সন্দেশখালির তৃণমূল কংগ্রেস নেতা শেখ হাজাহানের বাড়িতে ফের একবার তল্লাশি করতে হাজির হয়েছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। ভোর ৫ টা নাগাদ বিরাট কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে রওয়ানা দেয় ইডির আধিকারিকরা। রেশন বন্টন কেলেঙ্কারি মামলায় এই অভিযান করছে ইডি। এর আগেও একবার সন্দেশখালিতে হানা দিয়েছিলেন ইডি আধিকারিকরা। তবে সেই স্মৃতি মোটেও সুখের ছিল না। গত ৫ জানুয়ারি রেশন দুর্নীতি মামলার তদন্তে সন্দেশখালিতে শাহজাহানের বাড়িতে গিয়ে হামলার মুখে পড়েছিলেন ইডির পাঁচ আধিকারিক। কার্যত প্রাণ হাতে নিয়ে পালিয়ে যেতে হয় তাঁদের। তিন জনকে ভর্তি হতে হয় হাসপাতালে। ঘটনার পর প্রায় তিন সপ্তাহ হতে চলল। কিন্তু এখনও পুলিশের জালে ধরা পড়েননি ইডি আধিকারিকদের উপরে হামলার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত শেখ শাহজাহান। সন্দেশখালির ‘বেতাজ বাদশা' বলা যায় তাঁকে। কী করে বাড়বাড়ন্ত শেখ শাহজাহানের? কে তিনি? চলুন অতীত দেখা যাক এই তৃণমূল নেতার।
বাম থেকে তৃণমূলে
এখন তৃণমূলে হলেও সরবেড়িয়ার বেতাজ বাদশা শেখ শাহজাহান এখন তৃণমূলে হলেও একসময় ছিলেন বামঘেঁষা। উত্তর ২৪ পরগনায় বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী এলাকায় যে সব সংখ্যালঘু নেতার দাপট ছিল তাঁদের অন্যতম ছিলেন মজিদ মাস্টার ও বাবু মাস্টার। শেখ শাহজাহানের উত্থানও বাম জমানার শেষ দিকে। এলাকার অনেকে বলেন শেখ শাহজাহান এপার বাংলার লোকই নন। তিনি অনুপ্রবেশকারী। ওপার বাংলা থেকে এসেছেন। বামফ্রন্ট জমানার শেষ দিকে স্থানীয় বিধায়ক অনন্ত রায়ের অত্যন্ত আস্থাভাজন হয়ে উঠেছিলেন শেখ শাহজাহান। তাঁর বিরুদ্ধে কাঠ ও গরু পাচারের অভিযোগ রয়েছে। সেই সঙ্গে মানুষ পাচারের অভিযোগও রয়েছে। এসবের মাধ্যমেই তাঁর প্রতিপত্তি হয়েছিল বলে বিরোধীরা অভিযোগ করেন।
তৃণমূলে যোগ ও ক্ষমতা বৃদ্ধি
বর্তমানে শেখ সাজাহান উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অন্তর্গত সন্দেশখালি এলাকার একজন অত্যন্ত প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা। তিনি উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সদস্যও। পশ্চিমবঙ্গে বাম সরকারের আমলে রাজনৈতিক কর্মজীবন শুরু করার সময় তিনি প্রাথমিকভাবে সিপিআইএম-এ ছিলেন। পরে, তিনি তৃণমূল নেতা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হাত ধরেই ২০০৯-১০ সালের দিকে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দেন। তিনি একাধিকবার পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন এবং স্থানীয় পঞ্চায়েতের সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। বিরোধীদের মতে শেখ শাহজাহান স্থানীয় এলাকায় কুখ্যাত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত।খুনের মামলায় এফআইআরে নাম রয়েছে শাহজাহানের, যদিও রাজ্য পুলিশ সম্পূর্ণ ক্লিনচিট দিয়েছে এবং উল্লিখিত হত্যা মামলার চূড়ান্ত চার্জশিট থেকে তার নাম মুছে দিয়েছে।
২০২১ সালে বিধানসভা ভোট ও শেখ শাহাজাহান
২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় রাজনৈতিক হিংসার বেশ কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে শেখ শাহাজাহানের বিরুদ্ধে। বিরোধী দলগুলির প্রার্থীদের এবং ভোটারদের ভয় দেখানোর জন্য তাঁর বিরুদ্ধে আঙ্গুল তোলা হয়। শাহজাহান ২০২২ সালের শেষ পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন এবং ৩৪ হাজারেরও বেশি ভোটে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার জেলা পরিষদের সদস্যদের একজন হিসাবে নির্বাচিত হন। তিনি বাংলার বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ।