চলতি মাসের শেষে বিশ্বভারতীতে আসতে চলছে ইউনেস্কোর একটি প্রতিনিধি দল। এই দল বিশ্বভারতীর ২৩ বাড়ি,স্থাপত্য ঘুরে দেখবে। পরবর্তী সময়ে এই দলের দেওয়া রিপোর্টের ভিত্তিতে এই বাড়ি এবং স্থাপত্যের একাংশ ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট বা বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে ঘোষিত হতে পারে। আর এই কথা মাথায় রেখে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের নজরদারিতে চলছে সংস্কারের কাজ। সংস্কারের পাশাপাশি যে সব স্থাপত্য ভেঙে পড়েছে তা নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে।
বিশ্বভারতীর আশ্রম প্রাঙ্গনে উপাসনা গৃহ, শান্তিনিকেতন গৃহ ছাড়াও উত্তরায়নে কবির স্মৃতি বিজড়িত উদয়ন বাড়ি, পুনশ্চ, উদীচি, কোনার্ক, শ্যামলীর মতো ঐতিহ্য গৃহগুলির বয়স অনুপাতে নিয়মিত সংস্কার প্রয়োজন। কবির অত্যন্ত প্রিয় শতবর্ষ প্রাচীন উত্তরায়নের প্রথম বাড়ি 'কোনার্ক' আজ রুগ্ন। ছাদে জল জমে স্যাঁতসেঁতে ভাব। ড্যাম্প ধরে গিয়েছে। আশ্রমিকদের কথায়, ১৯১৯ সালে এই বাড়িটি আশ্রম সীমানার বাইরে প্রথম তৈরি করান রবীন্দ্রনাথ। ওই বছরই নভেম্বর মাসে উত্তর-পশ্চিম দিকে 'উত্তরায়ন' নাম দিয়ে মাটির বাড়িতে কবি বসবাস শুরু করেন। পরে বাড়িটি পাকা করে তোলা হয়। কবি তার নাম দেন 'কোনার্ক'। একই অবস্থা আরও একটি ঐতিহ্য গৃহ 'উদয়ন'-এর। শান্তিনিকতেনের উত্তরায়ন প্রাঙ্গনের 'উদয়ন' বাড়ি রবীন্দ্রনাথের বাসভবনগুলির মধ্যে সর্বাধিক কাজে ব্যবহৃত হয়েছে। কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ও শিল্পী-স্থপতি সুরেন্দ্রনাথ করের পরিকল্পনা ও নৈপুণ্যে তৈরি এই বাড়ির দোতলার ঘরই পৃথিবীর রবীন্দ্রপ্রেমী মানুষের কাছে 'কবিকক্ষ' বলে সমাদৃত। কারণ এ ঘরেই দীর্ঘ দিন কবি বসবাস করেছেন। অসুস্থ অবস্থায় সেখান থেকেই কলকাতার উদ্দেশ্যে শেষযাত্রা করেন কবি। এই বাড়ির বারান্দাতেই কবির শেষ জন্মদিনের অনুষ্ঠানে 'সভ্যতার সংকট' ভাষণটি প্রচারিত হয়। সেই উদয়ন বাড়িরই বৈঠক খানা, যেখানে কবি মিলিত হতেন দেশ বিদেশের বিদ্বজনদের সঙ্গে, তারই পেছন দিকের দু'ধারের বারান্দার সিলিং থেকে খসে পড়ছে চাঙর। বেরিয়ে পড়েছে লোহার বিম। কঙ্কালসার দশা বললে বিন্দুমাত্র ভুল বলা হয় না।
গত তিন বছরেরও বেশি সময় ধরে ভারত সরকারে পুরাতত্ত্ব বিভাগের (এএসআই) দায়িত্বে সংস্কার শেষ হয়েছে 'শ্যামলী' বাড়ি। রবীন্দ্র ভবনের তত্ত্বাবধানে থাকা শান্তিনিকেতেনের ঐতিহ্যবাহী একের পর এক বাড়ির এই দশা বিশ্বভারতী ও রবীন্দ্রভবনের উদ্বেগকে বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুণ। কারণ এই বাড়িগুলির সিংহ ভাগই সেই সময় খুব সাধারণ সামগ্রী দিয়ে তৈরি হয়েছিল। ফলে তার আয়ুও শেষের দিকে। একই ভাবে এক বছর আগে ঝড়ে পাঠভবন চত্তরে থাকে ঘন্টাতলার উপর গাছ ভেঙে পড়ে। ঘন্টাতলা এখন সংস্কার করা হচ্ছে। একই অবস্থা চৈত্য বাড়ির। বিশ্বভারতী সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব বিভাগের একটি ৩০জনের দল বিশ্বভারতীর বিভিন্ন বাড়ি এবং স্থাপত্য সংস্কারের কাজ করছে। আগামী ২৮সেপ্টেম্বর থেকে ৩রা অক্টোবরের মধ্যে ইউনেস্কোর একটি দল আসছে। তারা ঘুরে দেখবে বিশ্বভারতীর ২৩বাড়ি ও স্থাপত্য। এই বিষয়ে বিশ্বভারতীর মুখপাত্র অনির্বান সরকার কিছু বলতে অস্বীকার করেন।