বর্ষার বৃষ্টি শুরু হতেই রাশি রাশি ইলিশ উঠতে শুরু করেছে মৎস্যজীবীদের জালে। গত দু’দিনে প্রায় ২৫ টন ইলিশ মাছ উঠেছে কাকদ্বীপ, নামখানা সহ দক্ষিণ ২৪ পরগনার উপকূলবর্তী ঘাটগুলি থেকে। আগামী দু’দিন আরও ইলিশ ঢুকবে ঘাটগুলিতে, এমনটাই আশা করা হচ্ছে। সপ্তাহের শেষে সেই ইলিশ বাজারে আসতেও শুরু করেছে। প্রায় ৬০ টনের মত ইলিশ বাজারে চলে এসেছে বলে জানা যাচ্ছে।
ভরা শ্রাবণে সাগরে বৃষ্টি বাড়তেই মৎস্যজীবীদের জালে টন টন ইলিশ উঠতে শুরু করেছে। সমুদ্রে এই মুহূর্তে ইলিশ ধরার অনুকুল পরিবেশ তৈরির পরই জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে রুপোলি শস্য। ধরা পড়া ইলিশের ওজনও বেশ ভাল। বেশীরভাগ ইলিশ সাত’শ গ্রামের ওপরে বলে জানা যাচ্ছে। দক্ষিণ ২৪ পরগনার কাকদ্বীপ, নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ, রায়দিঘি, পাথরপ্রতিমার ঘাটে তোলা হয়েছে টন টন ইলিশ। মৎস্যজীবীরা জানাচ্ছেন প্রায় ১০০ টন টাটকা ইলিশ উঠেছে সমুদ্র থেকে। আগামী কয়েকদিনে আরও ইলিশ ঢোকার সম্ভাবনা রয়েছে ঘাটগুলিতে, কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার জন্য ফের সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। গভীর সমুদ্র থেকে বেশিরভাগ ট্রলারই সুন্দরবনের বিভিন্ন ঘাটে ফিরে এসেছে। মৎস্যজীবীরা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি একটু উন্নত হলেই ইলিশ ধরতে ফের তাঁরা গভীর সমুদ্রে পাড়ি দেবেন। তবে এই মুহূর্তে সমুদ্রে ভেসে বেরিয়ে ইলিশ মাছ ধরাটা খানিকটা বিপজ্জনক বলেই মনে করছেন তাঁরা।
বর্ষার মরশুমে ইলিশ মেলায় খুশি ট্রলার মালিক, মৎস্যজীবী থেকে সাধারণ ক্রেতারা। চলতি বছরে ১৫ জুন থেকে শুরু হয়েছিল ইলিশ ধরার মরশুম। তবে বৃষ্টির ঘাটতির জন্য সমুদ্রে গিয়েও কার্যত খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার কয়েক হাজার ট্রলারকে। এরপর গত ১৫ দিন ধরে সমুদ্র উত্তাল থাকায় বারে বারে সরকারি নিষেধাজ্ঞা ছিল। এরই মধ্যে নিষেধাজ্ঞা ওঠার পর সমুদ্র পাড়ি দেয় মৎস্যজীবীরা। বৃষ্টি শুরু হওয়ার সঙ্গে সাগরে পুবালী বাতাসের অনুকুল পরিবেশ তৈরী হতেই জালে পড়তে শুরু করে ঝাঁকে ঝাকে ইলিশ। সেই ইলিশ নিয়ে ঘাটে ফিরতে শুরু করেছে মৎস্যজীবী ট্রলারগুলি। ইলিশের যোগান বাড়ায় দাম কমেছে বেশ কিছুটা। ডায়মন্ড হারবারের পাইকারি নগেন্দ্র বাজার মাছের আরত ঘুরে ইলিশ পৌঁছে যাচ্ছে রাজ্যের বিভিন্ন খোলা বাজারে।
জানা গিয়েছে প্রতিদিন গড়ে এখন ১ থেকে ২ টনেরও বেশি উঠছে শুধু দিঘা মোহনার মৎস্য নিলাম কেন্দ্রে। মৎস্যজীবীরা জানিয়েছেন, এমনটাই চলতে থাকলে ইলিশ মাছের দাম আরও কমতে পারে আগামী কয়েকদিনেই। বিপুল জোগান থাকলে ১ কিলো বা তার কাছাকাছি ওজনের মাছের দামও ৬০০-৭০০ টাকা কেজিতে নামতে পারে বলে মনে করছেন মৎস্যজীবীদের একাংশ। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণে ইলিশ বাজারে না আসাতে ইলিশের দামে এখনও ছ্যাঁকা রয়েছে। ডায়মন্ড হারবারে ইলিশের বর্তমান দাম প্রতি কেজি ১,৭০০ টাকা। ডায়মন্ড হারবার নগেন্দ্র বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক জগন্নাথ সরকার সংবাদ মাধ্যমকে বলছেন, “মরশুমে এখনও পর্যন্ত ১০০ টনের মত ইলিশ বাজারে এসেছে। তবে আশানুরূপ বড় সাইজের ইলিশ জালে পড়ছে না। ফলে ইলিশের আমদানি কম থাকায় ইলিশের দামে ছ্যাঁকা।” ফলে এখনও পর্যন্ত কিন্তু সাধের ইলিশ আমবাঙালির নাগালের বাইরে। একটু বেশি ওজন অর্থাৎ ১ কিলো বা তার আশেপাশের ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ১২০০-১৪০০ টাকায়। ৫০০-৭০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৬০০ টাকা কেজি দরে।