মনাস্ট্রির পবিত্রতায় মুগ্ধ হতে চাইলে ঘুরে আসতে পারেন লাভা মনেস্ট্রি। এখান থেকে ছোট ট্রিপে রওনা দিতে পারেন নেওড়া ভ্যালি ন্যাশনাল পার্কে। এখানে সাফারিও করতে পারেন। কাছে ছাঙ্গে জলপ্রপাত ঘুরে নিন। ছোট কিন্তু প্রাণবন্ত জলপ্রপাতের সৌন্দর্য চিরস্মৃতি হয়ে থাকবে। বিকেলে চা-স্ন্যাক্স খেয়ে রওনা দিন ফের দার্জিলিং। ইচ্ছে করলে লাভাতেও থাকতে পারেন। তবে আগে থেকে বুকিং করতে পারেন। লাভা থেকে কাছের রেলস্টেশন নিউ মাল জংশন। এ ছাড়া এনজেপির জন্য সরাসরি গাড়ি ভাড়া করে নিতে পারেন।
কীভাবে যাবেন?
রেল পথ কিংবা সড়কপথের সাহায্যে খুব সহজেই আপনি পাহাড়ের চেনা-অচেনা রাস্তা ধরে খুব সহজেই পৌঁছে যেতে পারেন উত্তরবঙ্গের বিখ্যাত ভ্রমণস্থলগুলোতে। ভারতের অন্যান্য রাজ্য থেকে উত্তরবঙ্গ ভ্রমণ করতে চাইলে বিমানে চেপে পৌঁছে যেতে পারেন বাগডোগরা বিমানবন্দর অথবা ট্রেনে করে পৌঁছে যেতে পারেন এনজেপি রেল স্টেশন।