দেশের ৪ রাজ্যে ও এক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পর তা পর্যালোচনার জন্য ইতিমধ্যেই জরুরি ভিত্তিতে একটি কমিটি গঠনের ঘোষণা করেছে কংগ্রেস (Congress)। আর তারই মাঝে বাংলার প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী (Adhir Ranjan Chowdhury) সাফ জানিয়ে দিলেন, ভবিষ্যতে আইএসএফ-এর (ISF) সঙ্গে আর কোনওরকম সম্পর্ক রাখতে চান না তাঁরা। এবার প্রশ্ন উঠছে অসমেও (Assam) কি বদরুদ্দিন আজমলের দল এআইইউডিএফ-এর সঙ্গে একই পথে হাঁটবে কংগ্রেস। কারণ উভয় ক্ষেত্রেই বিশেষ কোনও লাভ হয়নি কংগ্রেসের।
সোমবার কংগ্রেস কর্মসমিতির বৈঠকে সদ্য সমাপ্ত নির্বাচনে জোট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নেতাদের একাংশ। বাংলায় আইএসএফ-এর সঙ্গে জোট নিয়ে প্রশ্ন তুলে কংগ্রেস নেতা গুলাম নবি আজাদ বলেন, ৫ রাজ্যের ক্ষেত্রে হোক বা কেন্দ্রীয় স্তরে, এই বিষয়ে একটি স্পষ্ট নীতি হওয়া দরকার। তিনি আরও প্রশ্ন তোলেন, আইএসএফ-এর সঙ্গে জোট করে জনগণকে এবং রাজনৈতিক দিক থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কী বার্তা দিল কংগ্রেস? প্রসঙ্গত এর আগেও বংলায় আইএসএফ-এর সঙ্গে জোট নিয়ে কংগ্রেসের কিছু নেতা প্রশ্ন তুলেছিলেন। কিন্তু সেই সময় তাঁদেরকেই পালটা জবাব দিয়েছিলেন অধীর। এদিকে অসমে বদরুদ্দিন আজমলের দলের সঙ্গে জোট নিয়ে প্রশ্ন ওঠে বৈঠকে।
নির্বাচনের আগে বা মাঝেও আব্বাস সিদ্দিকী ও অধীর রঞ্জন চৌধুরীর মতপার্থক্যের ছবি বিভিন্ন সময় উঠে এসেছে। আর ফলাফল ঘোষণার পর এবার কোনওরকম রাখঢাক না করেই অধীর সরাসরি জানিয়ে দিলেন যে, ভবিষ্যতে তাঁরা আর ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্টের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক রাখতে চান না। অধীর আরও বলেন, তাঁদের দল কখনও আইএসএফ-এর সঙ্গে জোট করতে যায়নি। বামেরাই তাদের সঙ্গে ছিল। অধীদের দাবি, তিনি বামেদের এমনটা করতে নিষেধও করেছিলেন, কিন্ত বামেরা বলেন যে তারা কথা দিয়ে ফেলেছেন। প্রদেশ কংগ্রস সভাপতি জানান, সমঝোতা প্রথম থেকে বামেদের সঙ্গে ছিল,তাই সংযুক্ত মোর্চা গঠন হয়। তিনি বলেন মোর্চার ব্যর্থতা নিশ্চিত ছিল, কারণ বাংলার মানুষ এই জোটকে মেনে নেননি। প্রসঙ্গত এবারে নির্বাচনে বাংলায় বাম ও কংগ্রেস একটিও আসন জেতেনি। মোর্চার পক্ষে শুধুমাত্র নওশাদ সিদ্দিকী জয়ী হয়েছেন।
অন্যদিকে অসমে বদরুদ্দিন আজমলের দল এআইইউডিএফ এবং অন্য কয়েকটি দলের সঙ্গে মিলে নির্বাচনী লড়াইতে নামে কংগ্রেস। সেই জোটের তীব্র সমালোচনা করে বিজেপি। আর সেই জোট করে বিশেষ কোনও লাভও হয়নি কংগ্রেসের। বরং আপার অসম ও মধ্য অসমে রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিরই সম্মুখিন হতে হয়েছে। গতবারেও নিম্ন অসম থেকে আসন পেয়েছিল কংগ্রেস, এবারেও তারই পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। এক্ষেত্রে এনআরসি-সিএএ-র মতো ইস্যু এবং চা শ্রমিকদের মজুরি সংক্রান্ত সমস্যার পরেও কংগ্রেসের এই ফলাফলের পেছনে অন্যতম কারণ হিসেবে বদরুদ্দিনের সঙ্গে জোটকেই মনে করা হচ্ছে। কারণ এবারের নির্বাচনে বদরুদ্দিন আজমলের সঙ্গে জোটের প্রেক্ষিতেই কংগ্রেসের কড়া সমালোচনা করে বিজেপি। আর যার জেরে ফলাফলে দেখা যায় বেশকয়েকটি সম্প্রদায়ের একটা বিরাট অংশ ভোট গিয়েছে বিজেপির দখলে। এরপরেই কর্মসমিতর বৈঠকে এই জোট নিয়য়ে প্রশ্ন তোলা হয়।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে বাংলায় যেভাবে অধীররঞ্জন চৌধুরী আইএসএফ-এর সঙ্গে ভবিষ্যতে জোট না করার ঘোষণা করেছেন, তেমনটাই কি দেখা যাবে অসমেও। যদিও এই বিষয়ে দলের অন্তর্বর্তী সভাপতি সোনিয়া গান্ধী বলেন, দলকে এই ব্যর্থতার ওপরে গুরুত্ব দিতে হবে। আর শুধু তাই নয় এই ফলাফলের পর দলের অন্দরে যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে সেই দিকে নজর দিয়ে পর্যালোচনার জন্য জরুরি ভিত্তিতে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই কমিটি গঠনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।