আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, রবিবার বিকেল নাগাদ ঘূর্ণিঝড় গুলাব (Cyclone Gulab) অন্ধ্রপ্রদেশের উত্তর এবং ওড়িশার দক্ষিণের মধ্যের অংশ দিয়ে আঘাত হানতে চলেছে। ওড়িশার গোপালপুর ও অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনমের মাঝে কলিঙ্গপত্তনমের কাছে স্থলভাগে আছড়ে পড়বে ঘূর্ণিঝড় গুলাব।
তবে আশার কথা , ঘূর্ণিঝড় গুলাবের সরাসরি প্রভাব পড়বে না বাংলায়। হাওয়া অফিস সূত্রে খবর, বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া বইবে রাজ্যে।
শনিবার ভোর নাগাদ উত্তর-পূর্ব এবং সংলগ্ন পূর্ব মধ্য বঙ্গোপসাগরে থাকা নিম্নচাপটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়। শনিবার বিকেল থেকে সন্ধের মধ্যে সেটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়। পশ্চিম দিকে যা অগ্রসর হয়ে ওড়িশার দক্ষিণ উপকূলে গোপালপুর এবং অন্ধ্রপ্রদেশের উত্তরে কলিঙ্গপত্তনমের কাছে বিশাখাপত্তনমের মধ্যে দিয়ে যাবে। ২৬ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ রবিবার বিকেলে সেটির ল্যান্ডফল হতে চলেছে।
আবহাওয়া দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের সর্বোচ্চ বেগ থাকতে পারে ঘন্টায় ৯০ কিমি। তবে এই ঘূর্ণিঝড় খুব তাড়াতাড়ি শক্তি হারাবে। সোমবার সকালের মধ্যে তা ফের গভীর নিম্নচাপে পরিণত হবে। আর সোমবার বিকেলে আরও শক্তি ক্ষয় করে তা নিম্নচাপে পরিণত হবে। সেই সময় এর সর্বোচ্চ বেগ থাকতে পারে ঘন্টায় ৬০ কিমির মতো।
আজ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হতে পারে রাজ্যের উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে। মঙ্গল ও বুধবার কলকাতা, দুই মেদিনীপুর, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, হুগলিতে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। উপকূলবর্তী এলাকায় ৫০ থেকে ৬০ কিমি বেগে বইবে ঝোড়ো হাওয়া। আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, ঘূর্ণিঝড়ের পরেই তৈরি হবে ঘূর্ণাবর্ত। নিম্নচাপ হিসেবে সেটি আছড়ে পড়বে বাংলায়।
আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গণেশকুমার দাস জানিয়েছেন, গুলাবে আমাদের রাজ্যে সরাসরি কোনও প্রভাব পড়বে না, তবে পরোক্ষ প্রভাবে উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে বৃষ্টি হবে।
২৮ তারিখ বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়ার সম্ভাবনা আছে, যে কারণে দক্ষিণবঙ্গে হলুদ সর্তকতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। রবিবার থেকেই আবহাওয়ার পরিবর্তন হবে। যার ফলে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলিতে আকাশ মেঘলা থাকবে এবং দফায় দফায় বৃষ্টি চলবে।
এদিকে দুর্যোগ-শঙ্কায় জেলায় জেলায় প্রস্তুতি তুঙ্গে। সোমবার থেকে দিঘাকে পর্যটকশূন্য করার নির্দেশ দিওয়া হয়েছে জেলাশাসকের তরফে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত এমন নির্দেশ বলবৎ থাকবে।
ঘূর্ণিঝড়ের সরাসরি প্রভাব পড়বে না রাজ্যে। তবে, দুর্যোগের ধাক্কায় হবে বৃষ্টি। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস, সোমবার থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে উপকূলবর্তী পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে। মঙ্গল ও বুধবার কলকাতা, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, দুই মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলিতে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
প্রবল বর্ষণের পূর্বাভাসে ফের জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কা তৈরি রয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়। অনির্দিষ্টকালের জন্য মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে আগামী ২৪ ঘন্টা কলকাতায় আংশিক মেঘলা আকাশ থাকবে। হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। আজ কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ২৬.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের ১ ডিগ্রি বেশি। অন্যদিকে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩১.৫ ডিগ্রি ডিগ্রি সেলসিয়াস, স্বাভাবিকের ১ ডিগ্রি কম। বাতাসে আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ সর্বোচ্চ ৯৭ শতাংশ। সর্বনিম্ন ৭৭ শতাংশ।
গুলাবের প্রভাবে আজ দক্ষিণ ওড়িশা এবং উত্তর ঊপকূল অন্ধ্রপ্রদেশের অনেক জায়গাতেই অতিভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে তেলেঙ্গনাতেও। ওড়িশার উত্তর উপকূল এবং ছত্তিশগড়ে বিচ্ছিন্নভাবে ভারী বৃষ্টি হতে পারে রবিবার। মধ্য ভারতের বিস্তীর্ণ অংশ এমন কী গুজরাতেও এর প্রভাব পড়তে চলেছে বলে জানা গিয়েছে।