প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী তথা বেহালা পশ্চিমের বিধায়ক পার্থ চট্টোপাধ্যায়, পলাশীপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক তথা প্রাক্তন পর্ষদ সভাপতি মানিক ভট্টাচার্য। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আগেই গ্রেফতার হয়েছেন দুজন। এবার সেই তালিকায় যোগ হল আরও একটি নাম। বড়ঞাঁর TMC বিধায়ক জীবনকৃষ্ণ সাহা। রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলা প্রকাশ্যে আসার পর যেন মুড়ি মুড়কির মতো গ্রেফতার হচ্ছে রাজ্যের শাসকদলের বিধায়করা। এখন যেন এটাই দস্তুর হয়ে গিয়েছে। আর এটা দেখে কার্যত এখন আর কেউ অবাকও হন না। বিরোধীদের দাবিকে সত্যি প্রমাণ করে একের পর এক TMC বিধায়ক-মন্ত্রীরা গ্রেফতার হওয়ায় এখন যেন বিষয়টিতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছেন রাজ্যবাসী। অথচ ভাবুন, আগে একজন মন্ত্রী বা বিধায়ক গ্রেফতার হলে কীরকম শোরগোল পড়ে যেত। প্রায় 65 ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে ম্যারাথন জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশি অভিযানের পর বড়ঞাঁর TMC বিধায়ককে গ্রেফতার করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা CBI. সোমবার, 17 APRIL ভোর সওয়া 5 টা নাগাদ গ্রেফতার করা হয় তৃণমূল বিধায়ককে। সোমবার ভোররাতে (2.35 নাগাদ) আরও একটি গাড়িতে সিবিআইয়ের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা আন্দি গ্রামে বিধায়কের বাড়িতে ঢোকেন। তাঁদের সঙ্গে আসেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। ভোর 5.15 নাগাদ জীবনকৃষ্ণকে বাড়ি থেকে বের করে সিবিআইয়ের গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। বিধায়কের পরিবারের লোকজন কান্নায় ভেঙে পড়েন। প্রথম থেকেই তদন্তে অসহযোগিতা করছিলেন বিধায়ক। তথ্যপ্রমাণ লোপাটের চেষ্টায় বাড়ির পুকুরে নিজের দুটি মোবাইল ফোন ফেলে দেন তিনি। টানা 38 ঘণ্টা ব্যয় করে পুকুরের জল সেঁচে সিবিআই অধিকারিকরা একটি মোবাইল ফোন তোলেন। আরও একটি মোবাইলের সন্ধান এখনও চলছে। বাড়ির পিছনে রাইস মিলের পাঁচিল সংলগ্ন জঙ্গল থেকে আগেই পাঁচটি ব্যাগ ভর্তি নথি উদ্ধার করেছেন সিবিআই আধিকারিকরা। সেই ব্যাগগুলিতে নিয়োগ দুর্নীতির একাধিক নথি বাজেয়াপ্ত করেছেন তাঁরা।সিবিআইয়ের দাবি, জীবনকৃষ্ণের নিয়োগ দুর্নীতির এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তাঁর মাধ্যমে নিয়োগ দুর্নীতির বহু টাকার লেনদেন হত বলেও অনুমান করছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তদন্তকারীরা। জিজ্ঞাসাবাদ চলাকালীন জীবনকৃষ্ণের বিরুদ্ধে বারবার তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগও আনে সিবিআই। সিবিআই সূত্রে খবর, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় শুক্রবার বিকেলের দিকে অসুস্থতার কথা বলে শৌচালয়ে যাওয়ার নাম করে গিয়ে নিজের দু’টি মোবাইল বাড়ির পিছনের পুকুরে ছুড়ে ফেলে দেন তিনি। ছোড়েন দু’টি পেনড্রাইভ এবং একটি হার্ডডিস্কও। সেগুলিরও খোঁজ চালানো হচ্ছিল। প্রায় 32 ঘণ্টা তল্লাশির পর একটি মোবাইল ফোন উদ্ধার হয়। তবে জীবনকৃষ্ণ যে গ্রেফতার হতে পারেন, তার আঁচ কিছুটা হলেও মিলেছিল শনিবার, 15 এপ্রিল সকাল থেকেই। সকাল থেকে জীবনকৃষ্ণের দুই আত্মীয়ের বাড়িতেও নতুন করে তল্লাশি চালাতে শুরু করেন সিবিআই আধিকারিকেরা। পুলিশের যে ভ্যান দু’টি শুক্রবার রাতে চলে গিয়েছিল, তার মধ্যে একটি শনিবার সকালে আবার তৃণমূল বিধায়কের বাড়ির বাইরে আনা হয়। একই সঙ্গে তৃণমূল বিধায়কের বাড়ির সামনে শনিবার সকাল থেকেই ভিড় জমাতে শুরু করেন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানরা। কেন্দ্রীয় বাহিনীর পাশাপাশি সকাল থেকে মোতায়েন করা হয়েছিল রাজ্য পুলিশকেও।