Kalipuja 2023 Sevoke Kali Mandir: কার্তিকী অমাবস্যার রাতে পাহাড়ি পথে বিপদসঙ্কুল চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে মন্দিরে শহরের পুজোর চাকচিক্য, জৌলুস হেলায় ত্যাগ করে বহু ভক্ত হাজির হন সেবকে। রাত জেগে পুজো দেখেন। কালীপুজোর রাতেও ঘোর অমাবস্যায় তখন উপচে পড়া ভিড়। তিলধারণের জায়গা থাকে না। যে সেবক পাহাড় সূর্য ডুবলেই গা ছমছমে হয়ে যায়, সেখানে রাতভর থাকে ভক্তদের ভিড়। সকালে প্রসাদ নিয়ে তারপর মন্দির ছাড়েন ভক্তরা। এবারও তেমনই পুজো হবে। কোনও রকম খামতি নেই। শুধু একটা জিনিস আর কোনওদিন মিলবে না।
শিলিগুড়ির সেবকেশ্বরী কালীর পুজোয় এ বছর থেকেই বন্ধ হচ্ছে বলিপ্রথা। ভক্তদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকের পর সম্প্রতি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেবক কালী মন্দির কমিটি। মন্দির কমিটির সহ সভাপতি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন আদালতের নির্দেশের পর বলিপ্রথা বন্ধের জন্য বারবার প্রশাসনের তরফে বলা হচ্ছিল। কিন্তু মানসিকভাবে অনেকেই তা মেনে নিতে পারছিলেন না। তবে সকলের সঙ্গে আলোচনার পর বলিপ্রথা বন্ধের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। পরিবর্তে বিভিন্ন ধরনের সবজি এবং ফল বলি হবে বলে জানান মন্দিরের পুরোহিত স্বপন ভাদুড়ি।
মন্দির কমিটির তরফে জানানো হয়েছে, পশুবলি বন্ধ করার জন্য আদালত নির্দেশ দেওয়ার পরেও দূরদূরান্ত থেকে ভক্তরা এখানে আসেন বলির জন্য। ফলে দিন-দিন পশুবলির সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছিল। তবে এবছর থেকে যে আর বলি দেওয়া যাবে না, ফোন করে সেকথা জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলি বন্ধের নির্দেশিকা মন্দিরের চত্বরে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মন্দির কমিটি সূত্রে জানা গিয়েছে, কালীপুজোর দিন এবং পরের দিন মিলিয়ে ৩৫ থেকে ৪০টি পাঁঠা বলি হত। বছরের বাকি দিনগুলি মিলিয়ে সংখ্যাটা দেড়শোর কাছাকাছি। কালীপুজো ছাড়াও অমাবস্যা, পূর্ণিমার পাশাপাশি শনি ও মঙ্গলবার এখানে বলি হত।
তবে পাঁঠা উৎসর্গ করা যাবে
তবে বলি বন্ধ হলেও মায়ের নামে পাঁঠা বা অন্য পশু উত্সর্গ করা যাবে বলে জানানো হয়েছে মন্দির কমিটির তরফে। মানত করে বহু লোক পাঁঠা উৎসর্গ করেন। সংখ্যাটা বেড়ে চলে প্রতি বছরই।
পুজোর ইতিহাস
মন্দিরে রয়েছে পঞ্চমুন্ডির আসন। সেই আসন স্বপ্নে-পাওয়া। নীরেন্দ্রনাথ সান্যাল নামে এক ব্যক্তি বহুদিন আগে স্বপ্ন দেখেন।স্বপ্ন দেখেই তিনি বর্তমান বেদির সামনে এসে দেখেন একটি বেদি করা আছে। তার সামনে একটি ত্রিশূল এবং জবাফুল তাছাড়া একটা বেলপাতা পড়ে রয়েছে। তা দেখবার পর মাকে সেখানে প্রতিষ্ঠা করেন। এটা মোটামুটি ১৯৫০ সাল নাগাদ। তখন সে রাস্তা দিয়ে শুধু সেনাবাহিনীর গাড়ি যাতায়াত করতো। সেনা জওয়ানরা রাত্রির সীমান্ত পাহারা দিতে যাওয়ার সময় মাকে প্রণাম করে যেতেন সেনারা। তবে এখানে মাটির মূর্তি বসানোর আগে প্রথম মায়ের পুজো করে। তবে তার আগে কবে থেকে পুজো শুরু হয়েছে, তা কেউ জানে না।
মন্দির বারবার বদল হয়েছে
আনুমানিক ১৯৭২-এ আধুনিক মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হয়। কয়েক বছরের মধ্যে মন্দিরটি তৈরি হয়। তবে তার আগে বহু প্রাচীন কাল থেকে ওই জায়গায় পুজো হতো বলে জানা গিয়েছে। তখন অবশ্য় মন্দির ছিল না। পাহাড়ের গায়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ওই মন্দির স্থাপন হয়।