কাছ থেকে ৯ লাখ, কারও কাছে ৫ লাখ, কারও কাছে ৭ লাখ টাকা। পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং ব্রাত্য় বসুর ঘনিষ্ঠ পরিচয় দিয়ে এক প্রাথমিক শিক্ষক চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। সেই প্রতিশ্রুতি দিয়ে একাধিক বেকারের কাছ থেকে সব মিলিয়ে প্রায় কোটিখানেক টাকাও তুলেছে। পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হওয়ার পর পালিয়ে গিয়েছে ওই অভিযুক্ত শিক্ষক বলে অভিযোগ।
প্রাথমিক শিক্ষক পদে চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে একাধিক বেকার যুবক-যুবতীর কাছ কয়েক লক্ষ টাকা করে আদায় করেছিলেন। সব মিলিয়ে কোটি টাকার কাছাকাছি তুলেছে ওই শিক্ষক। আপাতত পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হতেই এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দিয়েছে ওই শিক্ষক।
আরও পড়ুনঃ Partha Chatterjee's Ph.D. Degree Is In Question : পার্থর PhD নিয়ে এবার প্রশ্ন, সরব
অভিযুক্তের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্ত শিক্ষকের নাম মান্না দাস। তার বাড়ি আলিপুরদুয়ার জেলার ফালাকাটা ব্লকের হরিনাথপুর গ্রামে। সে শামুকতলা থানার সম্বলপুর আইটিডিপি স্কুলের শিক্ষক। তাঁর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুলে শামুকতলা থানার পাশাপাশি ডিপিএসসির চেয়ারম্যানের কাছেও লিখিত অভিযোগ জমা পড়েছে। কিন্তু তারপরেও ওই অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে প্রতারিতদের অভিযোগ।
পার্থ ও ব্রাত্যর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচয় দিয়ে টাকা আত্মসাৎ
মূলত প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচয় দিয়েই নিজের প্রভাব তৈরি করেছিল ওই শিক্ষক বলে অভিযোগ। স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক সহ এলাকার বাসিন্দারা তা বিশ্বাসও করতেন। আর সেই পরিচয় ও বিশ্বাসের সুবাদে এলাকার অনেককে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে কয়েক লক্ষ টাকা করে আদায় করেছে। চাকরি অবশ্য কারওই হয়নি। আপাতত বেপাত্তা সেই শিক্ষক।
আরও পড়ুনঃ Maruti Suzuki S-PRESSO-র চাহিদা বিদেশেও তুঙ্গে, দেদার রফতানি
২০২১ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে আলিপুরদুয়ার শহর সংলগ্ন শামুকতলা থানার সম্বলপুর আইটিডিপি স্কুলে চাকরিতে যোগ দেন মান্নাবাবু। এলাকায় প্রতিপত্তি বাড়াতে নিজেকে মন্ত্রী, আমলাদের নাম করে ঘনিষ্ঠতার কথা বলতেন। এমনকী তিনি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় এবং বলে পরিচয় দিতে শুরু করেন ওই শিক্ষক। তার কথার চক্রে ফেঁসে চাকরির আশায় অনেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে সে যার কাছে যেমন পায়, তুলে নেয়।
টাকা ও আসল শংসাপত্র নিয়ে রেখেছে ওই শিক্ষক বলে অভিযোগ
কেউ জানান, তার কাছ থেকে ৯ লাখ কারও ৫ লাখ, কারও ৭ লাখ টাকা সঙ্গে আসল নথি নিয়ে বসে আছে ওই শিক্ষক বলেও অভিযোগ। টাকাও মেলেনি, নথিও নয়, চাকরি তো দূর অস্ত। বিষয়টি নিয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। আরেক যুবক জানান, দিদির চাকরির জন্য ৫ লক্ষ টাকা দিয়েছেন। তাঁরাও চাকরি না পেয়ে ডিপিএসসির চেয়ারম্যানকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছেন।
আরও পড়ুনঃ Alert For WhatsApp Users: WhatsApp ইউজার্সরা সাবধান! সতর্ক না থাকলে হতে পারেন সর্বস্বান্ত
হেডমাস্টারের সঙ্গেও প্রতারণা
এদিকে, ওই শিক্ষক যে শুধু এলাকার যুবক-যুবতীদেরই প্রতারিত করেছেন, তা নয়। যে স্কুলে চাকরি করতেন, সেই স্কুলের টিআইসির থেকেও টাকা হাতিয়েছেন। প্রতারণার জাল বিছিয়ে আরও বিভিন্ন জায়গা থেকে তিনি টাকা হাতিয়েছেন। এখন আর তাঁর দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। স্কুল সূত্রে খবর, গত ২৭ জুন থেকে ওই শিক্ষক স্কুলে আসছেন না। এমনকি তিনি কারও ফোনও ধরছেন না। আদৌ তিনি কোথায় আছেন, সেটাও কেউ জানেন না।
সম্বলপুর আইটিডিপি স্কুলের টিচার ইনচার্জ তাপস ভাওয়াল সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ওই শিক্ষক তাঁর কাছ থেকে মায়ের শরীর খারাপের কথা বলে ২২ হাজার টাকা ধার নিয়েছেন। এমনকী তাঁকে গ্যারান্টার রেখে ব্যাংক থেকে ৬ লক্ষ টাকা ঋণ নিয়েছেন। এদিকে, ব্যাংক কিস্তির জন্য আমাকে ফোন করছে। এখন তিনি পালিয়ে গিয়েছেন। তাই গোটা বিষয়টি আমি এসআই এবং চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি। এখন কে কী করবেন তা বুঝে উঠকে পারছেন না। গোটা বিষয়টি সামনে আসায় স্তম্ভিত শিক্ষামহল।