Jalpaiguri Woman Mystery Death: গলায় ফাঁস লাগানো অবস্থায় বসে রয়েছেন ভদ্রমহিলা। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ততক্ষণে তাঁর মৃত্যু হয়ে গিয়েছে। গলার ফাঁসের দড়ির অপর প্রান্ত বিছানার ওপাশে জানালার সঙ্গে বাঁধা। ঘরের দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে পুলিশ ও প্রতিবেশীদের এমন দৃশ্য দেখে আতঙ্কে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। আরও চাঞ্চল্যকর ঘটনা হল, পাশের ঘরে দিব্যি শুয়ে ঘুমোচ্ছে ছেলে। অথচ বাইরে এত ডাকাডাকি চিৎকার চেঁচামেচিতেও সে উঠে এসে দরজা খোলেনি, কেন? এই জোড়া প্রশ্নে জেরবার জলপাইগুড়ি।
আরও পড়ুনঃ ব্যাপক স্নো-ফল পাহাড়ে, সাদা বরফের চাদরে ঢাকল বিস্তীর্ণ এলাকা, PHOTOS
হাড়হিম করা নাটকীয় এই মৃত্যুর ঘটনা দেখে আঁতকে উঠেছেন জলপাইগুড়িবাসী। এ যেন ঠিক সিনেমায় দেখা ক্রাইম থ্রিলার বা ওই ধরণের কিছু। এখন ওই মহিলা আত্মঘাতী হয়েছেন, না কি তাঁকে খুন করে রাখা হয়েছে, তা নিয়ে রহস্য দানা বাঁধছে। বিশেষ করে পাশের ঘরের জীবিত ছেলে কী করে মায়ের মৃত্যুর পর শুয়ে রয়েছে? দরজা খোলেনি, আবার কাউকে খবরও দেয়নি। এই প্রশ্নই এখন ঘুরে বেড়াচ্ছে জলপাইগুড়ির আনাচে কানাচে। পুলিশ ছেলেকে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছে। জলপাইগুড়ি কোতোয়ালি থানার আইসি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়ার পর বিষয়টি অনেকটাই পরিষ্কার হবে।
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়ে মৃত মহিলার নাম মিষ্টি মুখোপাধ্যায় তিনি ময়নাগুড়ি ব্লকের একটি স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন। তার স্বামী শহরের প্রাক্তন ফুটবলার জয়ন্ত চক্রবর্তী মাত্র এক সপ্তাহ আগেই মারা গিয়েছেন। তাঁর শ্রাদ্ধ কাজ এখনও শেষ হয়নি। তারপরে এমন, কী ঘটনা ঘটলো যার জন্য এমন ভয়াবহ পরিণতি হলো মিষ্টিদেবীর তা ভেবে পাচ্ছেন না প্রতিবেশীরা।
আরও পড়ুনঃ নিজের ঘরে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীর ঝুলন্ত দেহ, শীতলকুচিতে চাঞ্চল্য
জানা গিয়েছে, জয়ন্তবাবুর প্রথম পক্ষের স্ত্রী মিষ্টি। তাঁদের একমাত্র সন্তান পাভেল। পারিবারিক অশান্তির কারণে এক সময় জয়ন্তবাবু মিষ্টিদেবীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করে বাড়ি ছেড়ে চলে যান এবং অন্য এক জনকে বিয়ে করেছিলেন। কিন্তু ছেলে কোনওভাবেই বাবাকে ছাড়তে চায়নি। সে কারণে জলপাইগুড়ি বাবুপাড়ার বাড়িতে ফিরে আসেন জয়ন্তবাবু। বনিবনা না থাকা সত্ত্বেও একসঙ্গেই থাকছিলেন। দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী অবশ্য আলাদাই থাকতেন। তবে বিবাদ-গোলমাল তাতে কমেনি বলেই জানা গিয়েছে। মা ও ছেলের মধ্যেও ঝগড়া লেগে থাকতে বলে প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন। এমনকি শনিবারও দুজনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া হয়েছে বলে আশপাশের লোকজন শুনতে পেয়েছিলেন। তারপর এক সময় সব চুপ হয়ে যায়।
রবিবার দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী তাঁদের বাড়িতে এসেছিলেন। অনেক ডাকাডাকির পরেও কেউ দরজা না খোলায় তিনি আশপাশের লোকজনকে ডাকেন। সবাই মিলে এসে ডাকাডাকি, দরজা ধাক্কাধাক্কির পরেও না খোলায় ওয়ার্ড কাউন্সিলর তথা পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান সৈকত চট্টোপাধ্যায়কে খবর দিলে, তিনি পুলিশ নিয়ে আসেন। এরপর দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে সকলে যা দেখেন তাতে তাদের আতঙ্কে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়। ঘরে বিছানায় বসে থাকা অবস্থায় মিষ্টিদেবীর মৃতদেহের আশপাশে খাটের স্ট্যান্ড ভেঙে পড়ে রয়েছে। এমনভাবে মিষ্টি দেবী বসে রয়েছেন তাতে আংশিক বা পার্শিয়াল হ্যাঙ্গিং এর তত্ত্বও কাজে লাগছে না। মিষ্টিদেবী যদি নিজেই গলায় ফাঁস লাগিয়ে থাকেন তাহলে ঘরে থাকা ছেলে অন্যদের খবর দেয়নি কেন? উপরন্তু পাশের ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর এখনও মেলেনি। দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী মৌমিতা চক্রবর্তী জানান যে, স্বামীর মৃত্যুর পর এই বাড়িতে নিয়মিত আসছিলেন তিনি। তবে এমন কোন ঘটনার পিছনে কোনও তথ্য় দিতে পারেননি তিনি।