২০১৬ সালে এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যে ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট, মঙ্গলবার সেই নির্দেশে আপাতত স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। এই নিয়ে বিজেপিকে নিশানা করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। বললেন, 'গত সপ্তাহে বাংলার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে অস্থির করতে যে বিস্ফোরক ছুড়েছিল বিজেপি, তা নিষ্ক্রিয় করল মাননীয় সুপ্রিম কোর্ট।'
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের 'সংক্ষিপ্ত রায়' প্রকাশ্যে আসার পর পরই এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করেন অভিষেক। তাতে আরও লিখেছেন, 'সত্যের জয় হল। সমস্ত প্রতিকূলতাকে সরিয়ে শেষ নি:শ্বাস পর্যন্ত মানুষের কাঁধে কাঁধ রেখে চলব। জয় বাংলা।'
এসএসসি মামলার রায়ে কী নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট?
শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, এখনই চাকরি বাতিল করা হচ্ছে না। কেন স্থগিতাদেশ দেওয়া হল, সে প্রসঙ্গে আদালতের ব্যাখ্যা, যদি যোগ্য এবং অযোগ্য প্রার্থীদের আলাদা করা সম্ভব হয়. তা হলে গোটা প্যানেল বাতিল করা ঠিক হবে না। তবে এই নির্দেশ চূড়ান্ত নয়। এটা অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ। আগামী ১৬ জুলাই এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি বাতিল করে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ। ২০১৬ সালের প্যানেলে চাকরি পেয়েছিলেন তাঁরা। প্যানেলের মেয়াদ শেষের পরে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন তাঁদের বেতন দিতে হবে, এমনই নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। প্যানেলের মেয়াদ শেষের পরে যাঁরা চাকরি পেয়েছেন, তাঁদের বেতন ফেরত দিতে হবে। মেয়াদ উত্তীর্ণদের ৪ সপ্তাহের মধ্যে ১২ শতাংশ সুদ সমেত বেতন ফেরত দিতে হবে। সেই বেতন ফেরত মিলেছে কিনা তা ৬ সপ্তাহের মধ্যে দেখার নির্দেশ জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিকদের। এসএসসি নিয়োগ প্রক্রিয়ার অনেক ওএমআর শিট বা উত্তরপত্র এখনও এসএসসির ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়নি। সেগুলি দ্রুত আপলোডের নির্দেশ। একমাত্র সোমা দাস নামে এক চাকরিপ্রাপকের চাকরি থাকবে। তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত। মানবিক কারণে তাঁর চাকরি বহাল রেখেছে হাইকোর্ট। এসএসসি মামলায় তদন্ত চালিয়ে যাবে সিবিআই। যাঁকে প্রয়োজন, তাঁকে হেফাজতে নিতে পারবে তদন্তকারী সংস্থা। পুনর্মূল্যায়নের পর নতুন প্যানেল প্রকাশের নির্দেশ। এসএসসিকে টেন্ডার ডেকে নতুন করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করার নির্দেশ। এই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য।
হাইকোর্টের এই নির্দেশের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রায়গঞ্জের সভায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, 'বোমা ফাটাবেন বোমা! ২৬ হাজার শিক্ষকের চাকরি চলে যাবে, এমন বোমা! আমিও বলে রাখি, আমরাও লড়ে যাব। লড়াই করব। যাঁদের চাকরি বাতিল করা হল, চিন্তা করবেন না, হতাশ হবেন না। কেউ জীবনের ঝুঁকি নেবেন না। আমরা পাশে আছি। যত দূর দরকার, লড়াই করব। এক জনকে দেখলেন না বিজেপির হয়ে ভোটে দাঁড়িয়ে গেল। তাঁর রায় ছিল।' এরপরে মমতার সংযোজন, 'বিচারক নিয়ে বলছি না। রায় নিয়ে বলছি, অধিকার রয়েছে। রায়কে চ্যালেঞ্জ করছি।' অন্য দিকে, যোগ্য প্রার্থীদের আইনি সাহায্য দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই আবহে আপাতত হাইকোর্টের নির্দেশে স্থগিতাদেশ দিল সর্বোচ্চ আদালত।