তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লোকসভা ভোটে তাকেই প্রার্থী করেছিল বিজেপি শিবির। সেই অভিজিৎ দাস ওরফে ববিকে এবার দল থেকে বরখাস্ত করল বিজেপির রাজ্য কমিটির ও শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির সদস্যরা। মঙ্গলবার ভোট পরবর্তী হিংসায় আক্রান্ত বিজেপি কর্মীদের সঙ্গে দেখা করতে আসেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে একটি টিম। সেখানে উপস্থিত ছিলেন না ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ দাস। পাশাপাশি বিজেপির কেন্দ্রীয় টিমের সামনে বেশ কিছু বিজেপি কর্মীরা বিক্ষোভ দেখাতে থাকে বিপ্লব দেবের গাড়ি আটকে। পাশাপাশি অনেক বিজেপি কর্মী গতকাল কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের সঙ্গে দেখা করতে পারেনি আর তা নিয়েই এবারে রাজ্য বিজেপির শান্তি রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে ডায়মন্ডহারবার লোকসভার পরাজিত বিজেপি প্রার্থী অভিজিৎ দাসের কাছে। যতদিন না পর্যন্ত তিনি রিপোর্ট দিচ্ছেন ততদিন দলের সমস্ত কিছু থেকে তাকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এবার ডায়মন্ড হারবার লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী ছিলেন অভিজিৎ দাস। ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে তাঁর এখানে বেশকিছু মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন। সেই সংখ্যাটা ৭০ থেকে ৮০ জন। এখানে এর আগে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এসেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে গিয়েছেন। কিন্তু, মঙ্গলবারেরকর্মসূচি অনুযায়ী বিজেপির কেন্দ্রীয় দল আসে জেলা পার্টি অফিসে। এখানে বেশ কয়েকজনের সঙ্গে তাঁরা কথা বলেন। তাঁরা ঘরছাড়া এবং তাঁদের ওপর অত্যাচার হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বিজেপি কর্মীরা। এরপর কেন্দ্রীয় দল আলতাবেড়িয়ার উদ্দেশে রওনা দেন। সেই পথেই আমতলায় অভিজিৎ দাসের বাড়ি পড়ে। তাঁর সেখানে যেসব ঘরছাড়া আশ্রয় নিয়েছেন, তাঁরা জানতে পারেন তাঁদের কাছে কেন্দ্রীয় দল আসবে না। সেইসময় তাঁরা ক্ষোভে ফুঁসতে থাকেন। তাঁরা রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। কনভয় সেই রাস্তায় এলে সেখানে দাঁড়িয়ে পড়েন বিজেপির পুরুষ ও মহিলা কর্মী-সমর্থকরা। তাঁরা কনভয় আটকানোর চেষ্টা করেন। যদিও পুলিশ থাকায় সেই কনভয় আটকানো সম্ভব হয়নি। কিন্তু কেন্দ্রীয় দলে নেতৃত্ব দেওয়া বিপ্লব দেবের গাড়ি আটকে যায়। তাঁকে ঘিরে অনেকে কান্নায় ভেঙে পড়েন। বিজেপির কর্মী-সমর্থকরা বলেন, আপনি অন্তত ৫ মিনিটের জন্য হলেও এখানে আসুন। কারণ, এখানে প্রচুর ঘরছাড়া মানুষ রয়েছেন। আমরা কী দুঃখের মধ্যে আছি আপনারা সেটা দেখতে আসুন। কিন্তু, বিপ্লব দেব গাড়ি থেকে নামেননি। তিনি শুধু নাম জেনে নিয়ে এক কর্মীকে আশ্বস্ত করেন। রাজনৈতিক মহল বলছে, এই পরিস্থিতিতে জেলা সভাপতি ও এখানকার বিজেপি প্রার্থীর মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ছবিটা আরও প্রকট হয়েছে।
লোকসভা ভোটের ফল বেরনোর পর থেকে বিজেপির তরফে রাজ্যের যেসব জায়গায় ভোট পরবর্তী সন্ত্রাসের অভিযোগ করা হয়েছিল, তার মধ্যে ছিল এই ডায়মন্ড হারবারও। সেখানকার আক্রান্ত বিজেপি কর্মীদের অনেকেই বিজেপি নেতা অভিজিৎ দাস ববির বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। অভিজিৎ দাসের অভিযোগ ছিল বিজেপির জেলা নেতৃত্ব আক্রান্তদের পাশে থাকছেন না। গতকাল বিক্ষোভের ঘটনায় অসন্তুষ্ট হন বিজেপির কেন্দ্রীয় দলের নেতারা। এরপর মঙ্গলবার রাতে অভিজিৎ দাস ববিকে বরখাস্তের নোটিস ধরানো হয় রাজ্য বিজেপির তরফে। শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটির তরফে প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের সই করা একটি চিঠি তাঁকে দেওয়া হয়। এই নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজ্য রাজনীতি সরগরম। যদিও এ সম্পর্কে কোন মন্তব্য করতে চান নি অভিজিৎ দাস ওরফে বিব। কথা বলতে চাননি সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গেও।