Bjp Mass Resignation Siliguri: লোকসভা নির্বাচনের আগে লড়াইয়ের রসদ খুঁজতে সাংগঠনিক রদবদল ঘটানো হয়েছিল। উল্টো সংগঠন ধসে গেল বিজেপির। মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় ৪৮ জন জেলা পদাধিকারী পদত্যাগ করলেন। অভাবনীয় এই ঘটনা ঘটেছে শিলিগুড়িতে। এতে শিলিগুড়ি তো বটেই গোটা রাজ্যে সাড়া পড়ে গিয়েছে। আসলে শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলার নতুন সভাপতি অরুণ মণ্ডলকে মেনে নিতে পারছেন না কর্মীদের একটা বড় অংশ। তা থেকেই পদত্যাগ। পদত্যাগের তালিকায় রয়েছেন ফাঁসিদেওয়ার বিধায়ক দুর্গা মুর্মুও। পদত্যাগ করেছেন আরও ৩১ জন বিজেপি পদাধিকারী। সেই সঙ্গে ছোট বড় সব মিলিয়ে মোট ৪৮ জন পদত্যাগ করেছেন বলে খবর।
বিজেপির দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিধায়ক আনন্দ বর্মনকে জেলা সভাপতির পদ থেকে সরানো হয়। তাঁর বিরুদ্ধেও দলের একাংশের অভিযোগ ছিল। এমনকী দলীয় বৈঠকেও অনেকে তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সেই জায়গায় আনা হয় অরুণ মণ্ডলকে। ২০১৪ সালে সিপিএম থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া অরুণ মণ্ডল বিধায়ক শঙ্কর ঘোষ ও সাংসদ রাজু বিস্তার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। দলীয় সূত্রের খবর, সম্প্রতি নব্য বিজেপির সঙ্গে পুরনো বিজেপির গোষ্ঠীকোন্দল শুরু হয়। এর মধ্যেই জেলা সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় আনন্দ বর্মনকে।
মাটিগাড়া-নকশালবাড়ির বিজেপি বিধায়ক আনন্দ বর্মন অবশ্য সংবাদমাধ্যমে দাবি করেন, তাঁকে সরানোর বিষয়টি ঠিক নয়, শুধু পদ পরিবর্তন হয়েছে। এটা রুটিন পদ্ধতি বলে তাঁর দাবি। এরপর আনন্দ বর্মনকে সরিয়ে সিপিএম থেকে আসা অরুণ মণ্ডলকে জেলা সভাপতির পদে বসাতেই শিলিগুড়িতে কার্যত বিদ্রোহ শুরু হয় বিজেপির অন্দরে। ফাঁসিদেওয়ার বিধায়ক দুর্গা মুর্মু-সহ অন্তত ৩০ জন বিজেপির জেলা কমিটি থেকে সরে যান। দল না ছাড়লেও পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন একাধিক মণ্ডল সভাপতিও। যদিও আলোচনা করে সমস্যা মিটে যাবে বলে মনে করছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার (Sukanta Majumdar)। তিনি শিলিগুড়ি এসে সব পক্ষের সঙ্গে বসে কথা বলবেন জানিয়েছেন।
উত্তরবঙ্গ বরাবরই বিজেপির শক্ত ঘাঁটি। গত লোকসভা তো বটেই, গত বিধানসভাতেও মোটের উপর ভাল ফল করেছিল বিজেপি। দার্জিলিং জেলার ফাঁসিদেওয়া বিধানসভা কেন্দ্র থেকে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে বিধায়ক হিসেবে নির্বাচিত হন দুর্গা মুর্মু। পরবর্তীতে তাকে জেলা সম্পাদকের দায়িত্ব দেয় পদ্মশিবির। সামনেই লোকসভা নির্বাচন। ফলে সাংগঠনিক স্তরে রদবদল শুরু হয়েছে বিজেপিতে। তার প্রভাব পড়েছে জেলাগুলিতেও। শিলিগুড়িতে দলের নতুন সাংগঠনিক রদবদলকে ঘিরেই গোষ্ঠী কোন্দলের সূত্রপাত দার্জিলিং জেলায়।
এই ইস্তফা হিড়িকের পিছনে দলের দুই বিধায়ক শংকর ঘোষ ও আনন্দময় বর্মনের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দেখতে পাচ্ছেন দলেরই একটা বড় অংশ। জেলা সভাপতির পদ থেকে আনন্দময়কে সরিয়ে দেওয়ার নেপথ্যে শংকর ঘোষের ভূমিকা দেখতে পাচ্ছেন অনেকে। তেমনই গণ পদত্যাগের পিছনে আনন্দময়ের হাত রয়েছে বলেও দলীয় অন্দরের খবর। যদিও জেলা সভাপতি অরুণ মণ্ডলের দাবি, এখনও পর্যন্ত কেউ ইস্তফাই দেননি। সব মিলিয়ে দুদিনে ৪৮ জন পদত্যাগ করেছেন বলে জানা গিয়েছে। জেলা সভাপতি বিষয়টি অস্বীকার করলেও যাঁরা ইস্তফা দিয়েছেন, তাঁরা অবশ্য পদত্যাগের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। যেমন সহ সভাপতি মনোরঞ্জন মণ্ডল বলেছেন, যাঁরা দলের সাংগঠিনিক শক্তি বৃদ্ধিতে কাজ করে গিয়েছেন, তাঁদের কমিটিতে রাখা হয়নি। যাঁদের কোনও অবদান নেই, তাঁরা ভালো পদ পেয়েছেন দলে। এটা মেনে নেওয়া যায় না।" জেলা সভাপতির পদ থেকে আনন্দকে সরিয়ে দেওয়ারও প্রতিবাদ করেছেন তিনি। মহিলা মোর্চার সভানেত্রীর পদে ইস্তফা দেওয়া শিখা মিত্র জানিয়ছেন, দলে অনেক যোগ্য রয়েছেন। কিন্তু তাঁদের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে না। পরিযায়ীরা গুরুত্ব বেশি পাচ্ছেন দলের এক শ্রেণির নেতৃত্বের কাছে। তা মেনে নেওয়া যায় না। শিলিগুড়ির বিধায়ক শংকর ঘোষও ইস্তফার ব্যাপারে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন।