Advertisement

Durgapuja 2023: নরবলি উঠলেও এখনও লাগে মানব রক্ত, ৫০০ বছর ধরে পূজিত হচ্ছেন বড়দেবী

Durgapuja 2022: ৫০০ বছরের বেশি পুরনো কোচবিহারের বড়দেবীর পুজো রহস্য-রোমাঞ্চে ভরা। পুজো শুরুর কাহিনী যেমন হাড় হিম করে দেয়, তেমনই এখনও নররক্ত উৎসর্গ করার ঘটনা শিহরিত করে। রাজ্যের অন্যতম প্রাচীন পুজোকে ঘিরে রয়েছে নানা রহস্য, রোমাঞ্চ।

মানুষের রক্ত দিয়ে পুজো, গা ছমছমে কোচবিহারের বড়দেবীর পুজো
সংগ্রাম সিংহরায়
  • কোচবিহার,
  • 24 Sep 2023,
  • अपडेटेड 8:07 PM IST
  • কোচবিহারের বড়দেবীর পুজো ৫০০ বছর পুরনো
  • পুজোকে ঘিরে ছড়িয়ে রয়েছে নানা মিথ
  • এখনও নররক্ত উৎসর্গ করা হয়

Durgapuja 2023 Coachbeha Baradevi 500 Years Old Puja: রহস্য আর মিথে ঘেরা কোচবিহারের বড়দেবী। মা দুর্গা এখানে পুজিত হন বড়দেবী রূপে। মানুষের রক্তের স্বাদ পেলে তবেই এখানকার পুজো সম্পন্ন হয়। এই একবিংশ শতাব্দীতেও, এর কখনও অন্যথা হয় না। এখানকার পুজো শুধু রোমহর্ষক, তাই নয়, এই পুজোকে ঘিরে এত কাহিনী প্রচলিত আছে, কোনটা সত্যি, কোনটা মিথ্যে, তা গুলিয়ে যায়। ফলে পুজোতে আলাদা 

অন্য পুজো থেকে সম্পূর্ণ আলাদা

আর পাঁচটা দুর্গাপুজোর থেকে ভিন্ন নিয়মে পিুজো হয় কোচবিহারের বড়দেবীর। শ্রাবণের শুক্লা অষ্টমী থেকে পুজোর সূচনা। কোচবিহারের ভাঙ্গরাই মন্দিরে একটি ময়না গাছ কেটে সেটিকে মন্দিরে নিয়ে এসে মহাস্নান করানো হয়। সঙ্গে চলে বিশেষ পুজো। এই ময়না কাঠ দিয়েই তৈরি হয় বড়দেবীর প্রতিমার মেরুদণ্ড। ভাঙ্গরাই মন্দিরে বিশেষ পুজোর পর সন্ধ্যায় সেই ময়না কাঠ নিয়ে যাওয়া হয় কোচবিহারের মদনমোহন মন্দিরে। সেখানে এক মাস ধরে চলে বিশেষ পুজো। এই পুজোতে পায়রা বলির প্রচলন রয়েছে।

পুজেকে ঘিরে থাকা মিথ

স্থানীয় জনশ্রুতি অনুসারে কোচবিহার রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা মহারাজা বিশ্বসিংহ শৈশবকালে তাঁর তিন ভাই শিষ্যসিংহ, কুমার চন্দন ও কুমার মদন এবং শৈশবের সঙ্গীদের নিয়ে ১৫১০ খ্রিস্টাব্দে অসামের ‘‌চিকনা’‌ নামক গভীর বনে ময়না কাঠের ডালকে দেবী দুর্গা কল্পনা করে বনফুল, ফল দিয়ে পুজো করেছিলেন।

প্রচলিত আছে, খেলাচ্ছলে এক সঙ্গীকে রাজকুমার বিশ্বসিংহ পাঁঠার মতো বেঁধে বলির মতো খেলতে শুরু করেন। খেলতে খেলতেই বিশ্বসিংহ সামান্য কুশ দিয়ে আঘাত করা মাত্রই দেবীর অলৌকিক ক্ষমতায় সেই বন্ধুর মাথা ধর থেকে আলাদা হয়ে যায়। মহারাজা বিশ্বসিংহ সেই বন্ধুর ধরহীন মাথা দেবীর নামে নিবেদন করেন। কথিত আছে যে, সেই সময় দেবী দুর্গার আশীর্বাদেই নাকি মহারাজা বিশ্বসিংহ ‘‌চিকনা’‌-‌র অধিপতি তুরকা কোতোয়ালকে পরাজিত ও নিহত করে কোচবিহারের সিংহাসনে আসীন হন। দেবী দুর্গা সেই সময় নিজের হাতের কঙ্কন ও তীক্ষ্ণ খাঁড়া উপহার দেন তাঁকে।

Advertisement

বর্তমান মূর্তি প্রতিষ্ঠা পুজোর প্রচল করেন বিশ্বসিংহের পুত্র নরনারায়ন

এখানে ময়না গাছের ডালকে দেবী দুর্গা কল্পনা করে পুজো শুরু হয়েছিল। তাই আজও ময়না গাছের ডালকেই রাধাষ্টমীর দিন পুজো করে দেবীপ্রতিমা কল্পনা করে পুজো করা হয়। মহারাজা বিশ্বসিংহের পুত্র কোচবিহারের দ্বিতীয় মহারাজা নরনারায়ণ স্বপ্নাদেশ পেয়ে দশভুজা দুর্গামূর্তির পূজার প্রচলন করেন।

চিলা রায় ও নরনারায়নকে ঘিরে কিংবদন্তী

কোচবিহারের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে থাকা মিথ অনুযায়ী, মহারাজা নরনারায়ণের ভাই সেনাপতি চিলা রায় কোচবিহারের সিংহাসন দখলের লোভে দাদা নরনারায়ণকে হত্যা করবার জন্য রাজসভায় যান। কিন্তু, সেখানে পৌঁছে তিনি দেখতে পান, স্বয়ং ভগবতী দুর্গা দশ হাত দিয়ে রাজা নরনারায়ণকে ঘিরে রক্ষা করছেন। চিলা রায় এই অলৌকিক দৃশ্য দেখে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে দাদার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কিন্তু, এই ঘটনা শুনে তিনি দেবী দর্শন করতে না পারার জন্য নিজেকে ভাগ্যহীন মনে করেন নরনারায়ণ এবং চিলা রায়কে ভাগ্যবান মনে করেন।

বড়দেবীর স্বপ্নাদেশ

নিজের ভাগ্যে দেবী দর্শন না ঘটায় মনের দুঃখে অন্ন জল ত্যাগ করে নির্জনবাস করতে আরম্ভ করেন তিনি। জনশ্রুতি আছে যে ৩ দিন পর গভীর রাতে দেবী দুর্গা তাঁকে স্বপ্নে দর্শন দিয়ে মহিষাসুরমর্দিনী রূপে পুজো করতে নির্দেশ দেন।

এখনও স্বমহিমায় চলছে পুজো

মহারাজা নরনারায়ণ সেই স্বপ্নে দেখা মূর্তি স্থাপন করে শারদীয়া দুর্গাপুজোর প্রচলন করলেন। কোচবিহার রাজবাড়ির বড়দেবী দুর্গার চেহারা বেশ ভীতি উদ্রেককারী। তাঁর গায়ের রঙ লাল, তাঁর দ্বারা দলিত অসুরের গায়ের রঙ সবুজ। দেবীর বাহন সিংহ অসুরের পায়ে কামড়ে ধরে রয়েছে। আর অসুরের হাতে কামড় বসিয়েছে একটি বাঘ। দেবীর দু’পাশে অবস্থান করছেন, দেবীর দুই সখি। জয়া-বিজয়া। তবে এখানে দুর্গাপুজোয় সরস্বতী, লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিক থাকেন না। এই মূর্তি মহারাজা নরনারায়ণের স্বপ্নে দেখা দেবী দুর্গার রক্তবর্ণ রূপের প্রকাশ। সময় পেরিয়ে গিয়েছে প্রায় ৫০০ বছর। সেই রাজতন্ত্র আর নেই। কিন্তু রাজা নরনারায়ণের প্রচলন করা পুজো আজও চলছে।

পুজোর নিয়ম

কথিত রয়েছে, একদা এই মন্দিরে নিয়মিত নরবলি হত। মহারাজা নরনারায়ণের আমলে এই নরবলি চালু হয়। পরবর্তীকালে নরবলির বীভৎসতা দেখে কোচবিহারের ১৯ তম কোচ মহারাজা নরেন্দ্রনারায়ণ পন্ডিতদের সঙ্গে আলোচনা করে নরবলি বন্ধ করে দেন। কিন্তু কোচবিহার রাজবংশের বড়দেবী দুর্গা নররক্ত না পেলে কুপিত হন। তাই প্রতি বছর মহাঅষ্টমীর রাতে এখানে এক বিশেষ ধরনের বলির ব্যবস্থা করা হয়। মহাষ্টমী ও মহানবমীর সন্ধিলগ্নে বড়দেবীর মন্দিরে অনুষ্ঠিত হয় ‘গুপ্তপূজা’। বাইরের লোক তখন প্রবেশ করতে পারেন না।

এখনও রক্ত নেন বড়দেবী

পুরোহিত এবং রাজবংশের প্রতিনিধিরাই মূলত থাকেন এই উপাচারের সময়ে। এখানে একজনকে তাঁর আঙুল কেটে কয়েক ফোঁটা রক্ত দিতে হয় দেবীর পদতলে। বলি দেওয়া হয় চালের গুঁড়ো দিয়ে তৈরী মানুষরূপী একটি পুতুলকে। বলির সময় প্রবল শব্দে  ঢাক বাজানো হয়। আজও এই ঐতিহ্য বহন করে চলেছে কোচবিহার।

 

Read more!
Advertisement

RECOMMENDED

Advertisement