পুজোর আগে মালদা জেলায় গঙ্গা-ফুলহরের দাপট। জলমগ্ন নদী তীরবর্তী এলাকার ৫০-৬০ হাজার মানুষ। এমনকী সারাবছর যেই কোশী নদীতে জল থাকে না, লোকে মরাকোশী বলেই জানে, সেই নদীও ফুঁসছে জলোচ্ছ্বাসে। জেলার রতুয়া বহু এলাকা জলমগ্ন। কার্যত জলের তলায় রতুয়ার মহানন্দাটোলা এলাকা। জল ঢুকে বিপর্যস্ত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা কেন্দ্রও। বাড়ছে জলবাহিত রোগ। অথচ পরিষেবা দেওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই।
গত ১৫ দিন ধরেই জল বাড়ছে মালদার বিভিন্ন নদীতে। জানা গিয়েছে, বিশেষ করে সেপ্টেম্বর প্রথম সপ্তাহ থেকে গঙ্গা-ফুলহরের জল বেড়ে প্লাবিত হয়েছে মহানন্দাটোলার বিস্তীর্ণ এলাকা। গঙ্গা এবং ফুলহরের জলে প্লাবিত বিস্তীর্ণ এলাকা। এক সঙ্গে দুই নদীর জল বাড়ায় গ্রামগুলিতে জল ঢুকেছে, জল বের হওয়ার মতো পরিস্থিতি নেই। এই পরিস্থিতিতে এখন ভরসা একমাত্র বৃষ্টি বন্ধ হয়ে জল শুকনো। মালদার গঙ্গা-ফুলহরের পাড়ের প্রায় ২০টি গ্রাম আপাতত জলবন্দী।
একপ্রকার বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে মহানন্দাটোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের একাধিক গ্রাম। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে ১০টি গ্রাম ইতিমধ্যে জলের তলায়, জলমগ্ন আরও অন্তত ১০টি গ্রাম। তবে সংখ্যাটা প্রতিদিনই এক-দুটি করে বাড়ছে। জেলা সদর ও অন্যান্য এলাকার সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে। বিপদের আশঙ্কায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে বেশ কিছু জায়গায়। কিছু গ্রামে এমনিই দুর্যোগে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। বহু একর কৃষিজমি জলের নীচে। দুএকদিনের মধ্যে জল না নামলে বহু মন ধান নষ্ট হয়ে যাবে। সব মিলিয়ে দুর্বিসহ অবস্থা গ্রামগুলিতে, পুজোর আনন্দ মাটি হতে চলেছে।
সমস্যা দেখা দিয়েছে পানীয় জলেরও। বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, প্রশাসনের তরফে কোনও সাহায্য মেলেনি। মালদা জেলা প্রশাসনের তরফে তৎপরতা শুরু হলেও তাতেও কাজ হচ্ছে না। আসলে জল না নামলে সাহায্যও করা সম্ভব হচ্ছে না।
এরই মধ্যে জল বৃদ্ধি হয়ে চিন্তা বাড়িয়েছে কোশী নদী। কোশী নদীতেও কয়েকদিন ধরে শুরু হয়েছে নদীর পাড় ভাঙন। আতঙ্কে রাত কাটাচ্ছেন প্রায় ৫০-৬০ হাজার মানুষ। কোশী নদীর তীরের সাত-আটটি গ্রাম এখন রাত জাগছে। আসলে গঙ্গার অতিরিক্ত জল কোশি নদীতে ঢুকতে শুরু করেছে। ফলে ফুলে-ফেঁপে উঠেছে কোশি নদী। শুরু হয়েছে ভাঙন। পার ভাঙতে ভাঙতে কোশী নদী প্রায় ফুলহরের কাছাকাছি চলে এসেছে। এভাবে ভাঙতে থাকলে ফুলহরের সঙ্গে মিশে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। যেভাবে কোশী নদীর পাড়ে ভাঙন দেখা দিয়েছে, তাতে শুধু রতুয়া-১ ব্লকের বিলাইমারি-মহানন্দটোলাই নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়বে মানিকচক ব্লকের ভূতনি চরের বিস্তীর্ণ অংশ।
জলপাইগুড়ির বানারহাটের একাধিক এলাকাও জলমগ্ন। রাতভর টানা বৃষ্টি হয়েছে ভুটান পাহাড় ও ডুয়ার্সে। জল বেড়েছে ডুডুয়া, জলঢাকা, কালুয়া, আংরাভাসা সহ একাধিক নদীর। সবচেয়ে বেশি জলমগ্ন বানারহাট ব্লকের গয়েরকাটা।