বাগডোগরা বিমানবন্দরের নতুন সম্প্রসারণ ও আধুনিকীকরণের কাজ শুরু হতে চলেছে। দীর্ঘদিন ধরে আটকে থাকার পর ও টানাপোড়েনের পর এটি অবশেষে দিনের আলো দেখতে চলেছে। বড়দিনের আগেই কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে জানানো হয়েছে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের তরফে।
বাগডোগরা বিমানবন্দরের অ্যাডভাইসরি কমিটির চেয়ারম্যান তথা দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তা জানিয়েছেন, টেন্ডার প্রক্রিয়া হয়ে গিয়েছে। কিছু দিনের মধ্যেই কারা বরাত পাবে তা ঠিক হবে। আর দেরি না করে ডিসেম্বরের মধ্যেই কাজ শুরু হবে। দুই থেকে আড়াই বছরের মধ্যে প্রথম পর্যায়ের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে বলে আশা করেছেন তিনি।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, গত সেপ্টেম্বরে ১০৪ একরের মতো জমি অধিগ্রহণ এবং সমীক্ষার করে প্রথম পর্যায়ের ৯৫০.৪৫ কোটি টাকার নতুন টার্মিনাল ভবনের পরিকাঠামো উন্নয়নের টেন্ডার করা হয়েছে। প্রায় এক লক্ষ বর্গমিটারের নতুন টার্মিনাল ভবন এবং আধুনিক পরিকাঠামো তৈরি হবে। ২০২২ সালে এপ্রিল মাসে ‘এয়ারপোর্ট অথরিটি অব ইন্ডিয়া’ প্রথম বাগডোগরার নতুন বিমানবন্দরের নকশা এবং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের জন্য দেশের তো বটেই, এশিয়ার নামকরা একটি সংস্থাকে পরামর্শদাতা হিসাবে নিয়োগ করা হয়। কাজের লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে ২০২৬ সালের পুজোর আগে। কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণমন্ত্রক বাগডোগরার জন্য ১,৮৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দের ঘোষণা করেছে। এই টেন্ডারে প্রথম পর্যায়ে ৯৫০.৪৫ কোটি টাকার বরাদ্দের টেন্ডার হয়েছে।
বুধবার ১৫ নভেম্বর ছিল প্রায় টেন্ডার জমার শেষ দিন। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, দেশের অন্যতম তিনটি বড় সংস্থা কাজে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। আজ, বৃহস্পতিবার টেন্ডার খোলার পর কতগুলি সংস্থা আবেদন করেছে তা স্পষ্ট হবে। তার পরে, দু’সপ্তাহের কিছু বেশি সময় টেন্ডারে সর্বনিম্ন দর রাখার সংস্থার পরিকাঠামো, কারিগরি ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা যাচাই সংক্রান্ত নথিপত্র পরীক্ষা হবে। শেষে, দিল্লি ও কলকাতার অনুমোদনে সংস্থা নিয়োগ করে ডিসেম্বরই ভূমিপুজো করে কাজ শুরু হয়ে যাবে।
টার্মিনালের বর্তমান অবস্থা
বর্তমান বিমানবন্দরের টার্মিনালের আয়তন সাড়ে আট হাজার বর্গমিটারের মতো। যাতে বছরে সাড়ে সাত লক্ষ থেকে ১০ লক্ষ যাত্রী ধারণ করা যায়। সকাল থেকে বিকাল অবধি বিমানবন্দর ভিড়ে ঠাসা থাকে। অনেকেই দাঁড়ানো বা বসার ঠিকঠাক জায়গা পান না। উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ জেলা এবং সিকিম, বিহার সহ প্রতিবেশী দেশ নেপাল, ভুটান এবং বাংলাদেশের একটা অংশের মানুষ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল শিলিগুড়ির বাগডোগরা বিমানবন্দরে উপর। মূলত শিলিগুড়ি উত্তর পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার হওয়ায় দিনের পর দিন গুরুত্ব বেড়েই চলেছে বাগডোগরা বিমানবন্দরের।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গিয়েছে, বর্তমানে বাগডোগরা বিমানবন্দরের ডোমেস্টিক টার্মিনাল দিয়ে প্রতিদিন ৩৬ টি বিমান চলাচল করে। এতে প্রতিদিন গড়ে ৮ থেকে ৯ হাজার যাত্রী ওই বিমানবন্দর দিয়ে যাতায়াত করে ৷ এর মধ্যে উত্তরবঙ্গে আসা পর্যটকদের একটা বড় অংশ নির্ভর করে এই বাগডোগরা বিমানবন্দরের ওপর। তবে বিমানবন্দরের সমস্ত গুরুত্ব বিবেচনা করে বাগডোগরা বিমানবন্দরকে সম্প্রসারণ করে আন্তর্জাতিক মানের করার প্রস্তাব নেওয়া হয় কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ। কিন্তু এতে সমস্যা হয়ে দাঁড়ায় জমি অধিগ্রহণ। শেষমেষ সমস্ত সমস্যা কাটিয়ে উঠে রাজ্য সরকারের তরফে বাগডোগরা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে হস্তান্তরিত করা হয় জমি।