Coochbehar Double Murder Case: ঘরের ভেতরে শো কেসে কম্বল দিয়ে পেঁচানো একটি মৃতদেহ। বাড়ির সেপটিক ট্যাঙ্কে আরও একটি প্লাস্টিকে মোড়া লাশ। পাড়ার সম্ভ্রান্ত বাড়িতে এমন ঘটনা সামনে আসতেই হতভম্ব এলাকাবাসী। পুলিশ এসে যখন একে একে দেহগুলি উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছে, তখনও বিশ্বাস হচ্ছে না বাড়ির মালিক ও তার বোনপোর এমন মর্মান্তিক পরিণতি হয়েছে। খোঁজ মিলছে না বাড়ির ছেলেরও। বৈশ্যবাড়িকে ঘিরে সোমবার দিনভর চলল নাটক।
কোচবিহারে একই বাড়ি থেকে জোড়া মৃতদেহ উদ্ধার। যাকে ঘিরে রাজ্যজুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। সোমবার ঘটনাটি ঘটে জেলার ডাউয়াগুড়ির বৈশ্যপাড়ায়। এদিন ঘরের ভেতরে শো কেসে কম্বল দিয়ে পেঁচানো অবস্থায় এক ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ বাড়ির সেপটিক ট্যাংকের ভিতর থেকে আরও একটি দেহ উদ্ধার করে। দ্বিতীয় দেহটি কার সেটা প্রথমে বুঝতে পারেনি পুলিশ। পরে জানা যায়, মাসখানেক আগে থেকে নিখোঁজ ওই বাড়িরই এক বাসিন্দার মৃতদেহ ওটি।
এদিন সকালে রোজকার মাছওয়ালা দরজার সামনে চাপ চাপ রক্ত পড়ে থাকতে দেখেন। তিনি একটি চিঠিও আবিষ্কার করেন বাড়ির বারান্দা থেকে। চিঠিতে লেখা ছিল, ওই বাড়ির ছেলে প্রণবকুমার বৈশ্য তাঁর বাবাকে চিকিৎসার জন্য বাইরে কোথাও নিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু বাড়িতে তালা না থাকায় এবং আচমকা কার উদ্দেশ্যে ওইরকম চিঠি লিখে রেখে গিয়েছেন প্রণব তাও বুঝতে না পেরে সন্দেহ হওয়ায় তিনিই পুলিশে খবর দেন।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান পুলিশ সুপার দ্যুতিমান ভট্টাচার্য, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কৃষ্ণগোপাল মিনা সহ পুলিশের আধিকারিকরা। পুলিশ এসে ঘরের ভেতরে শো কেস থেকে কম্বল দিয়ে পেঁচানো অবস্থায় বাড়ির মালিক বিজয় কুমার বৈশ্যের দেহ উদ্ধার করে। এরপর ঘরে তল্লাশি চালাতে গিয়ে সেপটিক ট্যাংকে প্লাস্টিক দিয়ে মোড়া আরও একটি দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বাড়িতেই গোপাল রায় নামে এক আত্মীয় থাকতেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনিও মাসখানেক আগে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যান। এরপর পরীক্ষা করে জানা যায়, সেটি নিখোঁজ গোপালেরই। মৃত বিজয়ের ছেলে প্রণবও নিখোঁজ। তিনি পলাতক নাকি তিনিও পরিস্থিতির শিকার তা নিয়ে আবার নতুন করে রহস্য দানা বাঁধছে।
দেহগুলি ময়নাতদন্তে পাঠানো হয়েছে। পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, প্রণবই দাদা এবং বাবাকে খুন করেছেন। সকলের নজর এড়ানোর জন্য ওই চিঠিও সেই লিখেছিলেন বলে অনুমান তদন্তকারীদের। তাঁর মায়ের মৃত্যুও অস্বাভাবিক বলে দাবি এলাকাবাসীর।
এদিন সকালে মাছ দিতে এসে দুয়ারে চাপ চাপ রক্ত পড়ে থাকতে দেখে চমকে উঠেছিলেন ব্যবসায়ী। দুয়ারে একটি চিঠিও পান তিনি। যেখানে লেখা, ‘বাবাকে নিয়ে চিকিৎসার জন্য চেন্নাইয়ে যাচ্ছি’। স্থানীয়দের দাবি, বৈশ্য পরিবারের ৩ সদস্য। বাবা বাবুল চন্দ্র বৈশ্য ও তাঁর স্ত্রী এবং তাঁদের একমাত্র ছেলে প্রণব। তবে প্রণবের পিসতুতো দাদা গোপাল রায়ও তাঁদের সঙ্গে থাকতেন।
কিছুদিন আগেই প্রণবের মায়ের মৃত্যু হয়। কিন্তু এরই মধ্যে রহস্যজনকভাবে গায়েব হয়ে যান গোপালও। সেই সময়েই প্রণবই থানায় দাদার নামে ‘মিসিং ডায়েরি’ করেছিলেন। কোভিডের সময়ে থেকেই নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছিলেন প্রণব, দাবি স্থানীয়দের। মা, বাবা এবং পিসতুতো দাদার সঙ্গে হামেশাই অশান্তি করতেন তিনি।
এই গোটা ঘটনায় হতবাক গ্রামবাসীরা। তাঁদের কথায়, ‘প্রণব শিক্ষিত ছেলে। বৈশ্য পরিবারের আর্থ-সামাজিক অবস্থান ভালো। লকডাউনের সময় নেশায় ডুব দিতে শুরু করেন তিনি। তবে তাঁর পরিণতি যে এই হবে, তা ভাবতেও পারিনি।’ তবে তাই খুনের কারণ কি না, তা স্পষ্ট নয়।