Laboratory To Find Fake Darjeeling Tea: দার্জিলিংয়ের চা পাতার ছদ্মবেশে এ রাজ্যে চোরাপথে সরবরাহ হচ্ছে নেপালের নিম্নমানের চা। বলা যায় নকল দার্জিলিং চা। আসল দার্জিলিং চা পাতা দাম তো অনেকটাই বেশি, পাশাপাশি তার স্বাদ-গন্ধ একবার খেলে এ জীবনে আর ভুলবেন না। কিন্তু নেপালের এই নিম্নমানের চা দার্জিলিং চায়ের চড়া দামের সুযোগ নিয়ে চোরাপথে ঢুকছে। উত্তরবঙ্গ হয়ে দার্জিলিং, মিরিক কিংবা শিলিগুড়ি পানিট্যাঙ্কি সীমান্তপথে এই চা পাতা ঢুকছে এদেশে। আর তারপর জড়িয়ে যাচ্ছে গোটা রাজ্যে রাজ্যের বাইরে ও বিশেষ করে বিহার এবং ঝাড়খন্ডে। দেদার বিকোচ্ছে নকল দার্জিলিং চা।
নেপালের চা নিয়ে উত্তরবঙ্গের শিল্পপতিদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। নেপালের চায়ে অবৈধভাবে দার্জিলিং চায়ের ট্যাগ লাগিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এই কারবার দীর্ঘদিন ধরেই করছেন, যার জেরে বিশ্ব প্রসিদ্ধ দার্জিলিং চায়ের সুনাম নষ্ট হচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে চা শিল্পপতিরা সরকারকে কার্যকরী পদক্ষেপের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অবশেষে নেপালের খারাপ চা আটকাতে পদক্ষেপ করছে রাজ্য সরকার। ভারত-নেপাল সীমান্তবর্তী পানিট্যাঙ্কি এবং পশুপতিতে তৈরি করা হচ্ছে অত্যাধুনিক ল্যাবরেটরি। ২০ সেপ্টেম্বর শিলিগুড়িতে টি অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলের বৈঠকে শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক এই ঘোষণা করতে পারেন। এমন খবর সামনে এসেছে।
রাজ্যের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে চা মালিকদের বিভিন্ন সংগঠন। এর ফলে দার্জিলিং চায়ের কদর ফিরবে বলে আশাবাদী চা মালিক সংগঠনগুলি। ল্যাবরেটরি তৈরি করে সেখানে নেপালের চায়ের গুণগত মান পরীক্ষার ব্যবস্থা হলে দার্জিলিং চা আবার সুনাম ফিরে পাবে বলে তাঁরা আশাবাদী।
ইলম, পাঞ্চথার সহ পূর্ব নেপালের কিছু এলাকায় চা চাষ হয়। সেখানকার চায়ের গুণগত মান দার্জিলিং চায়ের থেকে অনেক খারাপ। কিন্তু নেপালের কিছু কারবারি দীর্ঘদিন ধরেই সেখানকার চা দার্জিলিং চায়ের লেবেল সাঁটিয়ে রপ্তানি করছে। দার্জিলিং চা জিওগ্রাফিক্যাল ইন্ডিকেশন (জিআই) পেয়েছে। এই চা ফুড সেফটি অ্যান্ড স্ট্যান্ডার্ড অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (এফএসএসএআই) দ্বারা স্বীকৃত। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দার্জিলিং চায়ের কদর কারও অজানা নয়। সেই সুযোগেই নেপালের অসাধু ব্যবসায়ীরা তাদের চায়ের প্যাকেটে দার্জিলিং চা লিখে রপ্তানি করছে। কিন্তু সেই চায়ের গুণগত মান খারাপ হওয়ায় ঘুরিয়ে দার্জিলিং চায়ের উপরেই বিশ্ববাসীর ভরসা কমছে।
এবার রাজ্য সরকার টি অ্যাডভাইজারি কাউন্সিলের মাধ্যমে ভারত-নেপাল সীমান্তের পানিট্যাঙ্কি এবং পশুপতিতে দুটি ল্যাবরেটরি তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই ল্যাবরেটরিতে চা পাতা পরীক্ষার জন্য বিশেষজ্ঞ যেমন থাকবেন, তেমনই চায়ের আমদানির পুরোটা দেখার জন্যও পৃথক ইউনিট তৈরি হবে। অর্থাৎ নেপাল থেকে ভারতে যে চা ঢুকছে তার বৈধ নথিপত্র রয়েছে কি না সেগুলিও পরীক্ষা করা হবে। বেআইনিভাবে চায়ের লেনদেন হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া সম্ভব হবে।
বিশিষ্ট চা শিল্পপতি প্রবীর শীলের কথায়, ‘নেপালের চা খুব সস্তা। সেখানকার চায়ের গুণগত মান এতটাই খারাপ যে কোনও দেশে বিক্রি হয় না। সেইজন্য ওরা দার্জিলিং চায়ের নাম করে সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে চা বিক্রি করছে। নেপাল-ভারতের মধ্যে খোলা বাণিজ্যের শর্ত দেখিয়ে ভারতের বাজারেও সেই চা আসছে। ফলে আমাদের অনেক উন্নতমানের দার্জিলিং চায়ের বাজার নষ্ট হচ্ছে। সরকার ল্যাবরেটরি তৈরি করে সস্তার চা আটকে দিতে পারলে দার্জিলিংয়ের চায়ের বাজার চাঙ্গা হবে বলেই আমাদের আশা। সরকারের এই পদক্ষেপে আমরা খুব খুশি।’
আসল দার্জিলিং চা পাতা কেউ চেনেনই না
পকেটের পয়সা খরচ করে নকল চা খেতে বাধ্য হচ্ছেন আপনি। কারণ আসল চা পাতা প্রায় কেউই চেনেন না। যাঁরা চেনেন, তাঁরা বাজারের দোকান থেকে চা পাতা কেনেন না। সুতরাং পরিচিতির অভাবে টনের পর টন নকল চা পাতায় বিক্রি হয়ে যাচ্ছে দার্জিলিং চা হিসেবে।
রাজ্যের নজরে বেআইনি কারবার
বিষয়টি নজরে রয়েছে রাজ্য সরকারেরও। তাই এটি নিয়ন্ত্রণ করতে উদ্যোগ নেওয়া শুরু করেছেন তাঁরা। কিছুদিন আগে উত্তরবঙ্গ সফরে এসেছিলেন শ্রমমন্ত্রী বেচারাম মান্না। তাঁর কানে গিয়েছে বিষয়টি। তিনি ফিরে গিয়ে গুরুতর সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে এটিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন।
দার্জিলিং চায়ের সুনাম নষ্ট হচ্ছে
এতে যেমন দার্জিলিং চায়ের বদনাম হচ্ছে। তেমনই রাজ্যের অর্থনৈতিক একটা বড় ক্ষতি হচ্ছে। প্রকৃত দার্জিলিং চায়ের উৎপাদক ও মালিকরাও ভেজাল দার্জিলিং চা বিক্রি হওয়ায়, আসল চায়ের দাম পাচ্ছেন না। বিদেশি পর্যটকরা ওই চা পাতা নিয়ে গিয়ে সেই পুরনো সন্তুষ্টি পাচ্ছেন না।
৩৭ মিলিয়ন কেজি নকল চা ঢুকেছে চোরাপথে
টি-বোর্ডের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী গত তিন বছরে প্রায় ৩৭ মিলিয়ন কেজি নেপালের চা নিম্নমানে চোরাপথে ঢুকে ভারতে দার্জিলিং চা বলে বিক্রি হয়েছে। কেন্দ্রের আইন থাকলেও কোনও আইনই ঠিকমত মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ চা বাগান মালিকদের।
কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ দাবি রাজ্যের
নেপালের এই নিম্নমানের চা, শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর কি না, তা অবশ্য এখনও কোথাও পরীক্ষা করে দেখা হয়নি। মন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথা বলছেন। মুখ্যমন্ত্রীর মাধ্যমে কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে এবং সেন্ট্রাল টি বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে পদক্ষেপ করা হবে বলে জানানো হয়েছে।